এলডিসি উত্তরণে চাপে পড়বে পোশাক ও ওষুধ শিল্প খাত

এলডিসি উত্তরণের পর তৈরী পোশাক খাত শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত সুবিধা হারাবে, ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা আরো কঠিন হয়ে পড়বে। একই সাথে ওষুধ শিল্পকে বহুজাতিক কোম্পানির প্যাটেন্ট আইন মেনে চলতে হবে, যা উৎপাদন খরচ এবং ওষুধের দাম বাড়িয়ে দেবে।

হামিম উল কবির
শাহ আলম নূর
Printed Edition

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তৈরী পোশাক এবং ওষুধ শিল্প অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। দেশের রফতানির প্রায় ৮৫ শতাংশ আসে তৈরী পোশাক খাত থেকে, যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান উৎস। অন্যদিকে, ওষুধ শিল্প দেশের মানুষের সাশ্রয়ী ও নিরাপদ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। তবে ২০২৬ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসঙ্ঘের স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণ ঘটালে এ দুই খাতের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ দেখা দেবে। এলডিসি উত্তরণের পর তৈরী পোশাক খাত শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত সুবিধা হারাবে, ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা আরো কঠিন হয়ে পড়বে। এতে রফতানি আয় কমতে পারে এবং এ খাতে কর্মরত প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিকের কর্মসংস্থান ঝুঁকির মুখে পড়বে। একই সাথে ওষুধ শিল্পকে বহুজাতিক কোম্পানির প্যাটেন্ট আইন মেনে চলতে হবে, যা উৎপাদন খরচ এবং ওষুধের দাম বাড়িয়ে দেবে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ ক্রয় করা কঠিন হয়ে উঠতে পারে।

পোশাক খাত : বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণশক্তি তৈরী পোশাক খাত। দেশের মোট রফতানির প্রায় ৮৫ শতাংশ আসে এ খাত থেকে। বর্তমানে এ শিল্প শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত সুবিধা ভোগ করছে, কারণ বাংলাদেশ এখনো জাতিসঙ্ঘের স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) হিসেবে তালিকাভুক্ত। কিন্তু ২০২৬ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে এলডিসি তালিকা থেকে উত্তরণ ঘটাবে। অবশ্য সরকার চেষ্টা করছে এই উত্তরণ অন্তত তিন বছর পিছিয়ে দিতে। যদি পিছানো সম্ভব না হয়, তবে সবচেয়ে বড় ধাক্কা আসবে তৈরী পোশাক শিল্পে এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এই পরিস্থিতিতে কর্মসংস্থানের ঝুঁকিতে পড়বে এ খাতে নিয়োজিত ৪০ লাখ শ্রমিক।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এলডিসি তালিকায় থাকার সুবাদে বাংলাদেশ ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জাপানসহ উন্নত দেশগুলোর বাজারে শুল্ক ছাড়াই পণ্য রফতানি করতে পারছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারেই বাংলাদেশের রফতানির প্রায় অর্ধেক যায়। এলডিসি থেকে উত্তরণের পর এ সুবিধা শেষ হয়ে যাবে। ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য ও অন্যান্য বাজারে বাংলাদেশী পোশাকের ওপর গড়ে ১২ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ হতে পারে। এই শুল্ক আরোপের মানে হচ্ছে, প্রতিযোগী দেশ যেমন ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া বা ইন্দোনেশিয়ার সাথে সমান তালে লড়াই করতে বাংলাদেশের খরচ বাড়বে। বর্তমানে তুলনামূলক কম দামে বাংলাদেশী পোশাক ক্রেতাদের কাছে জনপ্রিয়। কিন্তু শুল্ক যোগ হলে বাংলাদেশী পোশাকের দাম ১০ থেকে ১২ শতাংশ বেড়ে যাবে। এ অবস্থায় ক্রেতারা অন্য উৎসের দিকে ঝুঁকবে বলে আশঙ্কার কথা জানানো হয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পূর্বাভাস অনুযায়ী, উত্তরণের পর রফতানি আয়ে ৬ থেকে ১৪ শতাংশ পর্যন্ত ধস নামতে পারে। শুধুমাত্র পোশাক খাতেই এই ধাক্কা সর্বাধিক হবে। বর্তমানে বছরে প্রায় ৫৫ বিলিয়ন ডলার রফতানি আয় হয়, এর মধ্যে তৈরী পোশাক খাতের অংশ ৪৭ বিলিয়ন ডলার। যদি ১০ শতাংশ রফতানি আয়ও কমে যায়, তবে প্রায় পাঁচ বিলিয়ন ডলার হারাবে বাংলাদেশ। এটি শুধু পোশাক রফতানিকারকদের লাভের ওপর আঘাত করবে না; বরং বৈদেশিক মুদ্রা আয়ে ঘাটতি তৈরি করবে, যা ডলার সঙ্কটকে আরো তীব্র করবে। এ সঙ্কট মুদ্রাস্ফীতি বাড়াবে, আমদানি ব্যয় বাড়াবে এবং সামগ্রিক অর্থনীতিতে চাপ তৈরি করবে।

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদুল হাসান খান নয়া দিগন্তকে বলেন, বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিরা এলডিসি থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের সময়সীমা আরো তিন বছর বাড়ানো দরকার বলে মনে করেন। তিনি জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের ওপরও গুরুত্ব দেন। তিনি বলেন, শুল্ক ছাড় পাওয়ার সাথে সাথে এলডিসি দেশগুলো কাঁচামালের উৎসবিধিতেও বিশেষ সুবিধা ভোগ করে। বর্তমানে বাংলাদেশ পোশাক রফতানির ক্ষেত্রে কাঁচামালের উৎস (রুল অব অরজিন) সংক্রান্ত অনেক শর্তে ছাড় পায়। কিন্তু উত্তরণের পর এসব বিধিনিষেধ কঠোর হয়ে যাবে। উদাহরণস্বরূপ, ইউরোপীয় ইউনিয়নে পোশাক রফতানি করতে হলে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কাপড় ব্যবহার বাধ্যতামূলক হবে। কিন্তু বাংলাদেশ এখনো প্রায় ৭৫ শতাংশ কাপড় আমদানির ওপর নির্ভরশীল, বিশেষত চীন ও ভারত থেকে। ফলে নতুন শর্ত মানা কঠিন হয়ে পড়বে।

বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক কাজ করছে, যার মধ্যে ৬০ শতাংশের বেশি নারী। যদি রফতানি কমে যায়, কারখানাগুলো অর্ডার হারাবে। এতে অনেক কারখানা বন্ধ হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হবে। প্রাথমিকভাবে হয়তো উৎপাদনশীলতা ও বেতন কমিয়ে টিকে থাকার চেষ্টা হবে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে ব্যাপক ছাঁটাই ঘটতে পারে। এমন পরিস্থিতি শুধু শ্রমিকদের জীবনমানকেই আঘাত করবে না, বরং নারী কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। পোশাক শিল্প বাংলাদেশের নারীর আর্থসামাজিক ক্ষমতায়নের অন্যতম প্রধান মাধ্যম।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম নয়া দিগন্তকে বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণের পর প্রতিযোগিতার মাঠ আরো কঠিন হয়ে উঠবে। ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়া ইতোমধ্যেই বিভিন্ন মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) স্বাক্ষর করেছে, যার মাধ্যমে তারা ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্ত বা কম শুল্ক সুবিধা পাচ্ছে। বাংলাদেশের সে ধরনের চুক্তি এখনো কার্যকর হয়নি। ফলে একদিকে বাংলাদেশকে বাড়তি শুল্ক দিতে হবে, অন্যদিকে প্রতিযোগী দেশগুলো সেই বাজারে শুল্ক ছাড়ে প্রবেশ করবে। এতে বাংলাদেশী পোশাকের অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়বে।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন এলডিসি উত্তরণের আগে দ্রুত সময়ের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সাথে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) স্বাক্ষরে জোর দিতে হবে। একই সাথে উৎপাদন খরচ কমাতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার, জ্বালানি দক্ষতা বৃদ্ধি এবং শ্রম উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর মাধ্যমে খরচ কমানো জরুরি। শুধু ইউরোপ ও আমেরিকার ওপর নির্ভর না করে মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার বাজারে প্রবেশ করতে হবে। টেক্সটাইল খাতে বিনিয়োগ বাড়িয়ে স্থানীয়ভাবে কাপড় উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে হবে, যাতে কঠোর উৎসবিধি মানা সহজ হয়। বাংলাদেশী পোশাককে শুধু সস্তা শ্রমনির্ভর শিল্প না বানিয়ে টেকসই, মানসম্পন্ন ও ব্র্যান্ডভিত্তিক করতে হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এলডিসি থেকে উত্তরণ দেশের জন্য গর্বের বিষয় হলেও এর সাথে সাথে চ্যালেঞ্জও বাড়ছে। যদি উত্তরণ পেছানো না যায়, তবে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প সবচেয়ে বড় ধাক্কার মুখোমুখি হবে। রফতানি আয় কমবে, কর্মসংস্থানে সঙ্কট তৈরি হবে এবং বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি বাড়বে। তারা বলছেন, এ ধাক্কা মোকাবেলা করা অসম্ভব নয়। এখনই পরিকল্পিত নীতি, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বাণিজ্য চুক্তি, প্রযুক্তি ও অবকাঠামো উন্নয়ন এবং শ্রমিকদের দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রস্তুতি নিতে হবে। অন্যথায়, দেশের অর্থনীতির প্রধান স্তম্ভ পোশাক শিল্প গভীর সঙ্কটে পড়বে যার প্রভাব গোটা অর্থনীতিতেই ছড়িয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।

ওষুধ শিল্প : এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ওষুধ সমিতির মহাসচিব ড. মুহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বেরিয়ে এলে (গ্র্যাজুয়েশন) আমাদের ওষুধ শিল্পকে চরম সঙ্কট মোকাবেলা করতে হবে, বেড়ে যেতে পারে ওষুধের দাম। যা বাংলাদেশের দরিদ্র মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যেতে পারে। এলডিসি উত্তরণের আগে আমাদের সক্ষমতা অর্জন করতে হবে সেই সক্ষমতা বাংলাদেশের এখনো গড়ে ওঠেনি। এর আগেই যদি এলডিসি উত্তরণ হয়ে যায় তাহলে বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। এটা হয়ে গেলে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো সরাসরি আমাদের বাধা হয়ে দাঁড়াবে। তাদের প্যাটেন্ট রাইটের ওষুধগুলো আমরা আর অবাধে উৎপাদন করতে পারব না। তারা এসে রয়্যালটি দাবি করবে। তখন কোম্পানির অস্তিত্বের স্বার্থেই আমাদের বাধ্য হয়ে রয়্যালটি দিয়ে ওষুধগুলো উৎপাদন করতে হবে। ফলে দাম বেড়ে যাবে ওই ওষুধের। তা ছাড়া এলডিসিভুক্ত দেশ হওয়ার কারণে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান থেকে স্বল্প সুদে ঋণ পাচ্ছে তখন আর সেটা পাবে না। ঋণের সুদ বেড়ে গেলে আমাদেরকে বেশি সুদে ঋণ নিতে হবে। এর ফলেও ওষুধের দাম বেড়ে যাবে। দাম বেড়ে গেলে সেটা শেষত: বাংলাদেশের দরিদ্র মানুষের ওপর বোঝা আরো বাড়বে, তাদেরকেই বর্ধিত দামে কিনতে হবে ওষুধ। ড. মুহাম্মদ জাকির হোসেন এ ব্যাপারে আরো বলেন, আরো বড় সমস্যা হবে ওষুধের কাঁচামাল এপিআই নিয়ে। আমরা চীন ও ভারত থেকে এপিআই আনি। এলডিসি উত্তরণের কারণে তখন বাইরে থেকে এপিআই আনতে পারব না। তখন মেধাস্বত্ব আইনের মধ্যে পড়ে যাওয়ায় আমরা এপিআই পাব না।

তিনি বলেন, এলডিসি উত্তরণ হলে বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প যে সঙ্কটে পড়বে সেটা মোকাবেলায় সরকারকে এগিয়ে না এলে শিল্পের অস্তিত্ব সঙ্কট দেখা দেবে। সমস্যাগুলোর অন্যতম হলো বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদসংক্রান্ত সমস্যা। এ কারণে আরোপিত হতে পারে কয়েক প্রকার বিধিনিষেধ। এখনো এলডিসি ভুক্ত বলে বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) বুদ্ধিবৃত্তিক চুক্তির (ট্রিপস) আওতায় ওষুধের পেটেন্ট আইন থেকে অব্যাহতি পাচ্ছে। এর সুবিধায় দেশীয় কোম্পানিগুলো পেটেন্টের অধীন ওষুধও উৎপাদন করতে পারে। এলডিসি উত্তরণের পর এই ছাড় আর পাওয়া যাবে না। এতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ওষুধের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

ড. মুহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, প্যাটেন্ট সুবিধা বন্ধ হয়ে গেলে বাংলাদেশে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে এটা নিশ্চিত এবং একই সাথে বাড়বে আমদানি ব্যয়। প্যাটেন্ট রযেছে এমন ওষুধ আমরা নিজেরা উৎপাদন করতে না পারলে জীবন রক্ষাকারী ওই ওষুধগুলো আমদানি করতে হবে। এমনকি বহুজাতিক কোম্পানিগুলো এ পদশে এজেন্টের মাধ্যমে বেশি দামে তাদের ওষুধ বাজারজাত করতে পারে। এ ছাড়া বাংলাদেশের বড় বড় কোম্পানিগুলো পেটেন্টেড ওষুধ উৎপাদন করে বিদেশে রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আনছে, তখন ওই সুবিধাটাও থাকবে না, ফলে বাংলাদেশের ওষুধ রফতানি আয়ও কমে যেতে পারে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের বেশ কয়েকটা ওষুধ কোম্পানি ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়ার কঠোর নিয়ম মেনে চলে এমন দেশের অনুমোদন পেয়েছে। এটি আমাদের জন্য বিশাল সুযোগ যে এই কোম্পানিগুলো ইউরোপ-আমেরিকায় বাংলাদেশের ওষুধ রফতানি করে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারবে। ঠিক এই সময়ে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন হয়ে গেলে এই সুযোগটাও হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। ওষুধ শিল্পের আসন্ন সঙ্কট মোকাবেলায় সরকারকে এই ব্যাপারটি নিয়ে সিরিয়াস হতে হবে। ভালো হয়, যদি এলডিসি উত্তরণ আরো কয়েক বছর পিছিয়ে দিতে পারে।

এ ছাড়া এলডিসি হিসেবে বাংলাদেশ ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশের বাজারে ওষুধের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার (জিএসপি) পাচ্ছে। কিন্তু এলডিসি উত্তরণের পর এই জিএসপি সুবিধাও সীমিত হয়ে পড়তে পারে।

এলডিসি উত্তরণ হওয়ার পর যেসব দেশ থেকে বাংলাদেশ এপিআই আমদানি করে সেই চীন ও ভারতের সাথে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা করতে হবে। এলডিসিভুক্ত সুবিধা থাকার কারণে বাংলাদেশকে এখন এপিআই রফতানিকারক উল্লিখিত দুই দেশের সাথে প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে না। এটি করতে হলে তা হবে খুবই কঠিন। কারণ চীন ও ভারত নিজেরা ওষুধের কাঁচামাল তৈরি করে থাকে। বাংলাদেশকে ওষুধের কাঁচামাল আনতে হবে এই দুই দেশ থেকেই। এই দুই দেশ নিজেদের বাণিজ্য বাড়ানোর জন্য কাঁচামালের দাম বাড়িয়ে বাংলাদেশকে অসম প্রতিযোগিতা ঠেলে দিতে পারে।