বাংলাদেশ ব্যাংকের ডলার কেনা নিয়ে আপত্তি

ব্যাংকগুলোর সাথে লেনদেন বন্ধ করতে বলেছে আইএমএফ

রেমিট্যান্স ও রফতানি আয় ঠিক রাখতে এবং বৈদেশিক মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল রাখার স্বার্থে বাজার থেকে উদ্বৃত্ত ডলার কেনা হচ্ছে। এতে সরাসরি আপত্তি জানিয়েছে আইএমএফ। সংস্থাটি বলছে, ব্যাংকগুলোর সাথে লেনদেন বাজার হস্তক্ষেপ করার শামিল। এমনি পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলোর সাথে সব ধরনের লেনদেন বন্ধ করতে বলেছে সংস্থাটি।

বিশেষ সংবাদদাতা
Printed Edition

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ পাওয়ার শর্ত পরিপালনের জন্য ডলারের মূল্য বাজারের ওপর ছেড়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু রেমিট্যান্স ও রফতানি আয় ঠিক রাখতে এবং বৈদেশিক মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল রাখার স্বার্থে বাজার থেকে উদ্বৃত্ত ডলার কেনা হচ্ছে। এতে সরাসরি আপত্তি জানিয়েছে আইএমএফ। সংস্থাটি বলছে, ব্যাংকগুলোর সাথে লেনদেন বাজার হস্তক্ষেপ করার শামিল। এমনি পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলোর সাথে সব ধরনের লেনদেন বন্ধ করতে বলেছে সংস্থাটি।

গত সপ্তাহের শেষ দিকে সফররত আইএমএফ পঞ্চম রিভিউ মিশনের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে একাধিক বৈঠকে এসব বিষয় উত্থাপন করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, সংস্থাটি রেগুলার ভিজিট করছে। মিশনটি তাদের ঋণের শর্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতি নিয়ে জানতে তথ্য নিচ্ছে। বিশেষ করে ডলারের মূল্য বাজারভিত্তিক করা, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে গৃহীত পদক্ষেপ, সুদের হার, তারল্য সহায়তা, রিজার্ভের ব্যবহার, খেলাপি ঋণ কমাতে পদক্ষেপের বিষয়ে জোর দিয়েছে।

বাজার থেকে ডলার কেনার বিষয়ে আইএমএফের ভিন্ন মতের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, ডলারের দাম নির্ধারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনো হস্তক্ষেপ করছে না। এখন বাজারে কোনো ডলার বিক্রি করছে না। বাজার থেকে আইএমএফের প্রচলিত পদ্ধতি মেনেই ডলার কিনছে। এর মাধ্যমে রিজার্ভ বাড়াচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সঙ্কট ও ডলার চাহিদা বেড়ে গেলে বাজার স্থিতিশীল রাখার স্বার্থে বাংলাদেশ ব্যাংক তার রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করে ব্যাংকগুলোর কাছে। এতে ডলারের মূল্য স্থিতিশীল থাকে। অপর দিকে, রফতানি আয় বেড়ে গেলে ও রেমিট্যান্স প্রবাহের মাধ্যমে বাড়তি রেমিট্যান্স আসলে ডলারের সরবরাহ বেড়ে যায়। সেক্ষেত্রে আমদানি না বাড়লে বাজারে ডলার উদ্বৃত্ত থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী নিজেদের কাছে ডলার ধরে রাখার নির্ধারিত কোটার বেশি থাকলে হয় ব্যাংকগুলোকে বাড়তি ডলার বাজারে বিক্রি করতে হবে। না হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বিক্রি করতে হবে। আইএমএফ এটাকে বাজার হস্তক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করছে। ঋণ পাওয়ার স্বার্থ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দিয়েছিল। মনে করা হচ্ছিল ডলারের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাবে। কিন্তু ডলারের মূল্য বাড়েনি। বরং কমতে শুরু করেছে। কারণ, রফতানি আয় বেড়ে গেছে। সেই সাথে বেড়েছে রেমিট্যান্স প্রবাহ। কিন্তু আমদানি বাড়ছে না। বিশেষ করে শিল্পের মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি বাড়ছে না। এতে ব্যাংকগুলোর হাতে বাড়তি ডলার থেকে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বাজার থেকে ডলার না কিনলে ডলারের মূল্য আরো কমে যাবে। এতে আমদানি ব্যয় কমবে। তবে, রেমিট্যান্স প্রবাহ ও রফতানি আয় কমে যেতে পারে। এতে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের রেখে যাওয়া বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক দেনার কিস্তি পরিশোধে বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে। এ কারণেই ডলারের দাম ধরে রাখতে বাজার থেকে উদ্বৃত্ত ডলার কিনছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে বৈঠকে অসন্তোষ প্রকাশ করে সরাসরি আপত্তি জানিয়েছে আইএমএফ। সংস্থাটির মতে, এটি মুক্ত বাজারভিত্তিক বিনিময় হার নির্ধারণের নীতির পরিপন্থী এবং পূর্বনির্ধারিত সংস্কার শর্ত লঙ্ঘন করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা বাজার থেকে সীমিত পরিসরে ডলার কিনছি মূলত রিজার্ভে স্বস্তি ফেরাতে। তবে এটি কোনো নীতিগত পরিবর্তন নয়, বরং সাময়িক পদক্ষেপ। তিনি আরো জানান, অক্টোবর শেষে বৈদেশিক মুদ্রার প্রকৃত রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে সাড়ে ২৭ বিলিয়ন ডলারে। বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার না কিনলে রিজার্ভ এ পর্যায়ে আসত না। প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের শুরুতে বাংলাদেশ আইএমএফ থেকে ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ অনুমোদন পায়।

সফররত আইএমএফের মিশন আজ রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক বিভাগের সাথে বৈঠক করবে। বৈঠক চলবে টানা ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত।