সংশোধন-পরবর্তী ফের ঊর্ধ্বমুখী পুঁজিবাজার

দর ফিরে পাচ্ছে দুর্বল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান

Printed Edition

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক

একদিনের সংশোধন শেষ করে ফের ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে দেশের পুঁজিবাজার। গত সপ্তাহের প্রথম চার কার্যদিবসে সূচকের বড় ধরনের উন্নতি ঘটলেও সপ্তাহের শেষ দিনে এসে বাজারগুলোতে সংশোধন ঘটে। এতে ওই দিন দেশের দুই পুঁজিবাজারই কমবেশি সূচক হারায়। গতকাল নতুন সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে ফের ইতিবাচক ধারায় ফিরে বাজারগুলো। লেনদেনের শুরুতে বিক্রয়চাপে স্বল্পসময়ের জন্য সূচকের নি¤œমুখী আচরণ দেখা গেলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে তা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয় বাজারগুলো। দিনশেষে ঢাকা শেয়ারবাজারে সবগুলো সূচকের উন্নতি ঘটে। তবে এদিন সূচকের কিছুটা মিশ্রপ্রবণতার শিকার ছিল চট্টগ্রাম শেয়ারবাজার।

প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স গতকাল ৪৬ দশমিক ৭৩ পয়েন্ট উন্নতি ধরে রাখে। ৪ হাজার ৮৬৯ দশমিক ০১ পয়েন্ট থেকে লেনদেন শুরু করা সূচকটি দিনশেষে পৌঁছে যায় ৪ হাজার ৯১৫ দশমিক ৭৪ পয়েন্টে। লেনদেনের শুরুতে বিক্রয়চাপ সক্রিয় হলে সূচকটি নি¤œমুখী হয়ে যায়। মাত্র ১৫ মিনিটের মাথায় তো নেমে আসে ৪ হাজর ৮২৩ পয়েন্টে। এ পর্যায়ে সূচকের অবনতি রেকর্ড করা হয় ৪৬ পয়েন্ট। তবে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণের ফলে দ্রুতই এ চাপ সামলে নেয় বাজারটি। পরবর্তীতে বিভিন্ন পর্যায়ে মৃদু বিক্রয়চাপ সক্রিয় থাকলেও সূচকের ঊর্র্ধ্বমুখী প্রবণতার তেমন ব্যত্যয় ঘটাতে পারেনি। দিনশেষে সব সূচকই কমবেশি উন্নতি ধরে রাখতে সক্ষম হয়। এ সময় ডিএসই’র দুই বিশেষায়িত সূচক ডিএসই-৩০ ও ডিএসই শরিয়াহ সূচকের যথাক্রমে ৫ দশমিক ৪৮ ও ৯ দশমিক ৪১ পয়েন্ট উন্নতি ঘটে।

অপর দিকে দেশের দ্বিতীয় পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সূচকের আচরণ ছিল মিশ্র। এখানে সিএসই’র সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই ৩৮ দশমিক ২৩ পয়েন্ট বৃদ্ধি পায়। তবে বিশেষায়িত দুই সূচকের মধ্যে সিএসসিএক্স সূচকটি ১৫ দশমিক ২৫ পয়েন্ট উন্নতি ঘটলেও সিএসই-৩০ সূচকটি ২৯ দশমিক ৯৭ পয়েন্ট হারায়।

সূচকের উন্নতি ঘটলেও গতকাল ঢাকা শেয়ারবাজারে লেনদেনের অবনতি ঘটে। বাজারটি এদিন ৩৪৫ কোটি টাকার লেনদেন নিষ্পত্তি করতে সক্ষম হয় যা আগের দিন অপেক্ষা ৬০ কোটি টাকা কম। গত বৃহস্পতিবার ডিএসই’র লেনদেন ছিল ৪৪৫ কোটি টাকা। বাজারসংশ্লিষ্টরা মনে করেন, দিনের শুরুতে বাজারে যে বিক্রয়চাপ সক্রিয় ছিল তাতে বিনিয়োগকারীরা কিছুটা দোটানায় পড়ে যান। পরবর্তীতে নতুন করে বিক্রয়চাপ সৃষ্টি হওয়ার ভয়ে বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ হাত গুটিয়ে নেন। এটাকেই লেনদেন হ্রাস পাওয়ার কারণ হিসেবে দেখছেন তারা।

এ দিকে দুর্বল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ারহোল্ডারদের বিনিয়োগ নিয়ে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যকার মনোভাব স্পষ্ট না হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে দরপতনের শিকার দুর্বল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো আবার দর ফিরে পেতে শুরু করেছে। আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগকারীদের হাতে থাকা শেয়ারের মূল্য শূন্য বলা হলেও সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে তাদেরকে আশ^স্ত করা হলে প্রথম দিকে একীভূত হতে যাওয়া পাঁচটি ইসলামী ধারার ব্যাংকের শেয়ারদর ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করে। আর একই কারণে দর ফিরে পাচ্ছে দুর্বল আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও। গতকাল এ ধরনের কিছু প্রতিষ্ঠানকে দিনের মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায়ও জায়গা করে নিতে দেখা যায়। আর এটাই মূলত: দিনের সূচকের বড় উন্নতিতে ভূমিকা রাখে।

দিনের বাজার আচরণের সবচেয়ে খারাপ দিক ছিল, দুর্বল কোম্পানিগুলোর দর বাড়লেও সূচকের বড় উন্নতির কোনো প্রভাব পড়েনি বাজারের মৌল ভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানিগুলোতে। এমনকি ব্যাংকিং খাতেও একই প্রবণতা দেখা গেছে। ভালো ব্যাংকগুলো গতকাল দরপতনের শিকার হয়। অন্যান্য খাতের ভালো কোম্পানিগুলোর দরেও সূচকের উন্নতির খুব একটা প্রতিফলন দেখা যায়নি। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, এটি আমাদের পুঁজিবাজারের সবচেয়ে দুর্বল দিক। এখানে বাজার যখন খারাপ থাকে তখনও ভালো কোম্পানিগুলো দরপতনের শিকার হয়। আর বাজার যখন ভালো আচরণ করে তখন সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ে দুর্বল মৌল ভিত্তির স্বল্প মূলধনী কোম্পানি নিয়ে। আর এর ফলে বাজারের প্রকৃত বিনিয়োগকারীরা বিভ্রান্তিতে পড়েন।

গতকাল ডিএসই’র লেনদেনের শীর্ষে ছিল ইস্টার্ন লুব্রিকেন্ট ব্লেন্ডার্স। কোম্পানিটি আগের দিন বিগত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করার পাশাপাশি ওই বছরের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করে যা বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করে। ফলে দিনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ ধরে রাখে। এতে মূল্যস্তর অনেক বেশি হলেও এটিই গতকাল ডিএসই’র লেনদেনের শীর্ষস্থান দখলে নেয়। ১৬ কোটি ৩৭ লাখ টাকায় কোম্পানিটির ৬১ হাজার ৩৮০টি শেয়ার হাতবদল হয় গতকাল। ১৩ কোটি ২০ লাখ টাকায় ১৪ লাখ ১২ হাজার শেয়ার বেচাকেনা করে আনোয়ার গ্যালভেনাইজিং উঠে আসে দ্বিতীয় স্থানে। ডিএসই’র লেনদেনের শীর্ষ ১০ কোম্পানির অন্যগুলো ছিল যথাক্রমে লাভেলো আইসক্রিম, শাহজিবাজার পাওয়ার কোম্পানি, সামিট অ্যালাইয়েন্স পোর্ট, ডমিনেজ ্িটলস, ওরিয়ন ইনফিউশন, রানার অটোমোবাইলস, বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার ও সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলস।

এদিন ডিএসইর মূল্যবৃদ্ধির তালিকার শীর্ষে জায়গা করে নেয় জীবনবীমা কোম্পানি সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স। ৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি ঘটে কোম্পানিটির। একই হারে মূল্যবৃদ্ধি পাওয়া তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কোম্পানি ইনটেক অনলাইন ছিল দ্বিতীয় অবস্থানে। মূল্যবৃদ্ধিতে ডিএসইর শীর্ষ ১০ কোম্পানির অন্যগুলো ছিল যথাক্রমে আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, এবি ব্যাংক, প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স, আইএফআইসি ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, ডরিণ পাওয়ার, রানার অটোমোবাইলস ও স্যালভো কেমিক্যালস।

গতকাল ডিএসইর দরপতনের শীর্ষ কোম্পানি ছিল এনার্জিপ্যাক পাওয়ার জেনারেশন। ৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ দর হারায় কোম্পানিটি। গতকাল কোম্পানিটি চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে শেয়ারপ্রতি ৩ দশমিক ০৮ টাকা লোকসান দেখালে এ দরপতন ঘটে কোম্পানিটির শেয়ারের। এদিন ৫ দশমিক ১৭ শতাংশ দরপতনের শিকার হওয়া মেঘনা সিমেন্ট ছিল দরপতনের দ্বিতীয় স্থানে। ডিএসইর দরপতনে শীর্ষ ১০ কোম্পানির অন্যগুলো ছিল যথাক্রমে আরএসআরএম স্টিলস, আনলিমা ইয়ার্ণ ডাইং, হা ওয়েল টেক্সটাইলস, মাইডাস ফিন্যান্স, আরামিট সিমেন্ট, ইবিএল এনআরবি মিউচুয়াল ফান্ড, ফার্স্ট জনতা ব্যাংক মিউচুয়াল ফান্ড ও ট্রাস্ট ব্যাংক ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড।