আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আদালত অবমাননার মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবীর দায়িত্ব থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন আমিনুল গনি (টিটু)। তার জায়গায় মো: আমির হোসেনকে এই মামলায় রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
গতকাল বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শুনানির সময় আমিনুল গনি দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর আবেদন করলে ট্রাব্যুনাল তা মঞ্জুর করে।
শুনানির শুরুতে ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী উপস্থিত আছেন কি না জানতে চান। এ সময় আমিনুল গনি ডায়াসে দাঁড়িয়ে জানান, তিনি মামলার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে এসেছেন এবং প্রসিকিউশনের পর যুক্তি উপস্থাপন করতে চান। তবে ট্রাব্যুনাল বলেন, এই ক্লায়েন্ট (শেখ হাসিনা) সম্পর্কে আপনার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেয়া মন্তব্য আলোচনায় এসেছে। এখন আপনি তার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরতে চাইছেন, এটা জনমনে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
জবাবে আমিনুল গনি নিজেকে একজন সৎ আইনজীবী উল্লেখ করে পেশাগত সততা প্রমাণ করার সুযোগ চান।
এ পর্যায়ে ট্রাইব্যুনাল বিষয়টিকে নৈতিকতা ও ন্যায়বিচারের প্রশ্ন হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে করা মন্তব্যের প্রেক্ষাপটে এ মামলায় তার সম্পৃক্ততা এথিক্যালি গ্রহণযোগ্য নয়।
তখন আমিনুল গনি বলেন, নৈতিকতার দিক থেকে আমি আর শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হিসেবে থাকতে পারি না। তবে তাকে কেন এই দায়িত্বে রাখা হয়েছিল, সে প্রশ্নও তোলেন তিনি। জবাবে ট্রাইব্যুনাল জানায়, তারা আগে বিষয়টি জানতেন না। এর পর ট্রাইব্যুনাল আমিনুল গনিকে প্রশ্ন করেন, ‘আপনি কি শেখ হাসিনাকে নিয়ে পোস্ট দিয়েছিলেন? তিনি তা স্বীকার করে বলেন, আমি একজন সৎ আইনজীবী হিসেবে নিজের দায়িত্ব পালন করতে চাই।
ট্রাইব্যুনাল তখন বলেন, ‘আপনি একজন দক্ষ আইনজীবী। আমাদের অন্য জায়গায় আপনার প্রয়োজন হতে পারে।
এর পর আমিনুল গনি নিজ উদ্যোগে মামলাটি থেকে সরে দাঁড়ানোর আবেদন করলে ট্রাইব্যুনাল তা মঞ্জুর করে। পরে প্রসিকিউশন জানায়, মো: আমির হোসেনকে শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, আদালত অবমাননার মামলায় সম্প্রতি শেখ হাসিনার পক্ষে ‘স্টেট ডিফেন্স কাউন্সিল’ হিসেবে আমিনুল গনিকে নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু অভিযোগ উঠে, তিনি অতীতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে শেখ হাসিনার ফাঁসির দাবিতে একটি পোস্ট দিয়েছিলেন।
এই প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের বিশেষ উপদেষ্টা টবি ক্যাডম্যান গত মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, আসামির পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী নিয়োগের ক্ষেত্রে এমন মানদণ্ড থাকা উচিত, যাতে তিনি যথাযথ ও স্বাধীনভাবে আদালতে প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন। এর পর দিনই আমিনুল গনি নিজেকে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করে নেন।