যশোরের চৌগাছায় পর্যাপ্ত সরকারি সার মজুদ থাকা সত্ত্বেও ডিলারদের কারসাজিতে কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি হওয়ায় ইরি-বোরো চাষে বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ভরা মৌসুমে চাহিদামতো সার না পেয়ে চাষিরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। এতে সময়মতো সার প্রয়োগ ব্যাহত হওয়ায় ফলন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে। কৃষি বিভাগ ও ডিলারদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে সরকারি সারের নয়ছয় নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত নভেম্বরের জন্য বরাদ্দ পাওয়া ৪৮০ টন ডিএপি সারের মধ্যে প্রায় ২৫০ টন কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। বর্তমানে উপজেলার বিভিন্ন ডিলারের গুদামে প্রায় ২৩০ টন ডিএপি সার মজুদ রয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। এরই মধ্যে ডিসেম্বরের জন্য বরাদ্দ পাওয়া ইউরিয়া ৬৬২ টন, টিএসপি ২০০ টন, ডিএপি ৬৮০ টন ও এমওপি ৩৮০ টনের একটি বড় অংশ কয়েকজন ডিলার উত্তোলন করে নিয়েছেন। তাহলে বাজারে সারের সঙ্কট কেন? এটাই এখন বড় প্রশ্ন। বিপরীতে ডিলাররা বলছেন, গত কয়েক মাস ধরেই ডিএপি সার নেই বা সঙ্কট চলছে। এতে সরকারি হিসাবে মজুদ থাকা বিপুল পরিমাণ সার কোথায় গেল, তা নিয়ে সন্দেহ আরো ঘনীভূত হচ্ছে।
প্রতি কেজি ডিএপির দাম ২১ টাকা হিসেবে এক টনের মূল্য ২১ হাজার টাকা। সে হিসেবে মজুদ হিসেবে দেখানো ২৩০ টন সারের বাজারমূল্য প্রায় ৪৮ লাখ ৩০ হাজার টাকা। সরকার কৃষকদের প্রতি কেজিতে প্রায় ৮০ টাকা ভর্তুকি দিয়ে থাকে, যার মোট অঙ্ক দাঁড়ায় প্রায় এক কোটি ৮৪ লাখ টাকা। এত বড় অঙ্কের ভর্তুকিপ্রাপ্ত সার কোথায় গেল? এই প্রশ্নের কোনো স্পষ্ট জবাব পাচ্ছেন না কৃষকরা।
কৃষকদের অভিযোগ, বিসিআইসির ডিলাররা তদবির ও পছন্দের তালিকা অনুযায়ী সার সরবরাহ করছেন। ইউনিয়ন পর্যায়ে সাব-ডিলাররাও সরকারি বরাদ্দের সার পাচ্ছেন না বলে জানাচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে কৃষক সাজিয়ে সার তুলে পরে তা গুদামজাত করে বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। ফলে সরকার নির্ধারিত এক হাজার ৫০ টাকার বস্তার সার কিনতে হচ্ছে দুই হাজার টাকারও বেশি দামে।
মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, চাষিরা বীজতলা পরিচর্যা ও জমি প্রস্তুত কাজে ব্যস্ত থাকলেও চাহিদামতো সার না পেয়ে হতাশ। নারায়নপুর ইউনিয়নের কৃষক আবু তালেব বলেন, অতিরিক্ত দাম দিয়েও সার পাওয়া যাচ্ছে না। সময়মতো সার দিতে না পারলে বড় ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। একই কথা জানান পৌর এলাকার কৃষক আজিজুর রহমান আজিজ।
বিসিআইসি সার ডিলার সমিতির সভাপতি ইউনুচ আলী দফাদার দাবি করেন, প্রকৃতপক্ষে সাব-ডিলারদের কারসাজির কারণেই সঙ্কট তৈরি হচ্ছে। তারা কৃষকের নামে সার তুলে মজুদ করে পরে বেশি দামে বিক্রি করেন। তবে সিংহঝুলী ইউনিয়নের ডিলার মোফাজ্জেল হোসেন বলেন, সরকারি হিসেবে প্রয়োজনের তুলনায় কৃষকরা অতিরিক্ত সার দাবি করায় সঙ্কট বাড়ছে। কৃষক-ক্ষেত মজুর নেতা সুজন অবিলম্বে দোষী ডিলারদের লাইসেন্স বাতিল ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। তিনি বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে চৌগাছা ইরি-বোরো উৎপাদনে এগিয়ে থাকলেও এই কারসাজিতে কৃষকরা বড় ক্ষতির মুখে পড়ছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোসাব্বির হোসাইন জানান, অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে এবং প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় দুই হাজার কৃষককে বীজ ও সার দেয়া হয়েছে। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রকৌশলী তাসমিন জাহান জানান, সরকার নির্ধারিত মূল্যে সার বিক্রি নিশ্চিত করতে সবাইকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, আইন অমান্য করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। সার-বীজ মনিটরিং কমিটির জরুরি সভায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর আহমদ বলেন, উপজেলায় সারের ঘাটতি নেই। কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে প্রশাসন তৎপর রয়েছে।



