পায়রা বন্দর (পটুয়াখালী) সংবাদদাতা
পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপকূলীয় অঞ্চলের পশুরীবুনিয়া গ্রাম। এই গ্রামেরই এক যুবক রাজিব কর্মকার। বেকারত্বের দেয়াল ভেঙে নিজের অদম্য ইচ্ছাশক্তিতে গড়ে তুলেছেন স্বপ্নের সাম্রাজ্য। মাছ, মুরগি ও গাভীপালনের সমন্বয়ে গড়ে তুলেছেন ‘রিতিকা ও রুদ্র খামারবাড়ি’। এই খামার থেকেই এখন তার মাসিক আয় প্রায় দুই লাখ টাকা।
রাজিবের সাফল্যের গল্প শুরু হয় বছর কয়েক আগে। বাড়িতে ছোট্ট পরিসরে একটি মুরগির খামার দিয়ে যাত্রা শুরু তার। মুরগি পালন ও বিক্রি থেকে প্রাপ্ত অর্থ তাকে স্বাবলম্বী হওয়ার পথ দেখায়। এরপর অল্প পুঁজি আর দৃঢ় মনোবল নিয়ে শুরু করেন নিজের ব্যবসা। স্থানীয় বাজারে নিজের খামারের মুরগি বিক্রির পাশাপাশি শুরু করেন মুরগি ও মাছের ফিডের ব্যবসা। সফলতায় প্রসারিত হয় তার ব্যবসা। এখন তিনি লেয়ার, ব্রয়লার, সোনালি মুরগি ও মাছের ফিডের একজন ডিলার।
পৈতৃক ৬০ শতাংশ জমিকে কাজে লাগিয়ে রাজিব গড়ে তুলেছেন সমন্বিত খামার। খামারের চারপাশজুড়ে সারি সারি সুপারির বাগান, নানান রকমের ফল ও সবজির চাষ। পুকুরের ওপর বাঁশ ও সুপারি গাছ দিয়ে তৈরি করা মাচায় পালন করা হয় বিভিন্ন জাতের মুরগি। আর মাচার নিচের পুকুরে চাষ হয় পাঙ্গাশ, শিং ও মাগুর মাছ। মাছ ও মুরগির এই সমন্বিত চাষই তার আয়ের মূল উৎস।
খামারের ম্যানেজার রাহাত মিয়া জানান, তাদের খামারের মুরগি ও ডিম উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে সরবরাহ করা হয়। পাশাপাশি পাঙ্গাশ, শিং ও মাগুর মাছ স্থানীয় বাজারে বিক্রি হয়।
রাজিব কর্মকার তার সাফল্যের কথা বলতে গিয়ে বলেন, ‘তিলে তিলে এই খামার গড়ে তুলেছি। মাছ, মুরগি, সবজি ও ফলমূলের এই সমন্বিত প্রকল্প থেকে প্রতি মাসে প্রায় দুই লাখ টাকা লাভ হয়।’ তিনি আরো যোগ করেন, ‘উপজেলা পর্যায় থেকে কোনো সহায়তা বা পরামর্শ নেয়া হয়নি। সরকারি সহায়তা পেলে আরো বড় পরিসরে কাজ করতে পারব।’ তরুণদের তিনি চাকরির পেছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হওয়ার পরামর্শ দেন।
রাজিবের এই সাফল্য এলাকার তরুণ ও বেকার যুবকদের জন্য হয়ে উঠেছে অনুপ্রেরণার উৎস। তার কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে অনেকেই এখন মাছ ও মুরগি চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
রাঙ্গাবালী উপজেলা সামুদ্রিক মৎস্য কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন রাজু বলেন, ‘মৎস্য খামার বেকারদের স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। চাকরির পেছনে না ছুটে তরুণদের রাজিব কর্মকারের মতো এগিয়ে আসা উচিত।’
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা: মো: শাহজাহান আলী বলেন, ‘রাজিব কর্মকারের সাথে যোগাযোগ করে আমাদের দফতরের সব সুযোগ-সুবিধার আওতায় আনা হবে তার খামারকে। এ ধরনের খামার স্থানীয় ও জাতীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে এবং দারিদ্র্যদূরীকরণে সহায়ক হয়।’
রাজিব কর্মকারের এই যাত্রা প্রমাণ করে যে, দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি, পরিশ্রম ও সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে গেলে উপকূলীয় অঞ্চলের মতো প্রতিকূল পরিবেশেও সফলতা পাওয়া সম্ভব। তার সাফল্য শুধু তার নিজের জীবনই বদলে দেয়নি, তিনি নিজে হয়ে উঠেছেন অনেকের জন্য পথচলার প্রেরণা।