নিত্য যানজটে নাকাল সিরাজগঞ্জ শহরবাসী

নুরুল ইসলাম রইসী, সিরাজগঞ্জ
Printed Edition
সিরাজগঞ্জ শহরের বিভিন্ন সড়কে এভাবেই যানজট লেগে থাকে : নয়া দিগন্ত
সিরাজগঞ্জ শহরের বিভিন্ন সড়কে এভাবেই যানজট লেগে থাকে : নয়া দিগন্ত

রিকশা অটোরিকশা ইজিবাইক ও সিএনজির শহর এখন সিরাজগঞ্জ। পৌর শহরের প্রধান প্রধান সড়কে যত্রতত্র মোটর বাইকসহ গাড়ি পার্কিং, আইন না মানা, ফুটপাথ দখল করে দোকানের পসরা বসানো ইত্যাদি কারণে যানজটে নাকাল হচ্ছেন শহরবাসী।

শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে প্রতিদিনই যানজটে দুর্ভোগ পোহাতে হয় সর্বসাধারণকে। বিশেষ করে সকাল ১০টা থেকে বিকেল (ইফতারের সময়) পর্যন্ত যানজট প্রকট আকার ধারণ করে। রোজার ঈদকে সামনে রেখে সদর উপজেলার গ্রামাঞ্চল থেকে অচেনা মৌসুমি রিকশাওয়ালারা রিকশা নিয়ে শহরে আসেন অতিরিক্ত আয়ের উদ্দেশ্যে। ফলে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি যানবাহনের কারণে নাকাল হন শহরবাসী।

সরেজমিন দেখা যায়, পৌর এলাকার কাঠেরপুলে চার রাস্তার মোড়, শহরের চৌরাস্তা মোড়, খান মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের সামনে, ইডিয়ট ব্রিজের পশ্চিম চৌরাস্তা, দরগাহ পট্টি চাররাস্তার মোড়, বাজার স্টেশন সাত রাস্তার মোড়, রেলগেট চার রাস্তার মোড় এবং শহরের প্রধান শহীদ সোহরাওয়ার্দী সড়ক পুরোটাতেই যানজট লেগে থাকে। এ সড়কের বিভিন্ন মার্কেটের সামনে সারি সারি অথবা আড়াআড়িভাবে শত শত মোটরবাইক পার্কিং করে রাখার কারণে যানজটের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। এ ছাড়া ট্রাফিক আইন অমান্য করার প্রবনতা এবং বেপরোয়া গতিতে যান চালানোর কারণে মাঝে মধ্যেই ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটছে।

জানা গেছে, ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে ট্রাফিক পুলিশের চেইন অফ কমান্ড ভেঙে পড়েছে। পৌরসভায় জনপ্রতিনিধি নেই। প্রশাসক দিয়ে চলছে পৌরসভা। প্রশাসকের এটি অতিরিক্ত দায়িত্ব হওয়ায় তাকে ট্রাফিক সিস্টেম নজরদারিতে রাখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ভুক্তভোগীরা জানান, শহরের মাঝখানে একাধিক অবৈধ সিএনজিচালিত অটোরিকশার স্ট্যান্ড, ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক স্ট্যান্ড এবং যেখানে সেখানে যাত্রী ওঠানো-নামানোর কারণে এই যানজট আর দুর্ভোগের সৃষ্টি হচ্ছে।

ভুক্তভোগী পথচারীরা জানান, উল্টোপথে গাড়ি চালালেও দেখার কেউ নেই।

সিরাজগঞ্জ পৌরসভার ট্রাফিক বিভাগ ও জেলা ট্রাফিক পুলিশ সূত্র জানায়, ছোট্ট এ শহরে রাস্তার তুলনায় অটোরিকশা-ইজিবাইকের সংখ্যা অনেক বেশি। আইনগত ব্যবস্থা নিতে গেলেই তদবির বা প্রভাব খাটানোর চেষ্টা চলে। ফলে দায়িত্বরতরা সঠিকভাবে কাজ করতে পারছে না।

উল্লাপাড়া থেকে আসা হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ী আছির উদ্দিন বলেন, সপ্তাহে দুই-তিনদিন কেনাকাটা করতে শহরে আসতে হয়। এসেই পড়তে হয় নানা বিড়ম্বনায়। সময়ের কাজ সময়ে করে ফিরে যেতে পারি না। একই রকম কথা জানান বেজগাঁতি থেকে আসা ওয়ার্কশপ ব্যবসয়াী সেলিম হোসেন ও বেলকুচি উপজেলার রাজাপুর গ্রামের ব্যবসায়ী কেরামত প্রামানিক।

সিরাজগঞ্জ পৌরসভার সচিব রফিকুল ইসলাম বলেন, ফুটপাথ পরিস্কার ও যানজট দূরীকরণে সম্প্রতি জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও পৌর প্রশাসন যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করে কড়া বার্তা দিয়েছে, যাতে রমজানে ও ঈদকে ঘিরে মানুষের দুর্ভোগ কিছুটা হলেও লাঘব হয়। তাছাড়া শহরের যানজট নিরসনে পৌরসভার পক্ষ থেকে বিভিন্ন পয়েন্টে দুই শিফটে অতিরিক্ত ৩৩ জন দায়িত্ব পালন করছে বলে জানায় পৌর কর্তৃপক্ষ।

একই দাবি করেন সিরাজগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক সাইফুল ইসলাম। তিনি জানান, যানজট নিরসনে শহরের সাতটি পয়েন্টে দুই শিফটে ২২ জন ট্রাফিক পুলিশ দায়িত্ব পালন করছেন।

সিরাজগঞ্জ পৌর প্রশাসক স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন সড়কে রাস্তার মধ্যে রশি টানিয়ে বিভাজন তৈরি করা হয়েছে, যাতে যানবাহনে কিছুটা শৃঙ্খলা ফিরে আসে। মাঝে মধ্যেই অভিযান চালিয়ে আমরা ভাসমান দোকানপাট তুলে দিই। যানজট নিরসনে সবার আন্তরিকতা দরকার।