এশিয়া কাপের প্রস্তুতির শুরুটা দাপটের সাথেই করেছে বাংলাদেশ। সিলেটে প্রথম টি-২০তে ব্যাটিং বোলিং দুই বিভাগেই দক্ষতা দেখিয়ে নেদারল্যান্ডসকে হারিয়েছে অনায়াসে। স্বাগতিকরা তাসকিনের চার উইকেট নেয়ার পর লিটনের ঝড়ো ফিফটি এবং সাইফের ঝড়ো ইনিংসে ভর করে ৩৯ বল হাতে রেখেই জয় পায় ৮ উইকেটে।
গতকাল বাংলাদেশের বিপক্ষে টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে নেদারল্যান্ডস ৮ উইকেটে তুলেছে ১৩৬ রান। ডাচদের ইনিংসে সর্বোচ্চ ২৬ রান করেন তেজা নিদামানুরু। চার উইকেট নেন তাসকিন আহমেদ, দু’টি নেন সাইফ হাসান। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ১৩.৩ ওভারে দুই উইকেট হারিয়ে ১৩৮ রান করে জয় তুলে নেয় টাইগাররা।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রথম ম্যাচে মাঠের বাইরে ছিল উত্তেজনা। খেলা শুরুর ২০ মিনিট পর স্টেডিয়ামের তিন নম্বর গেটে ব্যাপক ভিড় জমে যায়। একপর্যায়ে গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়েন অনেক দর্শক। এ সময় টিকিট কেটে আসা সমর্থকদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
ডাচদের ইনিংসে শুরুতে আঘাত হানেন তাসকিন। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে বোলিংয়ে এসে প্রথম বলেই ফেরান ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা ম্যাক্স ও’দাউদকে। তাসকিনের গুড লেংথ বলে শর্ট কাভারে ধরা পড়েছেন জাকের আলীর হাতে। ১৫ বলে ২৩ রান করা ও’দাউদ ৩টি চার ও ১টি ছক্কা মারেন। পাওয়ার প্লেতে ডাচরা তোলে ৩৪ রান। ইনিংসের পঞ্চম ওভার বল করতে এসে কোন রান দেননি শরিফুল ইসলাম। ইনিংসের অষ্টম ওভারে তাসকিনের করা অফ স্টাম্পের বাইরে করা শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে লং অনে পারভেজ হোসেনকে ক্যাচ দেন বিক্রমজিৎ সিং।
সেই ধাক্কা সামলানোর চেষ্টা করেন অ্যাডওয়ার্ডস ও তেজা। তবে ইনিংসের দশম ওভারে বল করতে এসে জোড়া আঘাত করেন সাইফ হাসান। অ্যাডওয়ার্ডস (১২) ও তেজা দু’জনকেই ফেরান তিনি। সাইফ আন্তর্জাতিক টি-২০তে এই প্রথম উইকেট পেলেন। এর আগে টেস্টে সাইফ একটি উইকেট পেয়েছিলেন। দলীয় একশ’র আগেই শারিজকে ফেরান বাঁ-হাতি পেসার মোস্তাফিজুর রহমান। টি২০তে দেশের হয়ে এটি ছিল মোস্তাফিজের ১৪০তম উইকেট।
১৬তম ওভারের দ্বিতীয় বলে দলীয় ১০০ পূর্ণ করে নেদারল্যান্ডস। তাসকিন কাইল ক্লাইনকে ম্যাচে নিজের তৃতীয় শিকার বানান। নিজের করা চতুর্থ ওভারেও উইকেট নেন তাসকিন। এবার তার স্লোয়ার ডেলিভারিতে আউট হন নোয়াহ ক্রস। তাসকিন ৪ ওভারে ২৮ রান খরচায় নেন ৪ উইকেট। এর আগে ২০২২ সালে হোবার্টে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে (৪/২৫) ও ২০২৩ সালে চট্টগ্রামে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে (৪/১৬) ৪ উইকেট পেয়েছিলেন তাসকিন। এরপর টিম প্রিঙ্গেল ও আরিয়ান দত্ত দলের সংগ্রহ ১৩৬ এ নিয়ে যান। প্রিঙ্গল শেষ বলে ১৬ রানে ফিরলেও ১৩ রানে অপরাজিত ছিলেন আরিয়ান। প্রিঙ্গলের ১৪ বলের ইনিংসে ছিল ১টি চার ও ১টি ছয়। আরিয়ানের ৮ বলের ইনিংসে ছিল একটি চারের মার।
জবাবে আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে দারুণ সূচনা করেন পারভেজ হোসেন ইমন। আরিয়ান দত্তের শুরুর ওভারে প্রথম ৩ বলে দুটি চার ও ১টি ছক্কায় ১৪ রান নিয়েছেন। এর পরে থমকে যান তিনি। পারভেজ হোসেন ইমন ৯ বলে ১৫ রান করে আরিয়ান দত্তর বলে বোল্ড হন। তার ইনিংসে ছিল ২ চার ও ১ ছক্কা। এই ছক্কাতেই এক পঞ্জিকাবর্ষে বাংলাদেশের হয়ে টি-২০তে সবচেয়ে বেশি ২১ ছক্কার রেকর্ড ছুঁয়েছেন পারভেজ হোসেন। হৃদয় ২০২৪ সালে ও তানজিদ হাসান এ বছর ২১টি ছক্কা মেরেছেন।
এরপর নেমেই ঝড়ো ব্যাটিংয়ে খেলতে থাকেন অধিনায়ক লিটন দাস। ১৪ বলে ৩ চার ও ১ ছক্কায় এই সময় তুলেছেন ২৭ রান। তাতে পাওয়ার প্লেতে ১ উইকেটে ৫৭ রান জমা করে স্বাগতিক দল।
তানজিদ হাসান তামিম অবশ্য ধীরে সুস্থেই খেলেছেন। শুরুর জুটি ভাঙার পর ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ৬৬ রান যোগ করেছিলেন লিটন ও তানজিদ। ৩৯ বলের এই জুটি ভেঙেছে তানজিদের বিদায়ে। ৯.১ ওভারে প্রিঙ্গলের বলে মেরে খেলতে গিয়ে ২৯ রানে কাটা পড়েন এই ওপেনার। তার ২৪ বলের ইনিংসে ছিল ২টি চার। তবে ততক্ষণে দলীয় স্কোর ৯২। লিটন ব্যাট হাতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে ২৬ বলে তুলে নিয়েছেন ক্যারিয়ারের ১৩তম ফিফটি। তানজিদ ফিরলেও তার ব্যাটে স্কোর ছাড়িয়েছে একশ’। এই সংস্করণে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের সবচেয়ে বেশি ফিফটির রেকর্ডে সাকিব আল হাসানের পাশে বসলেন লিটন। সাকিব খেলেছেন ১২৯ ম্যাচ, লিটন ১০৮ ম্যাচেই ছুঁলেন রেকর্ড।
চার বছর পর দলে ফিরে ব্যট হাতে দেখে শুনেই খেলেছেন সাইফ হাসান। প্রথম কয়েক বল সিঙ্গেলের ওপর জোর দিলেও পরে চার ছক্কা ফুলঝুড়ি ছুটান। শেষ পর্যন্ত ৩৯ বল বাকি থাকতে ৮ উইকেটের জয় তুলে নেয় টাইগাররা। লিটন ২৯ বলে ছয় চার ও দুই ছক্কায় অপরাজিত ৫৪ রান করেন। সাইফ হাসান ১৯ বলে এক চার তিন ছক্কায় ৩৬ রারে অপরাজিত থাকেন। সাত বোলার ব্যবহার করেও দু’টির বেশি উইকেট নিতে পারেনি সফরকারীরা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
নেদারল্যান্ডস : ১৩৬/৮ (আরিয়ান ১৩*; ও’দাউদ ২৩, বিক্রমজিৎ ৪, অ্যাডওয়ার্ডস ১২, নিদামানুরু ২৬, শারিজ ১৫, ক্লেইন ৯, ক্রোয়েস ১১, প্রিঙ্গল ১৬, তাসকিন ৪/২৮, সাইফ ২/১৮, মোস্তাফিজ ১/১৯) ।
বাংলাদেশ : ১৩.৩ ওভারে ১৩৮/২ (পারভেজ ১৫, তানজিদ ২৯, লিটন ৫৪*, সাইফ ৩৬*, আরিয়ান ১/৩০, প্রিঙ্গেল ১/১৬)।
ফল : বাংলাদেশ ৮ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ : বাংলাদেশ ১-০ তে এগিয়ে।
ম্যাচ সেরা : তাসকিন আহমেদ।



