ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রশিক্ষণ নিতে ব্যারাকে ফিরেছেন মাঠ পর্যায়ে থাকা প্রায় অর্ধেক সেনাবাহিনীর সদস্য। ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ারে থাকার কারণে তারা দীর্ঘ ১৫ মাস ব্যারাকের বাইরে ছিলেন সার্বিক নিরাপত্তার জন্য। সম্প্রতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাদের ব্যারাকে ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে বলে একাধিক সেনা কর্মকর্তা নয়া দিগন্তকে নিশ্চিত করেছেন। সেনা কর্মকর্তারা বলেন, এত দিন দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য সেনাবাহিনীকে মাঠে থাকতে হয়েছে। এরই মধ্যে দেশে নির্বাচনী হাওয়া বইছে। শিগগিরই তফসিল ঘোষণা হবে। সেনাবাহিনীর যেসব সদস্যরা দেশের নিরাপত্তা রক্ষায় মাঠে ছিলেন, তাদের অর্ধেক সদস্যকে ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সবাইকে ব্যারাকে ফেরানোই মূল উদ্দেশ্যে ও লক্ষ্য সেনাবাহিনীর।
সেনাবাহিনী সূত্র জানায়, গত ১৫ মাস যেসব সদস্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে রাজধানীসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে দায়িত্ব পালন করে আসছেন তারা দেশের জনগণের নিরাপত্তা এবং অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঠেকাতে কাজ করেছেন। কিন্তু সামনে নির্বাচনের মাঠে অন্তত এক লাখ সেনাসদস্য নির্বাচনের সময় দায়িত্ব পালনের পরিকল্পনা রয়েছে। এ জন্য সবাইকেই নির্বাচনী প্রশিক্ষণ দেয়া প্রয়োজন। আপাতত অর্ধেকের মতো সেনাসদস্যকে ব্যারাকে ফেরানো হয়েছে। তাদের প্রশিক্ষণের পর বাকিদেরও ফিরিয়ে নেয়া হবে। তবে যারা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন তাদের ফের মাঠে ফেরানো হবে। পর্যায়েক্রমে সাবাইকে প্রশিক্ষণ নিতে হবে।
গত বুধবার ঢাকা সেনানিবাসের মেস আলফায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সেনা সদর দফতরের আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ডের (জিওসি আর্টডক) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো: মাইনুর রহমান বলেছেন, দেশের জনগণের মতো বাংলাদেশ সেনাবাহিনীও একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর নির্বাচন প্রত্যাশা করছে। নির্বাচনের পর দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সেনাবাহিনী ব্যারাকে ফিরে যাবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাইনুর বলেন, আমরা আশা করি নির্বাচন দেশের স্থিতিশীলতা আনবে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাব, এবং নির্বাচনের পর সেনাবাহিনী ব্যারাকে ফিরে যাবে।
তিনি আরো বলেন, আমরা গত ১৫ মাস ধরে ব্যারাকের বাইরে আছি। নির্বাচনের পরও যদি মাঠে থাকতে হয়, তাহলে তা আমাদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটাবে। সেনাবাহিনী সরকারের ঘোষিত নির্বাচন রোডম্যাপ অনুযায়ী নির্বাচনসংক্রান্ত প্রস্তুতি নিচ্ছে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির প্রসঙ্গে মো: মাইনুর রহমান বলেন, গত বছরের ৫ আগস্টের আগে ১৫ বছর যে আবেগের প্রকাশ ঘটানো যায়নি, যে অনুভূতিগুলো বলা যায়নি, তার একটা বহিঃপ্রকাশ তো আছেই। রাষ্ট্রযন্ত্রের অনেক মেশনারিই তখন কিছুটা হলেও অকার্যকর হয়ে পড়েছিল। এটাই বাস্তবতা। গত ১৫ মাসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ এমন কোনো কাজ নেই যেটা সিভিল প্রশাসনের সহযোগিতার জন্যে করতে হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা না থাকলে যে কী হতো সেটা ধারণাও করতে পারবেন না।
গতকাল একাধিক সেনা সদস্য নয়া দিগন্তকে বলেন, সেনাবাহিনী সব সময় মাঠে থাকবে না। পুলিশ এবং র্যাবের সক্ষমতা অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে। ধীরে ধীরে পুলিশ-র্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সক্ষমতা আরো বৃদ্ধি পাবে। মূলত সেনাবাহিনীর সদস্যরা বাইরে থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। আগামী নির্বাচনটাও সেনাবাহিনীর জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তাই সেনাবাহিনীর যে সক্ষমতা আছে তার সবটুকুই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্যই অপেক্ষায় আছে সেনাবাহিনী। সুন্দর একটি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সেনাবাহিনী ব্যারাকে ফিরতে চায়।



