পঞ্চম শ্রেণীতে আবারো চালু হচ্ছে বৃত্তি পরীক্ষা

২০০৮ সালে বৃত্তি পরীক্ষা বন্ধ হয়ে ২০০৯ সালে শুরু হয়েছিল প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা

শাহেদ মতিউর রহমান
Printed Edition
পরীক্ষা দিচ্ছে এক শিক্ষার্থী
পরীক্ষা দিচ্ছে এক শিক্ষার্থী |সংগৃহীত

দীর্ঘ দেড় যুগ পর প্রাথমিকের পঞ্চম শ্রেণীতে আবারো চালু হচ্ছে বৃত্তি পরীক্ষা। সর্বশেষ ২০০৮ সালে পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পৃথক পরীক্ষার মাধ্যমে মেধা যাচাই করে বৃত্তি দেয়া হয়েছিল। এরপর ২০০৯ সাল থেকে চালু হয় প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা। তখন এই সমাপনী পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের তুলনামূলত বিশ্লেষণ করে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেয়া হতো। কিন্তু সর্বশেষ ২০১৯ সালে সমাপনী পরীক্ষাও বাতিল করা হয়। এরপর ২০২০ ও ২০২১ সালে করোনা মহামারীর কারণে সমাপনী এবং বার্ষিক পরীক্ষার কোনোটিই আর হয়নি। দীর্ঘ দিন পর এখন চলতি ২০২৫ সাল থেকেই প্রাথমিকের বৃত্তি পরীক্ষা আবার চালুর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্র জানায়, পঞ্চম শ্রেণীতে ২০২৫ সাল থেকে বৃত্তি পরীক্ষার চালুর বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও অষ্টম শ্রেণীতে বৃত্তি পরীক্ষার চালুর বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, প্রাথমিকে বৃত্তি পরীক্ষা চালু থাকলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে পরস্পরের মধ্যে পড়াশোনার প্রতিযোগিতা এবং পরীক্ষায় ভালো করার চেষ্টা অব্যাহত থাকে। ২০০৯ সালে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা চালু হলে শিক্ষার্থীদের ওপর থেকে পরীক্ষার অতিরিক্ত চাপ কমাতেই মূলত সেই সময়ে অতিরিক্ত পরীক্ষা হিসেবে এই বৃত্তি পরীক্ষা রহিত করা হয়। অভিভাবকদের মধ্যে এ নিয়ে ভালোমন্দ মিলিয়ে একটি মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। অনেক অভিভাবক তখন বৃত্তি পরীক্ষার পক্ষে অবস্থান নিলেও বিশেষজ্ঞদের মতামত ছিল শিক্ষার্থীদের ওপর থেকে পরীক্ষা চাপ কমানোর। পরে বাতিল করা হয় বৃত্তি পরীক্ষা। অবশ্য প্রাথমিকে সমাপনী পরীক্ষা চালু হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের উৎসাহ বাড়াতে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে সর্বোচ্চ নম্বরের বিবেচনায় ছাত্র এবং ছাত্রী কোটা ছাড়াও জেলা-উপজেলা কোটা বিবেচনায়ও নির্ধারিতসংখ্যক শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেয়া হয়। কিন্তু গত ১৭-১৮ বছর ধরে প্রাথমিকের সেই বৃত্তি পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে।

প্রাথমিকে বৃত্তি পরীক্ষা আবার চালু করা প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাসুদ আকতার খান নয়া দিগন্তকে জানান, দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকার পর শিক্ষার্থীদের মেধার মূল্যায়নে আবারো বৃত্তি পরীক্ষা চালুর চিন্তা করা হচ্ছে। অবশ্য এরইমধ্যে এ বিষয়ে কিছু কাজও শুরু হয়েছে। তবে সবকিছু নির্ভর করছে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সিদ্ধান্তের উপরেই। আমরা এখন থেকেই সেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছি। যাতে সরকার সিদ্ধান্ত দিলে চলতি বছরের (২০২৫) থেকেই প্রাথমিকের পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের বৃত্তি পরীক্ষায় বসানো যায়।

গতকাল সাভার উপজেলার ইয়ারপুর ইউনিয়নের গুমাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক জানান, উপজেলা থেকে আমাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বৃত্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়ার জন্য। একই সাথে পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের একটি ডাটাবেজও তৈরি করা হচ্ছে। অর্থাৎ কোন স্কুলে পঞ্চম শ্রেণীর কতজন শিক্ষার্থী রয়েছে তাদের নাম ঠিকানা বাবা ও মায়ের নাম সংবলিত পুরো ডাটা উপজেলায় পাঠনোর জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পঞ্চম শ্রেণীর মোট শিক্ষার্থীর শতকরা কতজন বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নেবে তারও একটি ডাটাবেজ তৈরি করার কথা বলা হয়েছে।

এ দিকে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ণ পরিবীক্ষণ ইউনিটের পরিচালক মো: আবদুল হালিম ভুঁঞা নয়া দিগন্তকে জানান, এমনিতেই প্রাথমিক শিক্ষার মান নিয়মিতভাবেই কমছে। এরপরে আবার নিয়মিতভাবে বিদ্যালয়গুলো তদারকি না করার কারণে বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান ও পরিবেশ দুটোর অবস্থাই নাজুক। এখন যদি নতুন করে আবারো বৃত্তি পরীক্ষার আয়োজন করা হয় তাহলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে পড়ালেখার প্রতিযোগিতা কিছুটা হলেও বাড়বে।

এ দিকে পঞ্চম শ্রেণীতে বৃত্তি পরীক্ষা চালুর বিষয়ে গতকাল শনিবার ঢাকার বাইরে এক অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা: বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেছেন, ইতোমধ্যে প্রাথমিকে পরীক্ষা পদ্ধতি আবার চালু হয়েছে এবং এরই ধারাবাহিকতায় এবার বৃত্তি পরীক্ষাও চালু করতে যাচ্ছি। একইসাথে মৌলিক শিক্ষার পাশাপাশি কো-কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিস যেমন- বিতর্ক প্রতিযোগিতা, দেয়ালিকা উৎসব, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হচ্ছে।

বৃত্তি পরীক্ষা চালুর বিষয়ে এনসিটিবির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরী নয়া দিগন্তকে জানান, প্রাথমিকে চলতি বছর থেকেই বৃত্তি পরীক্ষা চালুর বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত হলেও অষ্টম শ্রেণীতে বৃত্তি পরীক্ষা চালুর বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। অবশ্য এ বছর পঞ্চম শ্রেণীতে বৃত্তি পরীক্ষার চালুর পর আগামী বছর থেকে অষ্টম শ্রেণীতেও বৃত্তি পরীক্ষা চালুর বিষয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনা করা হতে পারে।

সূত্র জানায়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য এই বৃত্তি পরীক্ষা চালু হলেও বেসরকারি কোনো বিদ্যালয় বা কিন্ডারগার্টেন এই পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে না। তবে কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো নিজেদের মতো করে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পৃথকভাবে বৃত্তি পরীক্ষার আয়োজন করতে পারবে। যদিও সরকারিভাবে বৃত্তি পরীক্ষা বন্ধ হওয়ার পর থেকেই কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো তাদের নিজেদের মতো করে বিভিন্ন সংগঠন বা অ্যাসোসিয়েশনের নামে পৃথকভাবে এই বৃত্তি পরীক্ষা দীর্ঘ দিন ধরেই চালু রেখেছেন স্কুল মালিকরা।