গোলাম মোস্তফা : জাতি-জাগরণের কবি

Printed Edition
কবি গোলাম মোস্তফা। জন্ম : ১৮৯৫, মৃত্যু : ১৩ অক্টোবর ১৯৬৪
কবি গোলাম মোস্তফা। জন্ম : ১৮৯৫, মৃত্যু : ১৩ অক্টোবর ১৯৬৪

জসিম উদ্দিন মনছুরি

জাতির জাগরণের কবি গোলাম মোস্তফা ১৮৯৫ সালে যশোর জেলার ঝিনাইদহ মহকুমার শৈলকুপা থানার অন্তর্গত মনোহরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা কাজী গোলাম রব্বানী, পিতামহ কাজী গোলাম সরওয়ার। তারা উভয়ে সাহিত্যানুরাগী-ফারসি ও আরবি ভাষায় সুপণ্ডিত ছিলেন। গোলাম মোস্তফার শিক্ষা জীবন শুরু হয় চার বছর বয়সে নিজগৃহে ও পার্শ্ববর্তী দামুকদিয়া গ্রামের পাঠশালায়। কিছুদিন পরে তিনি ফাজিলপুর গ্রামের পাঠশালাতে ভর্তি হন। দু’বছর এই পাঠশালায় বিদ্যা অর্জনের পরে তিনি ভর্তি হলেন শৈলকুপা উচ্চ মাধ্যমিক ইংরেজি স্কুলে। ১৯১৪ সালে এই স্কুল থেকে কৃতিত্বের সাথে তিনি প্রবেশিকা বা ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। ১৯১৬ সালে তিনি দৌলতপুর বি. এল কলেজ থেকে আই. এ এবং ১৯১৮ সালে কলকাতা রিপন কলেজ থেকে বি. এ পাশ করেন। পরে ডেভিড হেয়ার ট্রেনিং কলেজ থেকে ১৯২২ সালে বি. টি ডিগ্রী লাভ করেন।

১৯২০ সালে জানুয়ারি মাসে ব্যারাকপুর সরকারি হাই স্কুলের সহকারী শিক্ষক হিসেবে গোলাম মোস্তফার শিক্ষকতা জীবনের সূচনা হয়। শিক্ষকতা জীবনে বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষকতা করার পর ১৯৪৬ সালে তিনি ফরিদপুর জেলা স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। দীর্ঘ ত্রিশ বছর শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত থাকার পর ১৯৫০ সালে তিনি প্রধান শিক্ষক হিসেবে চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তার কবি প্রতিবার বিচ্ছুরণ ঘটে অষ্টম শ্রেণীতে অধ্যয়নকালে। ১৯১৩ সালে ‘সাপ্তাহিক মোহাম্মাদী’তে ‘আন্দ্রিয়ানোপল উদ্ধার’ শিরোনামের কবিতা প্রকাশের মধ্য দিয়ে। মুসলিম জাগরণের অগ্রদূত কবি গোলাম মোস্তফার অবদান বাংলা সাহিত্যে এক বিরল দৃষ্টান্ত। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘রক্তরাগ’ প্রকাশিত হলে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিচের দু’লাইন কবিতার মাধ্যমে কবিকে অভিনন্দিত করেছিলেন-

‘তব নব প্রভাতের রক্তরাগখানি

মধ্যাহ্নে জাগায় যেন জ্যোতির্ময়ী বাণী।’

ইসলামী ভাবধারায় যে ক’জন কবি বাংলা ভাষায় সাহিত্যচর্চা করে গেছেন তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য স্থানটি অধিকার করে আছেন কবি গোলাম মোস্তফা। তিনি আজন্ম ইসলামী ভাবধারায় সাহিত্য সাধনা করে গেছেন। তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থসমূহ : রক্তরাগ : (১৯২৪), হাস্নাহেনা : (১৯৩৮), খোশরোজ : (১৯২৯), সাহারা : (১৯৩৬), বুলবুলিস্তান : (১৯৪৯), বনি আদম : (মহাকাব্য, ১৯৫৮), কাব্য কাহিনী : (১৯৩২), তারানা-ই-পাকিস্তান : (১৯৫৬),গীতি সঞ্চয়ন : (১৯৬৮), মরু দুলাল।

তার অন্যান্য রচনাবলী :

বিশ্বনবী : তার লেখা গদ্য সাহিত্যের একটি বিখ্যাত ও জনপ্রিয় গ্রন্থ, যেখানে তিনি হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর জীবনী তুলে ধরেছেন। বাংলাভাষায় সিরাত চর্চায় কবি গোলাম মোস্তফাকে পথিকৃৎ বলা যায়। ‘বিশ্বনবী’ সিরাত গ্রন্থটি এখনো বাঙালি মুসলমানদের হৃদয় জুড়ে স্থান করে আছে। এছাড়া তার উল্লেখযোগ্য অন্যান্য রচনাবলী-

ইসলাম ও জেহাদ : (১৯৪৭) ,আমার চিন্তাধারা : (১৯৫২)

গোলাম মোস্তফার বিখ্যাত কয়েকটি কবিতার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-

পল্লী-মা,কিশোর,আত্ম-সমর্পণ,পাল্কী চলে রে, ক্রন্দসী, তোমারে যে আমি করেছি রূপসী, কুড়ানো মাণিক, আনন্দময়ী।

অনুবাদক হিসেবেও কবি গোলাম মোস্তফার বিশেষ কৃতিত্বের পরিচয় পাওয়া যায়। আরবি ও উর্দু সাহিত্য হতে নি¤œলিখিত গ্রন্থগুলো অনুবাদ করে বাংলা সাহিত্য সম্ভারকে তিনি সমৃদ্ধ করেছেন। ‘ইখওয়ানুস সাফা’, ‘মুসাদ্দাস-ই-হালী’,- ‘কালাম-ই-ইকবাল’, ‘শিকওয়া’ ও ‘আল-কুরআন’ তার অনূদিত গ্রন্থগুলির অন্যতম। এছাড়া, চিন্তামূলক ও যুক্তিবাদের উপর লিখিত আরো কিছু গ্রন্থাবলী তিনি রচনা করেছিলেন। ‘ইসলাম ও কমিউনিজম’, ‘ইসলামে জেহাদ’, ‘আমার চিন্তাধারা’, এগুলি তার গভীর চিন্তাধারার জ্ঞানলব্ধ ফসল।কবি গোলাম মোস্তফার ‘বিশ্বনবী’ একটি আশ্চর্য রকমের সফল সৃষ্টি। এই অমর গ্রন্থখানি গদ্যে রচিত হলেও গদ্যও কবিতার মতো ছন্দময় এবং মাধুর্যেভরা। গ্রন্থখানি বিশ্বনবী হযরত মুহম্মদ এর একটি সার্থক জীবন চরিত। গ্রন্থটিতে হৃদয়ের আবেগ, আন্তরিক অনুভূতি যেভাবে বর্ণিত হয়েছে তার তুলনা আমাদের বাংলা সাহিত্যে নিতান্তই বিরল। এর পরবর্তীকালে তিনি কোরানিক ঘটনার অমিত্রাক্ষর ছন্দে ‘বনি আদম’ নামে একটি মহাকাব্য লিখেছিলেন। যা বাংলা সাহিত্যে এক অমর সাফল্যগাথা। কবি গোলাম মোস্তফার ‘বিশ্বনবী’ বই থেকে বিশ্বনবীর কিছু উদ্ধৃতি তুলে ধরা হলো : ‘নাসারাদের মতন কেহই পড়ো না ধোঁকায়’, ‘খুদার বেটা বলে যেন পূজো না আমায়’, ‘মুহম্মদের পয়গাম আর তোমাদের কারো নাই স্মরণ’ এবং ‘মুহম্মদের নামের আলোকে উজ্জ্বল কর সারা জগৎ’। এই উক্তিগুলো রাসূল সা:-এর প্রতি প্রশংসা প্রকাশ করে এবং তিনি যে ঈশ্বরের পুত্র নন, তা স্মরণ করিয়ে দেয়।

‘বিশ্বনবী’ গদ্য রচনা হলেও কবিতার মতো ছন্দময় ও মধুর ভাষায় রচিত এবং হযরত মুহাম্মদ সা:-এর জীবনীর ওপর ভিত্তি করে লেখা।

তার বিখ্যাত কবিতা ‘কিশোর’ এ তরুণদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন,

আমরা নূতন, আমরা কুঁড়ি নিখিল বন-নন্দনে,

ওষ্ঠে রাঙা হাসিররেখা, জীবন জাগে স্পন্দনে।

লক্ষ আশা অন্তরে

ঘুমিয়ে আছে মন্তরে,

ঘুমিয়ে আছে বুকের ভাষা পাঁপড়ি-পাতার বন্ধনে।

সকল কাঁটা ধন্য করে ফুটবো মোরা ফুটবো গো,

অরুণ রবির সোনার আলো দু’হাত দিয়ে লুটবো গো।

নিত্য নবীন গৌরবে

ছড়িয়ে দিব সৌরভে,

আকাশ পানে তুলবো মাথা সকল বাঁধন টুটবো গো।

সাগর জলে পাল তুলে দে’ কেউবা হব নিরুদ্দেশ;

কলম্বাসের মতই বা কেউ পৌঁছে যাব নূতন দেশ।

পাকিস্তানের প্রশংসা করে তিনি তরুণদের উদ্দেশ্য করে বলেন তোমরা দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে পৃথিবীময় পাকিস্তানের সাফল্য গাঁথা ছড়িয়ে দাও,

জাগবে সাড়া বিশ্বময়

এ পাক-ভূমি নিঃস্ব নয়,

জ্ঞান-গরিমা, শক্তি-সাহস আজও এদের হয়নি শেষ।

কেউবা হব সেনানায়ক, গড়বো নূতন সৈন্যদল-

সত্য-ন্যায়ের অস্ত্র নেব, নাই বা থাকুক অন্য বল;

দেশের ভালো খুঁজব গো

ব্যথির ব্যথা বুঝব গো,

ধন্য হবে দেশের মাটি, ধন্য হবে অন্ন-জল।

কিশোরদের তিনি জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভ্রমণের জন্য উৎসাহিত করেছেন-

জ্ঞান-গরিমা শিখবো বলে কেউ বা যাব জার্মানি

সবার আগেই চলব মোরা, আর কি কভু হার মানি?

শিল্পকলা শিখব কেউ

গ্রন্থমালা লিখব কেউ,

কেউ বা হব ব্যবসাজীবী, কেউবা টাটা, কার্নানি।

তার কবিতায় বিখ্যাত প্রবাদ বাক্যটি দিয়ে শিশুদেরকে তিনি ভবিষ্যতের সুদক্ষ কারিগর কিংবা এক একজন পিতা উল্লেখ করে তাদেরকে স্বপ্নদ্রষ্টা হতে উৎসাহিত করতে গিয়ে বলেন,

ভবিষ্যতের লক্ষ আশা মোদের মাঝে সন্তরে,

ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরই অন্তরে।

নূতন আলোর আমরা সূত

নূতন বাণীর অগ্রদূত,

কতই কি যে করব মোরা নাইকো তাহার অন্তরে।

‘জীবন বিনিময়’ কবিতায় পিতৃস্নেহের নিদারুণ অন্তর্ভেদী দৃশ্যের অবতারণা করেছেন। যেখানে দেখা যায় মোগল সম্রাট বাবরকে পুত্রের জীবন ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য নিজের জীবন বিলিয়ে দিতে। পুত্রের যখন জীবন প্রদীপ নিভে যাওয়ায় অবস্থা কোন চিকিৎসায় কাজ হচ্ছে না তখনই সিদ্ধান্ত নিলেন নিজের জীবনের বিনিময়ে হলেও পুত্রকে সারিয়ে তুলবেন। এখানে পিতৃস্নেহের কাছে সন্তানের জন্য নিজের জীবন পর্যন্ত তুচ্ছ । তিনি ‘জীবন বিনিময়’ কবিতায় এ কথাটি ফুটিয়ে তুলেছেন-

বাদশা বাবর কাঁদিয়া ফিরিছে, নিদ নাহি চোখে তার-

পুত তাহার হুমায়ুন বুঝি বাঁচে না এবার আর!

চারিধারে তার শনায়ে আসিছে মরণ-অন্ধকার।

রাজ্যের যত বিজ্ঞ হেকিম করিবাজ দরবেশ

এসেছে সবাই, দিতেছে বসিয়া ব্যবস্থা সবিশেষ,

সেবাযতেœর বিধিবিধানে ত্রুটি নাহি এক লেশ।

হুমায়ুনের আর যখন বাঁচার কোনো সম্ভাবনা নেই সকল আশা নিরাশায় পরিণত হলো। তখন এক হেকিমের পরামর্শে নিজ জীবনের বিনিময়ে পুত্রের জীবন সারিয়ে তোলা সম্ভব বলে বলা হলো -

হেনকালে এক দরবেশ উঠি কহিলেন- ‘সুলতান,

সবচেয়ে তব শ্রেষ্ঠ যে-ধন দিতে যদি পার দান,

খুশি হয়ে তবে বাঁচাবে আল্লা-বাদশাজাদার প্রাণ।

তখন বাবর মহান আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করে বললেন,

কহিল কাদিঁয়া – ‘হে দয়াল খোদা, হে রহিম রহমান,

মোর জীবনের সবচেয়ে প্রিয় আমারি আপন প্রাণ,

তাই নিয়ে প্রভু পুতের প্রাণ কর মোরে প্রতিদান।’

প্রার্থনার পর বাবর উচ্চস্বরে ডাক দিয়ে বললেন পুত্রধন কোন ভয় নাই মহান আল্লাহ আমার প্রার্থনা কবুল করেছেন। আমার জীবনের বিনিময়ে হলেও আমি আমার পুত্রকে বাঁচিয়ে তুলব,

সহসা বাবর ফুকারি উঠিল- ‘নাহি ভয় নাহি ভয়’

প্রার্থনা মোর কবুল করেছে আল্লাহ যে দয়াময়,

পুত আমার বাঁচিয়া উঠিবে-মরিবে না নিশ্চয়।’

এরপরে অলৌকিকভাবে বাবর অসুস্থ হয়ে পড়লেন এবং হুমায়ুন ধীরে ধীরে সুস্থ হতে লাগলেন। জীবন বিনিময় কবিতায় কবি গোলাম মোস্তফা পিতৃস্নেহের নিদারুণ আলেখ্যের অবতারণা করেছেন। যা পৃথিবীতে বিরল ঘটনা । স্নেহের কাছে মৃত্যুও হার মানতে বাধ্য ।

সেইদিন হতে রোগ- লক্ষণ দেখা দিলো বাবরের,

হৃষ্টচিত্তে গ্রহণ করিল শয্যা সে মরণের,

নতুন জীবনে হুমায়ুন ধীরে বাঁচিয়া উঠিল ফের।

আসলে যে কোন প্রিয় জিনিসকে পেতে মানুষ জীবন বিসর্জন পর্যন্ত দিয়ে থাকেন। পুত্রের জন্য বাবা-মা নিজের জীবন বিসর্জন দিতেও কোণ্ঠা বোধ করে না এখানেই বাবর এর জীবন দান এবং হুমায়ুন কে বাঁচিয়ে তোলার চমৎকার মমতার আবেশ পরিলক্ষিত।

মরিল বাবর – না, না ভুল কথা, মৃত্যু কে তার কয়?

মরিয়া বাবর অমর হয়েছে, নাহি তার কোন ক্ষয়,

পিতৃস্নেহের কাছে হইয়াছে মরণের পরাজয়।

সঙ্গীতের ক্ষেত্রেও তার উল্লেখযোগ্য প্রতিভার পরিচয় মেলে। গায়ক ও গীতিকার হিসেবে তিনি বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। বিশেষ করে ইসলামী গান, গজল ও মিলাদ মাহফিলের বিখ্যাত ‘কিয়ামবাণী’ (রসুল আহবান বাণী) রচনায় তিনি ছিলেন অদ্বিতীয়। তার অনেকগুলি গান আব্বাস উদ্দীনের কণ্ঠেও রেকর্ড হয়েছিল। এছাড়া নিজের কণ্ঠেও তিনি বেশ কয়েকটি গান রেকর্ড করেছিলেন। তার রেকর্ডকৃত গানগুলোর প্রথম লাইনগুলি নিম্নরূপ :

-হে খোদা দয়াময় রাহমানুর রাহিম

-বাদশা তুমি দীন ও দুনিয়ার নিখিলের চির সুন্দর সৃষ্টি

-আমার মুহম্মদ রাসুল

সাহিত্যকর্মে অবদানের জন্য তিনি পাকিস্তান সরকার কর্তৃক সিতারা- ই-ইমতিয়াজ পুরস্কারে ভূষিত হন।এটি মূলত পাকিস্তানের তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার। যা পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রতি সেবার জন্য দেওয়া হয়।

তার তিন পুত্রের মাঝে বড়ো ছেলে প্রখ্যাত শিক্ষক মোস্তফা আব্দুল আজীজ দীর্ঘ সময় ধরে ক্যাডেট কলেজে (রাজশাহী ক্যাডেট কলেজসহ বিভিন্ন ক্যাডেট কলেজে) শিক্ষাকতা করেছেন। দ্বিতীয় ছেলে হলেন বিখ্যাত পাপেটনির্মাতা ও চিত্রশিল্পী মুস্তফা মনোয়ার এবং সাম্প্রতিককালের অস্কারজয়ী বাংলাদেশী নাফিস বিন জাফর তার নাতি।

গোলাম মোস্তফা একাধারে কবি, গীতিকার, সুরকার, গায়ক, প্রাবন্ধিক, উপন্যাসিক, শিশুতোষ-রচয়িতা, অনুবাদক, পাঠ্যপুস্তক-রচয়িতা, শিক্ষাবিদ, চিন্তাবিদ, সমাজসেবক ইত্যাদি বহুমুখী প্রতিভা ও গুণের অধিকারী। রবীন্দ্র-যুগে সমোদ্ভাসিত বাংলা সাহিত্যাকাশে তিনি ছিলেন এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তার সমসাময়িক কবি কাজী নজরুল ইসলামের (১৮৯৯-১৯৭৪) প্রতিভার খর-রৌদ্রতাপে বাংলা সাহিত্য যখন দীপ্ত-সমুজ্জ্বল, গোলাম মোস্তফা সে সময়কার অন্যতম বিশিষ্ট কবি হিসেবে সমাদৃত। রবীন্দ্র-যুগের (১৮৬১-১৯৪১) কবি গোলাম মোস্তফা যেমন রবীন্দ্র প্রভাব-বলয় থেকে মুক্ত ছিলেন না, পরবর্তীতে তার সমসাময়িক যুগ-শ্রেষ্ঠ কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রভাবকেও তেমনি উপেক্ষা করতে পারেননি। উভয় কবির প্রভাব সত্ত্বেও গোলাম মোস্তফা স্বকীয় ধারায় সাহিত্যচর্চায় নিবেদিত ছিলেন। এখানেই তার যথার্থ সার্থকতা।বাংলা সাহিত্যের মহান সত্যানুসন্ধানী কবি গোলাম মোস্তফা তার জীবনসায়াহ্নে কয়েক বছর ঢাকা শান্তিনগরস্থ নিজ গৃহে (মোস্তফা মঞ্জিল) অতিবাহিত করেন। বেশ কিছু দিন রোগে আক্রান্ত থাকার পর কবি ১৯৬৪ সালের ১৩ অক্টোবর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মহান প্রভুর সান্নিধ্য লাভ করেন।