বেনগাজিতে আটকে থাকা অনেক বাংলাদেশী ফিরতে পারছেন না দেশে

মনির হোসেন
Printed Edition

মানবপাচারের শিকার হয়ে লিবিয়ার বেনগাজিতে আটকে থাকা শত শত বাংলাদেশীর দিন কাটছে মানবেতরভাবে। তাদের মধ্যে অনেকেই কাজ না পেয়ে ভীষণ কষ্টের মধ্যে রয়েছেন। উপায় না পেয়ে তারা এখন স্বেচ্ছায় বাংলাদেশে ফিরে আসতে চাইছেন। কিন্তু যথাসময়ে ফ্লাইট না পাওয়ার কারণে সেটিও পারছেন না। এমন পরিস্থিতিতে বেনগাজি থেকে যারা স্বেচ্ছায় দেশে ফেরার অপেক্ষার প্রহর গুনছেন তাদের দ্রুত ফেরানোর ব্যবস্থা করানোর জন্য লিবিয়ার ত্রিপোলির বাংলাদেশ দূতাবাসের কাছে জোর দাবি জানানো হয়েছে।

এ দিকে ত্রিপোলির বাংলাদেশ দূতাবাসও (শ্রম) বসে নেই। তারা বেনগাজিসহ লিবিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে আটকে থাকা হাজার হাজার অসহায় প্রবাসী বাংলাদেশীদের দেশে ফেরাতে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) সাথে নিয়মিত যোগযোগ অব্যাহত রেখে চলেছেন। দূতাবাস সংশ্লিষ্টরা এই প্রসঙ্গে আশা করে বলছেন, আগামী সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে দুই থেকে তিনটি ফ্লাইটে বেশকিছু বাংলাদেশীকে দেশে ফেরত পাঠানো সম্ভব হবে।

লিবিয়ার বেনগাজিসহ বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থান করা বাংলাদেশীদের কারো কারো সাথে যোগাযোগ করে জানা গেছে, বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গড়ে ওঠা আদম পাচারকারী চক্রের সদস্যরা ইউরোপের দেশ ইতালিতে যাওয়ার স্বপ্ন দেখিয়ে প্রথমে তাদের দুবাইতে নিয়ে যায়। দুবাই যাওয়ার পর গ্রিন সিগন্যাল পাওয়ার পরই তাদের একাধিক গ্রুপে ভাগ করে লিবিয়ার বেনগাজির উদ্দেশ্য ফ্লাইটে তুলে দেয়া হয়। ওই দেশে যাওয়ার পরই সাগরপাড়ের নির্দিষ্ট এলাকার একেকটি ক্যাম্পে তাদের রাখার ব্যবস্থা করা হয়। এরপর সুযোগ বুঝে এক সময় তাদের চুক্তি মোতাবেক ইতালির উদ্দেশ্যে কাঠের ট্রলারে তুলে দেয়া হয়। এদের মধ্যে যারা ইতালি পাড়ি জমাতে পারছে তারা নতুন জীবন ফিরে পাচ্ছেন। টেলিফোন করে স্বজনদের খুশির খবর জানাচ্ছেন। আর যারা সাগরে লিবিয়ান কোস্টগার্ডের অভিযানে ধরা পড়ে যাচ্ছেন তাদের আবার ঠিকানা হচ্ছে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএমর সহায়তায় সেই লিবিয়ান সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকা বেনগাজিতেই। লিবিয়ায় বাংলাদেশীদের প্রবেশ নিষেধ থাকলেও মানবপাচারকারী চক্রের সদস্যদের মাধ্যমে প্রতিদিনই দুবাই হয়ে দেশটিতে বাংলাদেশীরা পাড়ি দিয়ে পদে পদে বিপদের মধ্যে পড়ছেন বলে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।

লিবিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে বেনগাজিতে আটকে আছে কয়েক শত বাংলাদেশী। যাদের কারো কাছেই নেই বাংলাদেশী পাসপোর্ট। তারা এখন সেখান থেকে বাংলাদেশ দূতাবাসের কাছে দেশে ফেরানোর জন্য দ্রুত ফ্লাইট দেয়ার জন্য দেন দরবার করছেন। এ সময় তারা এ-ও বলছেন, তারা বেকার। অনেক কষ্টে আছেন। তাদের দেশে ফিরতেই হবে। এর মধ্যে পারভেজ ইসলাম নামের একজন লিবিয়া প্রবাসী বাংলাদেশী দূতাবাসের উদ্দেশ্য ফেসবুকে লেখেন, ‘যারা বেনগাজি থেকে স্বেচ্ছায় বাংলাদেশে যেতে চায়, তাদের একটু তাড়াতাড়ি ফ্লাইট দিন। অনেক কষ্টে আছি। পাসপোর্ট ছাড়া চাকরিতেও ঢুকতে পারছি না ভাই।’

গত সোমবার রাতে লিবিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাসের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, বেনগাজিসহ লিবিয়ার বিভিন্ন স্থানে আটকে থাকা অসহায় বাংলাদেশীদের দেশে ফেরাতে বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম শুরু করেছি। ইতোমধ্যে দুই হাজারের মতো বাংলাদেশী স্বেচ্ছায় রেজিস্ট্রেশন করেছেন। তাদের ফেরাতে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএমের সাথে এরই মধ্যে দু’বার আমরা বৈঠক করেছি। পাশাপাশি বেনগাজি আইওএমের সাথেও নিবিড়ভাবে যোগাযোগ করছি। আশা করছি এক মাসের মধ্যে অর্থাৎ সেপ্টেম্বর মাসে কমপক্ষে দুই থেকে তিনটি ফ্লাইট হবে। এক প্রশ্নের উত্তরে ওই কর্মকর্তা বলেন, লিবিয়ায় যারা সমস্যায় রয়েছেন তাদের সবার ব্যাপারেই আমরা কাজ করছি। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, লিবিয়ায় বাংলাদেশীদের আসা নিষেধ। তারপরও তারা মানবপাচারকারী চক্রের খপ্পরে পড়ে আসছেন। মূলত বেনগাজি হয়ে লিবিয়ায় আসতে হয়। যারা ইতালি যাওয়ার পথে ধরা পড়েছেন তাদের কারো কাছেই পাসপোর্ট নেই। তারাই এখন স্বেচ্ছায় দেশে ফিরতে রেজিস্ট্রেশন করছেন। বেনগাজি হলো লিবিয়ার ত্রিপোলি সরকারের প্রতিপক্ষ। তারা ত্রিপোলি সরকারের নিয়ন্ত্রণ মানে না।