অশ্লীল ভিডিও ভাইরাল : দ্রুত ব্যবস্থার দাবি বিবি কর্তাদের

বিএফআইইউ প্রধানের বিষয়ে তদন্ত শুরু

Printed Edition

বিশেষ সংবাদদাতা

আপত্তিকর ভিডিও ও আওয়ামী লীগ নেতা এনা পরিবহনের মালিক খন্দকার এনায়েত উল্লাহর ফ্রিজ করা অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা উত্তোলনের সুযোগ করে দেয়ার অভিযোগে বাংলাদেশের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ) প্রধানের এএফএম শাহীনুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিশেষ তদন্ত শুরু করেছে অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ নীতিনির্ধারকরা। দেশের গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠানের এমন নৈতিক স্খলনের ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় বিস্মিত হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা। তারা বিএফআইইউ প্রধানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে গভর্নরকে স্মারকলিপি দিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের তোপের মুখে পড়তে পারেন এমন আশঙ্কায় বিএফআইইউ প্রধান গতকাল অফিস করেননি।

শাহীনুল ইসলামের বিরুদ্ধে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়ে গভর্নরের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। গতকাল মঙ্গলবার সচেতন ও দেশপ্রেমী কর্মকর্তা-কর্মচারীর পক্ষে স্মারকলিপি জমা দেন অতিরিক্ত পরিচালক মো: নজরুল ইসলাম। স্মারকলিপিতে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শাহীনুল ইসলামের একাধিক আপত্তিকর ভিডিও প্রকাশিত হওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকসহ জাতীয় আর্থিক খাতের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুণœ হয়েছে। এ ছাড়া বিতর্কিত পরিবহন ব্যবসায়ী খন্দকার এনায়েত উল্লাহর ফ্রিজ করা ব্যাংক হিসাব থেকে অবৈধভাবে ১৯ কোটি টাকা উত্তোলনের সুযোগ দেয়ার অভিযোগও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নজরে এসেছে।

কর্মকর্তারা অভিযোগ করেন, গভর্নরের নেতৃত্বে গঠিত সার্চ কমিটির সুপারিশে বিএফআইইউ প্রধান হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার তালিকায় নাম ছিল না শাহীনুল ইসলামের। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ বছরে তার পক্ষে পলাতক মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর হিসেবে তাকে নিয়োগ দেয়ার জন্য তদবির করেছিলেন। কিন্তু ওইসময় তাকে নিয়োগ দেয়া হয়নি। গত বছর ৫ আগস্ট পতিত প্রধানমন্ত্রী দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর বিএফআইইউকে গতিশীল করার জন্য ঢেলে সাজানো হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক এ কে এম এহসানের নেতৃত্বে বিএফআইইউ আবারো গতি ফিরে পায়। এস আলম, সালমান এফ রহমান, হাসিনা, রেহেনাসহ শেখ পরিবার এমন ১১টি ব্যবসায়ী গ্রুপ ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে অগ্রাধিকারভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়। এমনই অবস্থায় বিএফআইইউ প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেয়ার জন্য যে পরীক্ষা নেয়া হয়েছিল এতেও শাহীনুর ইসলাম ১০ জনের মধ্যে সবার শেষে ছিলেন। প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেয়ার জন্য গভর্নর যে তিন জনের নাম দিয়েছিলেন তার মধ্যে শাহীনুলের নাম ছিল না। কিন্তু বিশেষ তদবিরে তিনি নিয়োগ পেয়ে যান বিএফআইইউ প্রধানের মতো পদে। এ নিয়ে ওই সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বস্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যেও ক্ষোভ ছিল। অভিয

জানা গেছে, সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী বাস থেকে দৈনিক ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা চাঁদা তুলতেন এমন অভিযোগ তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের আবেদনে গত ২৭ মে ১২০ কোটি টাকা ফ্রিজ করার আদেশ দেন মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত। অথচ দুদক এখন জানতে পেরেছে এসব হিসাবে আছে ১০১ কোটি টাকা। অনৈতিক সুবিধার বিনিময়ে বাকি ১৯ কোটি টাকা তুলে দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে একটি গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত করছে।

এরই মধ্যে গত বৃহস্পতিবার থেকে বিভিন্ন ব্যক্তির হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জারে তার আপত্তিকর ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। এরপর গত সোমবার বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পরই বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন জায়গায় সমালোচনার ঝড় উঠে। এসব ভিডিও সঠিক কি না যাচাইয়ের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগকে বলা হয়েছে।

ভিডিও ফাঁসের ঘটনাটি এমন এক সময় সামনে এলো যখন খন্দকার এনায়েত উল্লাহর ফ্রিজ করা ব্যাংক হিসাব থেকে ১৯ কোটি টাকা উত্তোলনের অনুমোদন দিয়ে ব্যাপক সমালোচনায় পড়েছেন শাহীনুল ইসলাম। গত বছরের নভেম্বরে এনায়েত উল্লাহ ও তার পরিবারের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ৫০টি ব্যাংক হিসাবে প্রায় ১২০ কোটি টাকা ফ্রিজ করে বিএফআইইউ। তবে চলতি বছরের এপ্রিলে ব্যাংক আল-ফালাহর চারটি হিসাব পুনরায় ফ্রিজ না করে ১৯ কোটি টাকা উত্তোলনের সুযোগ দেয়া হয়। সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এ তথ্য জানতে পারে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারাও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন। একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিএফআইইউর মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের প্রধানের বিরুদ্ধে এমন অনৈতিক ভিডিও কোনোভাবেই মেনে নেয়া যাচ্ছে না। এমন একজন ব্যক্তিকে কিভাবে বিএফআইইউ প্রধান হিসেবে বসানো হলো তাই নিয়ে ভাবা উচিত। গতকাল এ বিষয়ে তারা গভর্নরের কাছে স্মারকলিপি দিয়ে দু’টি দাবি উত্থাপন করেছেন। প্রথমত, শাহীনুল ইসলামকে অবিলম্বে বাধ্যতামূলক ছুটি দেয়া ও দ্রুত তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া। দ্বিতীয়ত, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পূর্বে রাজনৈতিক ও দলীয় বিবেচনায় বাংলাদেশ ব্যাংকে নিয়োগপ্রাপ্তদের বিষয়ে এর আগে গৃহীত সিদ্ধান্ত জরুরি ভিত্তিতে বাস্তবায়ন।

স্মারকলিপিতে আরো বলা হয়, জাতীয় আর্থিক খাতের সুশাসন ও জনগণের আস্থা রক্ষার্থে উপর্যুক্ত দাবিগুলো দ্রুত বিবেচনা করা জরুরি।