পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছেন, বাংলাদেশে গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনের পর ভারত বাস্তবতার সাথে খাপ খাওয়াতে কিছুটা সময় নিচ্ছে। কেননা আগের সরকারের সাথে ভারতের বিশেষ সম্পর্ক ছিল। আমি বিশ্বাস করি, দুই প্রতিবেশী দেশের স্বার্থ গভীরভাবে জড়িত। তাই সম্পর্ক ভালোই হবে। আর এ সম্পর্ক কেবলই শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের ওপর নির্ভর করে না। ভারতের সাথে সম্পর্ক নিয়ে আমাদের অবস্থান পরিষ্কার। পারস্পরিক স্বার্থ ও সম্মানের ভিত্তিতে প্রতিবেশী দেশটির সাথে ভালো সম্পর্ক চায় বাংলাদেশ।
তুরস্কভিত্তিক গণমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ডকে দেয়া সাক্ষাৎকারে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এ সব কথা বলেন। তুরস্কের আন্টালিয়ায় ‘আন্টালিয়া ডিপ্লোমেসি ফোরাম (এডিএফ) ২০২৫’-এ যোগ দিতে উপদেষ্টা সম্প্রতি তুরস্ক গিয়েছিলেন।
ভারত থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, আমরা শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের জন্য ভারতকে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছি। তবে কোনো জবাব পাইনি।
বাংলাদেশের সংবিধান নতুন করে লেখা হচ্ছে কেন প্রশ্ন করা হলে উপদেষ্টা বলেন, সংবিধান পুনঃলিখন নয়, সাংবিধানিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারে কাজ চলছে। এটা নির্ভর করবে রাজনৈতিক দল ও জনগণের ওপর। তাই এটা বলা ঠিক হবে না যে আমরা পুরোপুরি নতুন সংবিধান তৈরি করছি। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হল, সংবিধানের যে সব বিধান কোনো সরকারকে একনায়কতন্ত্রে রূপান্তরিত হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে, সেগুলো বাদ দেয়া উচিত। তিনি বলেন, সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের পর জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কাজ করছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে এই ইস্যুতে আলোচনা চলছে।
বাংলাদেশের এই মুহূর্তের চ্যালেঞ্জ কী- জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ অর্থনীতি। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪২ বিলিয়ন ডলার থেকে কমে ২০ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। আগের সরকারের অনেক নেতৃবৃন্দ ও কর্মকর্তারা বিপুল অর্থ সম্পদের মালিক হয়েছে। অনেক অর্থ বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। গণ-অভ্যুত্থানের পর তারা এখন দেশের বাইরে আশ্রয় নিয়েছে। ব্যাংকগুলো কার্যত লুটপাট হয়েছে। এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেতৃত্বে দেশের ব্যাংকিং খাতকে পুনরুদ্ধারের কাজ চলছে। এ পর্যন্ত কিছু অগ্রগতি হয়েছে। আগামী মাসগুলোতে ব্যাংক খাত শক্তিশালী হবে বলে আশা করছি।
সাক্ষাৎকারে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক আরোপ বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের জন্যও স্থগিত হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে ইস্যুটির একটি সন্তোষজনক সমাধানের জন্য সরকার কাজ করছে। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সক্রিয় রয়েছে।