অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট : ক্যান্সার রোধে ভুল ধারণা ও বাস্তবতা

Printed Edition

মো: লিখন ইসলাম বাকৃবি

বিশ্বে ‘অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট’ শব্দটি এমনভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে যেন এটি জীবনের সব সমস্যার একমাত্র সমাধান। বিজ্ঞাপন, স্বাস্থ্যপণ্য, এমনকি অনেকে চিকিৎসা পরামর্শেও একে ক্যান্সার প্রতিরোধের মূল হাতিয়ার হিসেবে উপস্থাপন করেন। কিন্তু বিজ্ঞানের কঠোর পরীক্ষায় এ ধারণা টিকে নেই। বাস্তবে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট একটি সাধারণ রাসায়নিক ধারণা। এটি এমন উপাদানকে বোঝায় যা শরীরের ফ্রি র‌্যাডিকাল বা অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে পারে। কিন্তু এই প্রক্রিয়া ক্যান্সার প্রতিরোধ বা চিকিৎসা করার সমার্থক নয়।

মানবদেহের প্রতিটি কোষে শ্বাস-প্রশ্বাস, শক্তি উৎপাদন ও অন্যান্য বিপাকীয় কার্যক্রমের ফলেই কিছু ফ্রি র‌্যাডিকাল তৈরি হয়, যা অতিরিক্ত হলে কোষের ক্ষতি করতে পারে। এই ক্ষতি প্রতিরোধের জন্য দেহে প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা আছে, যেমন গ্লুটাথায়ন, ক্যাটালেজ ও সুপারঅক্সাইড ডিজমিউটেজ এনজাইম। উদ্ভিদজাত খাদ্যদ্রব্যের বিভিন্ন যৌগ এই প্রক্রিয়ায় সহায়তা করতে পারে, যাদের আমরা একত্রে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বলি। তবে কোনো খাদ্য বা নির্যাসে এই যৌগের উপস্থিতি মানেই তা ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকর হবে এমন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পরিচালিত সিলেক্ট ট্রায়ালে দেখা গেছে, ভিটামিন ‘ই’ সাপ্লিমেন্ট গ্রহণকারীদের মধ্যে প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ গোষ্ঠীর তুলনায় বেশি ছিল। একইভাবে, একাধিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, উচ্চমাত্রায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গ্রহণ কোষের প্রাকৃতিক সঙ্কেত প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে টিউমার কোষের বেঁচে থাকার সুযোগও বাড়াতে পারে।

ফার্মাকোলজির দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায়, এন্টিঅক্সিডেন্ট কোনো ওষুধ নয়। এটি একটি শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ার সহায়ক মাত্র। ক্যান্সার একটি জটিল রোগ, যার পেছনে শুধু অক্সিডেটিভ স্ট্রেস নয়, বরং জেনেটিক পরিবর্তন, সিগন্যালিং পাথওয়ের ত্রুটি, ইমিউন সিস্টেমের ব্যর্থতা এবং পরিবেশগত প্রভাবসহ বহু কারণ কাজ করে। তাই কোনো একক যৌগ বা ফল দ্বারা এর প্রতিকার সম্ভব নয়।

ননী ফলের মতো উদ্ভিজ্জ উপাদানগুলো আমাদের খাদ্যতালিকায় থাকতে পারে, কারণ এতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। তবে এই উপাদানগুলোকে ‘ক্যান্সার প্রতিরোধক’ হিসেবে প্রচার করা বিজ্ঞানসম্মত নয়। বরং অতিরিক্ত সেবন লিভারের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের ক্ষতি ঘটাতে পারে।

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট নিয়ে কথা বলেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) বিজ্ঞানী ও ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো: শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, প্রতিটি উদ্ভিদ উপাদানের মধ্যেই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যানসারের উপর কোনো কাজ করে না। এটি স্বাস্থ্যবান ব্যক্তির জন্য মহা উপকারী। আমি আমার গবেষণায় বহু ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ট্রায়াল করেছি। যারা বলে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যানসারের উপর কাজ করে তারা সেটা হওয়ায় না, হাওয়ায় বলে। যদি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সারের উপর কাজ করত তাহলে এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হলো ভিটামিন ‘ই’- সেটাই হতো ক্যান্সারের মহা ওষুধ। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, এমনকি কারো কথাও যদি অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায়- সেটা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে।