মার্কিন শুল্কের ধাক্কায় এশিয়ার উৎপাদন খাতে ধস

Printed Edition

রয়টার্স

  • অপ্রতুল মার্কিন চাহিদায় এশিয়ার উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে
  • গতি হারিয়েছে চীনের অর্থনীতি, পিএমআই ধীর প্রবৃদ্ধি দেখাচ্ছে
  • ট্রাম্প-শি শুল্ক যুদ্ধবিরতি সীমিত স্বস্তি দিলেও গভীর সমস্যাগুলো বিদ্যমান

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্ক নীতির প্রভাবে এশিয়ার রফতানিনির্ভর উৎপাদন খাত বড় ধরনের চাপের মুখে পড়েছে। গত অক্টোবর মাসে প্রকাশিত বিভিন্ন ব্যবসায়িক জরিপ ও শিল্প বিবরণে দেখা গেছে, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, ভিয়েতনামসহ এশিয়ার প্রধান উৎপাদনশীল দেশগুলোতে নতুন অর্ডার কমে গেছে, যার ফলে কারখানাগুলোর কার্যক্রমে ধীরগতি দেখা দিয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ শুল্ক আরোপের ফলে এশিয়ার রফতানিকারকরা মার্কিন বাজারে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে। ট্রাম্প প্রশাসন চীনা পণ্যের ওপর গড় শুল্কহার ৫৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪৭ শতাংশে নামালেও, প্রযুক্তি ও ইলেকট্রনিক্স খাতে শুল্কের হার এখনো অনেক বেশি। এর ফলে চীনের পাশাপাশি দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের সেমিকন্ডাক্টর, গাড়ি ও যন্ত্রাংশ খাতেও অর্ডার কমেছে।

চীনের জিয়াংসু প্রদেশের একটি ইলেকট্রনিক্স কারখানার ব্যবস্থাপক বলেন, ‘আমরা আগের মতো অর্ডার পাচ্ছি না। মার্কিন ক্রেতারা এখন বিকল্প উৎস খুঁজছে।’ দক্ষিণ কোরিয়ার একটি গাড়ি যন্ত্রাংশ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, তারা উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে এবং কর্মী ছাঁটাইয়ের কথা ভাবছে।

অন্য দিকে কিছু দেশ যেমন- ভিয়েতনাম, ভারত ও ইন্দোনেশিয়া এই সঙ্কটকে সুযোগ হিসেবে দেখছে। তারা উৎপাদন স্থানান্তরের মাধ্যমে নতুন অর্ডার পাওয়ার চেষ্টা করছে। তবে উচ্চ উৎপাদন খরচ, অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা এবং মার্কিন শুল্ক কাঠামোর অনিশ্চয়তা তাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জাপানে গাড়ি ও ধাতব রফতানির ওপর ৭.৫ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, যা দেশটির রফতানি প্রবৃদ্ধিকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করছে। জাপানের অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশাধিকার সীমিত হলে আমাদের শিল্প খাত পুনর্গঠন করতে হবে।’

অক্সফোর্ড ইকোনমিকসের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, এশিয়ার উৎপাদন খাত এখন একটি ‘পুনর্বিন্যাসের দশা’ পার করছে, যেখানে কিছু দেশ লাভবান হলেও সামগ্রিকভাবে আঞ্চলিক অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা বাড়ছে। এই পরিস্থিতি শুধু রফতানি নয়, কর্মসংস্থান, বিনিয়োগ এবং প্রযুক্তি হস্তান্তরের ওপরও প্রভাব ফেলছে।

ট্রাম্প ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত সাম্প্রতিক বৈঠকে বাণিজ্য উত্তেজনা কমানোর কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি আগামী এপ্রিল মাসে চীন সফর করবেন এবং শি জিনপিংও যুক্তরাষ্ট্রে সফর করবেন। তবে টিকটক বা এনভিডিয়া চিপ বিক্রির বিষয়ে কোনো চুক্তি হয়নি।

বিশ্লেষকদের মতে, সামরিক ও কূটনৈতিক উত্তেজনার পাশাপাশি বাণিজ্যিক অনিশ্চয়তা এশিয়ার শিল্প খাতকে দীর্ঘমেয়াদে প্রভাবিত করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতি যদি আরো কঠোর হয়, তাহলে এশিয়ার রফতানিনির্ভর অর্থনীতিগুলোকে বিকল্প বাজার ও উৎপাদন কৌশল খুঁজতে হবে। এই পরিস্থিতিতে এশিয়ার দেশগুলোকে প্রযুক্তি উন্নয়ন, অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধির কৌশল এবং বহুমুখী বাণিজ্য অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার ওপর জোর দিতে হবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।