নিয়ম ভেঙে বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ দিচ্ছে অ্যাডহক কমিটি

শাহেদ মতিউর রহমান
Printed Edition
  • শেরে বাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয়ে চাকরি দেয়ার প্রলোভনে প্রার্থীদের পরীক্ষা গ্রহণ
  • খতিয়ারবহির্ভূত বলছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড

নিয়ম ভেঙে এবং বিধিবহির্ভূতভাবে বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ দিচ্ছে অ্যাডহক কমিটি। যদিও এই কমিটি অনুমোদনের সময়েই শর্ত দেয়া হয়েছিল যে, তারা কোনো নিয়োগ কিংবা ছাঁটাই প্রক্রিয়ার এখতিয়ার রাখবে না; কিন্তু তারপরেও রাজধানীর মিরপুরে মনিপুর হাইস্কুলে এবং টিকাটুলীর শেরে বাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয়ে পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। যদিও ঢাকা শিক্ষা বোর্ড এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতেরর (মাউশি) সরাসরি হস্তক্ষেপে ইতোমধ্যে মিরপুরের মনিপুর স্কুলের শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে; কিন্তু রাজধানীর টিকাটুলীর শেরে বাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয়ে গত শুক্রবার শিক্ষকদের তীব্র আপত্তি আর প্রতিবাদের মুখেও শতাধিক প্রার্থীর লিখিত পরীক্ষা নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, এটা নিয়মবহির্ভূত। কোনো অ্যাডহক কমিটিকে শিক্ষক নিয়োগ কিংবা প্রার্থীদের পরীক্ষা নেয়ার কোনো ক্ষমতা দেয়া হয়নি। এটা হয়ে থাকলে পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়াই বাতিল করা হবে।

এ দিকে শেরে বাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অনেকেই এই প্রতিবেদককে জানান, বর্তমান অ্যাডহক কমিটির সভাপতি নিজের একক ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিয়মবহির্ভূতভাবে এই স্কুলে বিভিন্ন পদে শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার পাঁয়তারা করছেন। এই প্রতিষ্ঠানের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শাখার নন এমপিও ও খণ্ডকালীন শিক্ষকদের বিষয়ে একটি তদন্ত রিপোর্টকে পুঁজি করে ২৫ জন শিক্ষককে চাকরি থেকে বহিষ্কার করতেই চতুরতার আশ্রয় নিয়ে তাদেরকে পুনঃনিয়োগ দেয়ার নাম করে শিক্ষক নিয়োগের এই আয়োজন করেছেন। শিক্ষক নিয়োগের এই প্রক্রিয়াকে বৈধতা দেয়ার জন্য গত ২৭ জুন একটি জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞাপন দিয়ে বিভিন্ন পদে শিক্ষক নিয়োগের জন্য প্রার্থীদের আবেদন করতে বলা হয়েছে। এরই চূড়ান্ত আয়োজন হয়েছে গত ২৫ জুলাই শুক্রবার। ওই দিন স্কুলের শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার জন্য শতাধিক প্রার্থীকে পরীক্ষার মাধ্যমে বাছাই করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে- বিশেষ সুবিধার বিনিময়ে চাকরি দেয়ার প্রলোভনে প্রার্থীদের নিয়োগ পরীক্ষা নেয়া হয়েছে।

যদিও অ্যাডহক কমিটির ক্ষমতা বা এখতিয়ারে বলা হয়েছে (ধারা ৬৫) অ্যাডহক কমিটি কোনোক্রমেই প্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষক বা অন্যান্য সহকারী পদে কাউকেই নিয়োগ বা প্রত্যাহার করার ক্ষমতা রাখবে না। তবে এনটিআরসিএ কর্তৃক নির্বাচিত শিক্ষকদের শূন্যপদের বিপরীতে নির্দিষ্ট পদে শিক্ষকদের নিয়োগপত্র অনুমোদন করতে পারবে। বিধিতে ৬৭ ধারায় আরো বলা হয়েছে- এসব নিয়মের কোনো ব্যত্যয় হলে শিক্ষা বোর্ড কমিটি ভেঙে দিতে পারবে।

এ বিষয়ে শেরে বাংলা মহিলা মহাবিদ্যালয়ের অ্যাডহক কমিটির সভাপতি জাকির হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা কোনো নিয়মের লঙ্ঘন করিনি। প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে এবং পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার সুবিধার্থে আমরা শুধু খণ্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার জন্যই পরীক্ষা নিয়েছি। প্রয়োজনে শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা, মাউশির প্রতিনিধি এমনকি সাংবাদিকরাও এসে দেখুক আমরা কোনো অনিয়ম করেছি কি না? এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শিক্ষক নিয়োগ আমাদের এখতিয়ার না থাকলেও আমরা এখানে খণ্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছি। খণ্ডকালীন শিক্ষক কোনোক্রমেই শিক্ষক নন। তাই খণ্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার জন্য কোনো বিধিনিষেধ থাকার কথা নয়। আর যদি শিক্ষা বোর্ড কিংবা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ আমাদের এই শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া বিধিবহির্ভূত বলে মনে করে তাহলে আমরা নিয়োগ বাতিল করে দেবো। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অ্যাডহক কমিটির কার্যপরিধি বিধিতেই উল্লেখ করা হয়েছে। এর বাইরে গিয়ে কোনোভাবেই তারা শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার মতো কাজে হাত দিতে পারেন না। প্রয়োজনে মাউশি বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে। বিষয়টি যদি প্রমাণিত হয় যে, অ্যাডহক কমিটি নিয়োগ প্রক্রিয়া পরিচালনা করেছে তাহলে পুরো নিয়োগ কার্যক্রমই বাতিল করে দেয়া হবে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. খন্দোকার এহসানুল কবির গতকাল রোববার সন্ধ্যায় এই প্রতিবেদককে জানান, অ্যাডহক কমিটির কোনোই ক্ষমতা নেই শিক্ষক নিয়োগ বা প্রার্থীদের পরীক্ষা নেয়ার মাধ্যমে তাদেরকে নিয়োগ দেয়ার। এ রকম সুস্পষ্ট অভিযোগ পেলে আমরা তাৎক্ষণিক সেই নিয়োগ বাতিল করে দেবো। এর আগে রাজধানীর মনিপুর স্কুলে এ রকম অভিযোগ এসেছিল। আমরা সেখানে ব্যবস্থা নিয়েছি। মনিপুর স্কুলের নিয়োগ কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছি।