ভবন নির্মাণে বহুতল সুবিধা বাড়ছে

ড্যাপ সংশোধনে যেকোনো সময় প্রজ্ঞাপন

ঢাকাকে একটি পরিকল্পিত ও বাসযোগ্য নগরী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রণীত বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ)-এ বড় পরিবর্তন উপদেষ্টা কমিটিতে অনুমোদন করা হয়েছে। এই সপ্তাহের যেকোনো দিন এটি প্রজ্ঞাপন আকারে এটি বাস্তবায়নের জন্য জারি হতে পারে।

বিশেষ সংবাদদাতা
Printed Edition

রাজধানী ঢাকাকে একটি পরিকল্পিত ও বাসযোগ্য নগরী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রণীত বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ)-এ বড় পরিবর্তন উপদেষ্টা কমিটিতে অনুমোদন করা হয়েছে। এই সপ্তাহের যেকোনো দিন এটি প্রজ্ঞাপন আকারে এটি বাস্তবায়নের জন্য জারি হতে পারে। ২০২২ সালে গেজেট আকারে প্রকাশিত এ পরিকল্পনা সংশোধনের প্রস্তাব সম্প্রতি সরকার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। নতুন পরিকল্পনায় ভবনের উচ্চতা ও জনঘনত্ব-উভয় ক্ষেত্রেই ছাড় দেয়া হয়েছে।

নতুন কাঠামো : ২৭৫ ব্লক থেকে ৬৮ ব্লকে ঢাকা : সংশোধিত ড্যাপে রাজধানীকে আগের ২৭৫ ব্লকের পরিবর্তে ৬৮ ব্লকে ভাগ করা হয়েছে। গাজীপুর অংশ বাদ দিয়ে পরিকল্পনা এলাকার পরিধি এখন এক হাজার ৯৪ বর্গকিলোমিটার।

নতুন পরিকল্পনায় সর্বোচ্চ জনঘনত্ব ২৫০ থেকে বাড়িয়ে ৩০০ করা হয়েছে। রাজউক বলছে, এতে নগর উন্নয়ন ‘আরো সরল ও কার্যকর’ হবে।

ভবনের উচ্চতা দ্বিগুণ : ‘সংশোধিত ড্যাপ’ ও খসড়া ঢাকা মহানগর ইমারত বিধিমালা-২০২৫ অনুযায়ী বহু এলাকায় ভবনের ফ্লোর এরিয়া রেশিও (এফএআর) দ্বিগুণ করা হয়েছে।

ফলে আগে যেখানে সর্বোচ্চ পাঁচতলা ভবন নির্মাণের অনুমতি ছিল, এখন ১০ থেকে ১১ তলা পর্যন্ত ভবন নির্মাণ সম্ভব।

নতুন বিধিমালায় বলা হয়েছে- ‘কোনো প্লটে যত বেশি খোলা জায়গা রাখা হবে, ভবনের উচ্চতা তত বেশি করার ছাড় মিলবে।’

মালিক–ডেভেলপারের স্বস্তি : ড্যাপের উচ্চতা সীমা ও জনঘনত্ব নির্ধারণ নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে আবাসন খাতের অসন্তোষ ছিল। গেজেট প্রকাশের পর ভবন নির্মাণে কঠোর সীমা আরোপ করা হলে ফ্ল্যাটের দাম ও ভাড়া উভয়ই বেড়ে যায়। রিহ্যাবের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট লিয়াকত আলী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘নতুন সংশোধনে ভবনের উচ্চতার বাধা দূর হয়েছে। এতে আবাসন খাত নতুন প্রাণ ফিরে পাবে।’

অন্য দিকে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, ‘ড্যাপের সংশোধন পুরোপুরি আবাসন ব্যবসায়ীদের স্বার্থে করা হয়েছে। এতে ঢাকার জনঘনত্বের চাপ আরো বাড়বে।’

রাজউকের অবস্থান : রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ আশরাফুল ইসলাম জানান, ‘ঢাকায় পরিবেশ, বসবাসকারী ও আবাসন ব্যবসায়ী- সব পক্ষের স্বার্থ বিবেচনাতেই সংশোধন আনা হয়েছে। পাশাপাশি পাঁচ কাঠার প্লটে স্যুয়েজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (এসটিপি) বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।’

এলাকায় এলাকায় নতুন এফএআর মান : সংশোধিত ড্যাপে অনেক এলাকাতেই এফএআর উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। শেওড়াপাড়া: ২->৩ মোহাম্মপুর : ২.৭->৩.৪; পুরান ঢাকা: ২.৬-> ৩.৩; মিরপুর: ২.৮ -> ৩.৪; খিলক্ষেত: ২ -> ৪.৪; মিরপুর ডিওএইচএস: ২.৫ -> ৪.৮।

একই সাথে বারিধারা, উত্তরা, লালমাটিয়া, বসুন্ধরা, মগবাজারসহ আরো কয়েকটি এলাকায় এফএআর মান সর্বোচ্চ ১.৫ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

ইমারত বিধিমালা-২০২৫ এ নতুন সংযোজন : অকুপ্যান্সি সার্টিফিকেট একবার নিলেই আজীবনের জন্য কার্যকর থাকবে। পাঁচ কাঠার বেশি প্লটে এসটিপি স্থাপন বাধ্যতামূলক হবে। নির্মাণ অনুমোদন ফি এখন নকশা অনুমোদনের পর পরিশোধযোগ্য হবে। আবেদন নিষ্পত্তির সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে ৪৫ দিন থেকে ১৮০ দিন পর্যন্ত।

সবুজায়ন ও জনঘনত্ব : সংশোধিত ড্যাপে বলা হয়েছে- প্রতি ব্লকে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ এলাকা খেলার মাঠ, পার্ক ও উন্মুক্ত স্থানের জন্য সংরক্ষিত রাখতে হবে।

তবে নগর পরিকল্পনাবিদরা আশঙ্কা করছেন, জনঘনত্ব ৩০০ নির্ধারণের ফলে ঢাকার ওপর জনচাপ আরো বাড়বে, যা পরিবেশ ও অবকাঠামোর ওপর নতুন চাপ সৃষ্টি করবে।

নতুন ড্যাপ সংশোধনকে কেউ দেখছেন ‘উন্নয়নের গতিশীলতা’ হিসেবে, কেউ বলছেন ‘অবিবেচক ঘনত্ব বৃদ্ধি’। তবে একটি বিষয় পরিষ্কার- ঢাকার আকাশরেখা আবারো পাল্টে যাচ্ছে। আগামী দশকে রাজধানীর নগরচিত্র কতটা টেকসই বা ভারসাম্যপূর্ণ হয়, তা নির্ভর করবে এই সংশোধনের বাস্তবায়ন ও পরিবেশবান্ধব নজরদারির ওপর।