কোস্ট ফাউন্ডেশনের তথ্য

রোহিঙ্গা কর্মসূচির সাশ্রয়ী বাস্তবায়ন সম্ভব

Printed Edition

বাংলাদেশ বর্তমানে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গণহত্যার শিকার হয়ে পালিয়ে আসা ১১ লাখ ৫৬ হাজার একজন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিচ্ছে। এই অষ্টম বছরেও রোহিঙ্গা সঙ্কট তীব্র তহবিল ঘাটতির মুখোমুখি। ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাত্র ৩৮% প্রয়োজনীয় সহায়তার চাহিদা পূরণ হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের তহবিল হ্রাস এই সঙ্কটকে আরো গভীর করেছে, যা রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে হুমকিস্বরূপ। কোস্ট ফাউন্ডেশন এবং কক্সবাজার সিএসও-এনজিও ফোরাম আয়োজিত ‘সাশ্রয়ী রোহিঙ্গা ব্যবস্থাপনার জন্য চাই স্থানীয় এনজিওদের নেতৃত্ব’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা রোহিঙ্গা মানবিক কাজে সাশ্রয়ী খরচে কার্যক্রম পরিচালনার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। তারা রোহিঙ্গা ব্যবস্থাপনার জন্য বাংলাদেশকে বিশ্বব্যাংকের ঋণসহায়তার সমালোচনা করেন এবং এটিকে মানবিক নীতি এবং বৈশ্বিক স্থানীয়করণ এজেন্ডার সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ বলে অভিহিত করেন। সংবাদ সম্মেলনটি পরিচালনা করেন মোস্তফা কামাল আকন্দ এবং সভাপতিত্ব করেন কোস্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পচরচালক রেজাউল করিম চৌধুরী। কোস্ট ফাউন্ডেশন কর্তৃক পরিচালিত ‘রোহিঙ্গা মানবিক সহায়তার স্থানীয়করণ’ শীর্ষক গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন মো: শাহিনুর ইসলাম। ৩০ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠেয় জাতিসঙ্ঘের রোহিঙ্গা সম্মেলনের আগে ঢাকার প্রেস ক্লাবে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এর মাধ্যমে স্থানীয় এনজিওদের দ্বারা পরিচালিত স্বল্প খরচের রোহিঙ্গা কার্যক্রম পরিচালনা সম্ভব তা বিশ্বনেতাদের জানানোর জন্য এই সংবাদ সম্মেলনটি আয়োজন করা হয়। তার গবেষণার তথ্য বিশ্লেষণ করে মো: শাহিনুর ইসলাম বলেন, মানবিক কারণে বিশ্ববাসীর অনুরোধকে সম্মান জানিয়ে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের গ্রহণ করেছিল; কিন্তু ২০২৫ সালের তহবিল কমে যাওয়ায় এটি এখন একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যার প্রভাব বাংলাদেশকে সহ্য করতে হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা মানবিক কাজে ২০২৪ সালের তহবিলের তুলনায় এ বছর ২৬৩% বেশি তহবিল বৃদ্ধি করেছে। এই অর্থ মূলত বিশ্বব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে করা হয়েছে, যা দেশের জন্য একটি বোঝা।

রেজাউল করিম চৌধুরী গবেষণার ফলাফল উদ্ধৃত করে বলেন, জুন থেকে আগস্ট ২০২৫ পর্যন্ত রোহিঙ্গা শিবিরে মোট ৬৩টি প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে এবং শুরু করা হয়েছে। যেখানে দেখা গেছে যে আন্তর্জাতিক এনজিওগুলোর অনুমোদিত প্রকল্পে সংখ্যা ৪৪.৪০%, যেখানে জাতীয় এনজিওগুলোর ৫০.৮০% এবং স্থানীয় এনজিওগুলোর অনুমোদিত প্রকল্পের সংখ্যা মাত্র ৪.৮%। এর বিপরীতে আন্তর্জাতিক এনজিওগুলোর তহবিলের আকার ৬৩.৬%, জাতীয় এনজিওগুলোর ৩৩.৯% এবং স্থানীয় এনজিওগুলোর মাত্র ২.৫% তহবিল। যদিও জাতীয় এনজিওগুলোর সবচেয়ে বেশি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। তিনি আরো বলেন, জাতিসঙ্ঘ এবং আন্তর্জাতিক এনজিওগুলোর ব্যবস্থাপনা ব্যয় প্রায় ৭০% যেখানে তাদের কর্মসূচির ব্যয় মাত্র ৩০%। তবে স্থানীয় এনজিওগুলো কম খরচে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে, আমাদের এই পদ্ধতিটি বিবেচনা করা উচিত।

মোস্তফা কামাল আকন্দ বলেন, উখিয়া এবং টেকনাফ উপজেলায় রোহিঙ্গা সম্প্রদায় সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে উঠেছে এবং স্থানীয় সম্প্রদায় সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছে। শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখার ক্ষেত্রে সেখানে উত্তেজনা বাড়ছে। আমাদের এই বিষয়টি উপেক্ষা করা উচিত নয়। মো: ইকবাল উদ্দিন বলেন, রোহিঙ্গা সম্প্রদায়কে শুধু মুখে তুলে খাওয়ানোর জন্য রাখা উচিত নয়; আমাদের তাদের মানবসম্পদ হিসেবে ব্যবহার করা উচিত এবং তাদের বিশ্ববাজারের সাথে সংযুক্ত করা উচিত। সুন্দরবন সংরক্ষণ আন্দোলনের নিখিল ভদ্র স্থানীয় এনজিওগুলোর বাস্তবায়নের মাধ্যমে পরিচালনা ব্যয় হ্রাস করে রোহিঙ্গাদের উন্নত এবং টেকসই জীবিকা নির্বাহের আহ্বান জানিয়েছেন। গবেষণার ফলাফলে রোহিঙ্গা প্রতিক্রিয়ার বিদ্যমান ব্যবস্থা পরিবর্তনের সুপারিশ করা হয়েছে এবং স্থানীয়ভাবে পরিচালিত পদক্ষেপ একটি আদর্শ এবং টেকসই সমাধানের ওপর জোর দেয়া হয়েছে। জাতিসঙ্ঘ এবং আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থাগুলোকে পর্যবেক্ষণ এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদানের ভূমিকায় থাকতে হবে, যেখানে স্থানীয় বেসরকারি সংস্থাগুলো স্বল্প খরচের কার্যক্রম পরিকল্পনা করা এবং বাস্তবায়নের জন্য চালিকাশক্তি হিসেবে থাকবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেনÑ দৈনিক আমার দেশ থেকে মো: সালাউদ্দীন এবং ইমরান হোসেন, এইচআরআইডিএ বাংলাদেশ থেকে গোলাম মোর্শেদ এবং জাগোনিউজ২৪.কম থেকে মুসা আহমেদ। বিজ্ঞপ্তি।