উত্তাল সময়ে দিনরাত সেবায় আহতদের বাঁচিয়েছেন এনডিএফের ডাক্তাররা

হামিম উল কবির
Printed Edition

জুলাই আন্দোলনের উত্তাল সময়ে ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরামের (এনডিএফ) চিকিৎসকরা দিনরাত সেবা দিয়ে আহতদের বাঁচিয়ে রেখেছেন। এনডিএফের কয়েকজন চিকিৎসকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আহতদের মৃত্যুরোধে জরুরিভাবে রক্ত সরবরাহের ব্যবস্থাও তারা করেছেন। একই সাথে ওষুধ-গজ-ব্যান্ডেজসহ ইমপ্লান্টের ব্যবস্থ্ওা করেছেন নিজেদের উদ্যোগে। ১৭ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত শত শত আহত ঢাকা মেডিক্যালে এসে ভিড় করলে প্রথমে চিকিৎসা পাচ্ছিলেন না জুলাই যোদ্ধারা। আওয়ামী সমর্থক স্বাচিপের চিকিৎসকরা জুলাই আহতদের চিকিৎসা দিচ্ছিল না, বরং বাধার সৃষ্টি করে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কিছু চিকিৎসক যখন সর্বশক্তি দিয়ে আহতদের চিকিৎসা দিচ্ছিলেন তখনই হুমকি আসে স্বাচিপের ডাক্তারদের কাছ থেকে। ‘বদলি করে দেয়া হবে, আন্দোলনকারীদের সহযোগিতার জন্য জেলে যেতে হবে ইত্যাদি’ বলে ভয় দেখাত। ঠিক তখনই এনডিএফের চিকিৎসকরা একটি টিমের অধীনে যোগ দেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। অর্থোপেডিক ও নিউরোসার্জারির ডাক্তাররা হঠাৎ করে এসে অ্যাপ্রন পরে এসে শুরু করে দেন আহতদের চিকিৎসা। এই সহযোগিতার কারণে অনেক রোগী বেঁচে যায়।

এনডিএফ তাদের চিকিৎসকদের কয়েকটি টিমে ভাগ করে বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠায় যেন চিকিৎসা ব্যাহত না হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকদের রুটিনে চিকিৎসা ও সার্জারির ব্যবস্থা করা হয় যেন, চিকিৎসকদের ক্লান্তি না আসে। একটি গ্রুপের নির্দিষ্ট সময় শেষ হলে আরেকটি গ্রুপ এসে চিকিৎসা শুরু করে।

শুরুতে নিজেদের পকেট থেকে টাকা দিয়ে ওষুধ, গজ-ব্যান্ডেজ ও ইমপ্লান্টের ব্যবস্থা করা হলেও এক সময় তাদের নিজেদের ফান্ডের ঘাটতি পড়ে। এরপরই কেন্দ্রীয় জামায়াতে ইসলামী ছুটে আসে ফান্ড নিয়ে। জামায়াতের নির্দেশনা ছিল, ‘আন্দোলনে প্রত্যেক আহতকে চিকিৎসা দিতে হবে। চিকিৎসকদের সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা ডা: আতিয়ার রহমান বলেন, পুলিশের গুলির ভয়ে যেসব আহতকে হাসপাতালে নেয়া যায়নি, তাদের বিশেষ বিশেষ স্থানে স্থাপিত চিকিৎসা সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। পরে সুযোগ বুঝে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ অন্যান্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে অস্ত্রোপচারের জন্য। এ জন্য সারাক্ষণ ৯টা অ্যাম্বুলেন্স দায়িত্ব পালন করেছে।

গুলিতে আহতদের ক্ষতস্থানে ড্রেসিং করা, পেটে ঢুকে যাওয়া গুলি বের করা, পেট ফুটো হয়ে গিয়ে তরল বের হয়ে গেলে সেই স্থানটি সেলাই করে দেয়ার কাজটি এনডিফের ডাক্তাররা দ্রুততার সাথে করে দেয়ায় মৃত্যুর সংখ্যা যেমন কমেছে, তেমনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ প্রথমে অসহযোগিতা না করলে, একজন চিকিৎসকের শপথ অনুযায়ী দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে চিকিৎসা দিতে পারলে পঙ্গু ও নিহতের সংখ্যা আরো কমানো যেত। চিকিৎসকরা বলছেন, অনেক মূল্যবান জীবন ঝড়ে যাওয়ার জন্য স্বাচিপের চিকিৎসকরা দায়ী এবং তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।

চিকিৎসকরা জানান, প্রথমে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল প্রশাসন সহযোগিতা না করলেও পরে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আসাদ আহতদের চিকিৎসায় সহযোগিতা করেন। কিন্তু স্বাচিপের ডাক্তাররা শুরু থেকে শেষপর্যন্ত আন্দোলনে আহতদের সব ধরনের চিকিৎসা দিতে অনীহা প্রকাশ করেছে।

জুলাই আন্দোলনের পুরোটা সময় চিকিৎসকদের সাথে সাথে বিশাল দায়িত্ব পালন করেছেন রিদম ব্লাড সেন্টার। তারা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের জরুরি বিভাগের সামনে তাবু টানিয়ে রক্ত সংগ্রহ ও রক্ত সরবরাহ করে আহতদের বেঁচে থাকতে সহায়তা করেছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, জুলাই আন্দোলনে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আহতদের সেবা দেয়া, আহতদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে অন্যান্যের সাথে হিজড়াদের সম্প্রদায়ের একটি দলের সহযোগিতাও ছিল।

ডা: আতিয়ার রহমান অর্থের প্রসঙ্গে বলেন, নিজেদের অর্থ ফুরিয়ে গেলে যখন চিকিৎসকরা অন্ধকার দেখছিলেন তখন কেন্দ্রীয় জামায়াতের ফান্ডে আহতদের চিকিৎসা শুরু হয়। নগরীর কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালকে নির্দেশ দেয়া হয় আহতরা এলে চিকিৎসা দিয়ে সারিয়ে তুলতে এবং তাদের কাছে যেন কোনো অর্থ চাওয়া না হয়। সব অর্থ জামায়াত সাথে সাথে সরবরাহ করেছে। তবে অর্থ সরবরাহের বিষয়টি প্রকাশ্যে সবার জানা ছিল না বলে ডা: মো: আতিয়ার রহমান বলেন। কয়েকজন চিকিৎসকই ব্যাপারটি জানতেন।