বিশেষ সংবাদদাতা
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) কোনো চাপের কাছে নতিস্বীকার না করে, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন। তিনি বলেন, কেন্দ্র দখল করে, বাক্স বাড়ি নিয়ে গেছে, আর আপনি গিয়ে হাজির হলেন, সেটা যাতে না হয়। তিনি বলেন, কোনো সঙ্কট দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে নিরসনের চেষ্টা করতে হবে। ঘটনা শেষ হয়ে যাওয়ার পর ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে হবে না। কোনো চাপের কাছে নতিস্বীকার করা যাবে না। আইন অনুযায়ী সিদ্ধান্তে অটল থাকতে হবে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (ইটিআই) ভবনে গতকাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) নির্বাচন বিষয়ক দু’দিনের প্রশিক্ষণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই নির্দেশনা দেন। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন- নির্বাচন কমিশনার আবদুর রহমানেল মাছউদ, মো: আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, তাহমিদা আহমদ ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) আবুল ফজল মো: সানাউল্লাহ। স্বাগত বক্তব্য দেন নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের উদ্দেশে সিইসি এ এম এম নাসিরউদ্দিন বলেন, আমাদের একটাই মেসেজ; কোনো প্রেসারের কাছে, কোনো চাপের কাছে নতিস্বীকার করবেন না এবং সম্পূর্ণভাবে নিজের সিদ্ধান্তে আইন অনুযায়ী সিদ্ধান্তে অটল থাকবেন। তিনি বলেন, আমরা আপনাদেরকে অন্যায় কোনো আদেশ দিবো না। অন্যায় কোনো হুকুম দিবো না। আইন অনুযায়ী আমাদের নির্দেশনা যাবে বা আপনারা সেটি সেভাবে পালন করবেন।
সিইসি বলেন, যে ধরনের কাজের দায়িত্ব পড়ুক না কেন, সেটি আপনারা আইনসম্মতভাবে, নিউট্রলি, প্রফেশনালি কাজ করবেন। আমরা নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি। আমরা আমাদের দেশের যে এই দুরবস্থার একটা মূল কারণ হলো- আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নই। যে জাতি আইনের প্রতি যতটা শ্রদ্ধাশীল যত বেশি সেই জাতি তত সভ্য বলে আমরা মনে করি। ভোটে আইন-বিধি প্রতিপালন, নিজেরা অনুসরণের তাগিদ দেন সিইসি।
ইউএনওদের সিইসি বলেন, উপজেলা পর্যায়ে সমন্বয়টা আপনারাই করে থাকেন। নির্বাচনের সময়ও এ সমন্বয়টা খুবই জরুরি। কোনো সমস্যা হলে শুরুতেই যেন নিয়ন্ত্রণ করা সে চেষ্টা আপনারা নেবেন। সবকিছু শেষ হওয়ার পরে তখন দেখবেন যে আর কেউ নাই, সবাই মারামারি করে ভোটের কেন্দ্র দখল করে, বাক্স দখল করে বাড়ি চলে গেছে। আর আপনি গিয়ে হাজির হলেন সেটা যাতে না হয়। এটি আপনাদেরকে এনসিওর করতে হবে।
নির্বাচন কমিশনার (ইসি) আবদুর রহমানেল মাছউদ বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে ভালো নির্বাচন করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। কারণ দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। সব প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে হলেও নির্বাচন কমিশনকে একটি ভালো ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে হবে।
ইসি মাছউদ বলেন, নির্বাচনের ব্যাপারে দেশের মানুষের মধ্যে একটা ‘কিন্তু’ তৈরি হয়ে গেছে। অভিযোগ আছে, ভোটটা রাতেই হয়ে গেছে। এই নির্বাচন যদি আমরা সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য এবং ভালো করতে না পারি, তাহলে বিশ্বের কাছে আমরা জাতি হিসেবে লজ্জিত হবো। আমরা নিন্দনীয় অবস্থায় চলে যাবো। তিনি বলেন, আমাদের ভালো নির্বাচন করা ছাড়া অন্য কোনো উপায় নাই। এ সময় উপস্থিত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
মো: আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে মোটিভেট করতে হবে, ভোটারদের কাছে যেতে হবে। সুশৃঙ্খল পরিবেশ ভালো নির্বাচনের জন্য অপরিহার্য। তিনি বলেন, মোবাইল কোর্ট আয়নার মতো স্বচ্ছ হতে হবে। পক্ষপাতিত্ব করা যাবে না। এখন থেকে মোবাইল কোর্ট রেগুলার করতে হবে। তিনি বলেন, এই নির্বাচনে যারা ভালো দায়িত্ব পালন করবে তাদের জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা করা হবে।
তাহমিদা আহমদ বলেন, আমরা সাহসী হবো, তবে অতি সাহসী না। অতীতে অতি উৎসাহী হয়ে অনেকে অনৈক কিছু করেছেন। এবার এসব করা যাবে না। তিনি বলেন, আগের প্রশিক্ষণ ভুলে যেতে হবে। এখন যেই প্রশিক্ষণ দেয়া হবে সেটি নিতে হলে। তিনি বলেন, আগের নির্বাচন আমরা সবাই মিলে নষ্ট করেছি।
আবুল ফজল মো: সানাউল্লাহ বলেন, আমাদের প্যারালাল কিছু কাজ করছে ঐক্যমত কমিশন। আরপিও সংশোধনের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো আছে। সেটা দ্রুত অনুমোদন হয়ে ফিরে আসবে। তিনি বলেন, প্রবাসীদের জন্য ভোটিং এ্যাপস আগামী ১৬ নভেম্বর উদ্বোধন করা হবে। তাদের ব্যালেট ভিন্ন হবে। সেখানে ১১৫টি প্রতীক ও হ্যাঁ-না ভোটের অপশন থাকবে। তারা তার সংসদীয় আসনে চূড়ান্ত প্রাথী তালিকা ওই অ্যাপসের মাধ্যমে দেখতে পাবেন। তিনি বলেন, যারা নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত থাকবেন এবং যারা আসামিসহ কারাগারে আছেন, তাদের জন্য আইসিপিভি নামে একটি অ্যাপস করা হবে। ওটার মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করে তারাও ভোট দিতে পারবেন।



