চট্টগ্রামের রাউজানে কাগতিয়া মাইজপাড়া তালীমুল কুরআন মাদরাসা ও দারুল ইয়াতামা দখলের অভিযোগ উঠেছে মুনিরিয়া যুব তাবলীগ কমিটির সভাপতি মুনির উল্লাহর বিরুদ্ধে। নিজের পিতাকে ‘গাউছুল আজম’ ‘খলিলুল্লাহ’ দাবি করা, ‘পীরের নামে জমি লিখে দিলেই মিলবে বেহেস্তের টিকিট’সহ নানা বিতর্কের জন্ম দেয়ায় মুনিরিয়া যুব তাবলীগ কমিটির এ নেতার বিরুদ্ধে রয়েছে অসংখ্য জায়গা দখল, হামলা-মারধর, হত্যা এবং ফ্যাসিস্ট সরকারের সাথে আঁতাত করে নানা অপতৎপরতার অভিযোগ। শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে ৫০৮টি খতমে কুরআন পাঠ কর্মসূচি পালন করে মনির উল্লাহ আলোচনায় আসেন। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর লোক পরিচয় দিয়ে তিনি হয়ে যান অপ্রতিরোধ্য। ফলে তার অত্যাচার, নিপীড়ন ও শোষণে এলাকার মানুষ ছিল অসহায় এমন অভিযোগ মুখে মুখে।
২০১০ সালের ৯ এপ্রিল হাটহাজারির ছিপাতলী মাদরাসার মুহাদ্দিস ও ইসলামী ফ্রন্ট নেতা মাওলানা শফিউল আলম নিজামীর পায়ের রগ কেটে দেয়ার পর আলোচনায় আসে মুনিরিয়া যুব তাবলীগ কমিটি নামে সংগঠনটি। একই বছর ১৪ মে সংগঠনটির সমর্থকদের সাথে ইসলামী ছাত্রসেনার কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এতে ইসলামী ছাত্রসেনার কর্মী ও মাদরাসা ছাত্র নঈম উদ্দিন (১৫) নিহত হন। দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় রাউজানের কাগতিয়া বিনাজুরি এলাকায় অসংখ্য মানুষের জায়গা-জমি, বসতঘর দখল করার অভিযোগ উঠে সংগঠনটির বিরুদ্ধে। ২০১৯ সালে মোহাম্মদ মোজাম্মেল নামে এক মুক্তিযোদ্ধাকে মারধর করার কারণে রাউজানের অধিবাসীরা সংগঠনটির ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে এলাকা থেকে তাদের বিতাড়িত করেন। গত বছরের ৫ আগস্টের পর মুনিরিয়া যুব তাবলীগ কমিটির সভাপতি মুনির উল্লাহ তার দলবল নিয়ে স্থানীয় কয়েক বিএনপি নেতাদের ওপর ভর করে এলাকায় ফিরেন। এরআগে ২০০৭ সালে তিনি আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ফজলে করিমের হাত ধরে রাউজানে আস্তানা গাড়েন।
এলাকায় ফিরে মাদরাসা দখল
গত ৪ ডিসেম্বর রাউজানে বিনাজুরী এলাকায় কাগতিয়া মাইজপাড়া তালীমুল কুরআন মাদরাসা ও দারুল ইয়াতামা নামে এই মাদরাসাটিতে ভাঙচুর করে দখলে নেয় মুনিরিয়া যুব তাবলীগ কমিটি। এরপর থেকেই ওই মাদরাসার সব কার্যক্রম ওই কমিটির নির্দেশে চলছে। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির সব টাকা নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে অভিযুক্তরা। এ ঘটনায় গত ১০ মার্চ শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি জামাল হোসেন।
জানা যায়, এ ঘটনায় গত ৭ ডিসেম্বর মুনিরিয়া যুব তাবলীগ কমিটির মুনির উল্লাহ, সোলায়মান, বোরহান, শাহাদাতসহ ১৩ জনের নামে ও অজ্ঞাত ৮-১০ জনের নামে রাউজান থানায় মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো: জামাল হোসেন এ অভিযোগ করেন। কিন্তু রাউজান থানা এ ঘটনায় কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এ কারণে নিজেদের প্রভাব খাটিয়ে বর্তমানে মাদরাসাটির শিক্ষকদের জিম্মি করে রেখেছে সংগঠনটির সদস্যরা।
মাদরাসার সভাপতি জামাল হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, আমি ২৬ বছর ধরে এই মাদরাসা পরিচালনা করে আসছি। মাদরাসা ভবনটি আমাদের পারিবারিক সম্পত্তির ওপর নির্মিত হয়েছে। হঠাৎ করেই মুনিরিয়া যুব তাবলীগের লোকজন নিজেদের ট্রাস্টি বোর্ডের নামে পরিচালনার কথা বলে দখলের অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। তিনি আরো বলেন, গত ৪ ডিসেম্বর তারা বেআইনিভাবে মাদরাসায় প্রবেশ করে সাইনবোর্ড ভাঙচুর করে নিজেদের সাইনবোর্ড লাগায়। পাশাপাশি তাদের নির্দেশে মাদরাসার সব কার্যক্রম পরিচালনা করতে মাদরাসার অধ্যক্ষকে হুমকি দিয়ে যায়। তারা অধ্যক্ষের কাছ থেকে জোরপূর্বক মাদরাসার সমস্ত অর্থ ও হিসাব-নিকাশ নিয়ে যায়। মাদরাসার অন্যান্য শিক্ষকদেরও জিম্মি করে রেখেছে তারা।
জামাল হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগের আশ্রয়ে থেকে এই মুনিরিয়ার লোকজন এলাকায় মানুষের জমি দখল করেছে অনেক। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মামলা রয়েছে। তাদের কাজই হচ্ছে নিজেদের প্রভাব খাটিয়ে জোরপূর্বক অন্যের জায়গা প্রতিষ্ঠান দখল করা। তাদের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করলে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে। তাই আমরা শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবরও অভিযোগ জানিয়েছি।
জামাল হোসেনের অভিযোগ, এশাতুল উলুম কাগতিয়া মাদরাসার মাঠে দীর্ঘদিন ধরে একটি শহীদ মিনার ছিল। গত ৪ ডিসেম্বর মাদরাসাটি জোরপূর্বক দখল করে শহীদ মিনারটি তারা গুঁড়িয়ে দেয়।
তবে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মুনিরিয়া যুব তাবলীগ কমিটির মহাসচিব প্রফেসর ড. মো: আবুল মনসুর নয়া দিগন্তকে বলেন, এই মাদরাসাটি দীর্ঘদিন ধরে কাগতিয়া দরবার পরিচালনা করে আসছে। মাঝখানে ৫-৬ বছর স্থানীয় সাবেক এমপি এ বি এম ফজলে করিম গণ্ডগোল করার কারণে আমরা যখন দূরে ছিলাম, তখন মাস্টার জামাল মাদরাসার সাথে শত্রুতা শুরু করে। এই সুবাদে সে মাদরাসা দখল করে নেয় এবং মাদরাসার নাম পরিবর্তনসহ অনেক কিছু করে ফেলে। সে তো এটা করতে পারে না। মাদরাসা তো একটা ট্রাস্টের মাধ্যমে চলে এখন।
শহীদ মিনার উচ্ছেদের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে প্রফেসর ড. মো: আবুল মনসুর বলেন, মাদরাসার বাইরে দরবারের ১৯ গন্ডা জায়গা ছিল। সেগুলো দখল করতে কে বা কারা শহীদ মিনারটি তৈরি করেছিল। আমাদের ফাঁসাতে তা আবার উচ্ছেদও করে ফেলল। আমরা এ ব্যাপারে থানায় অভিযোগ করেছি। মুনিরিয়া যুব তাবলীগ কমিটির চেয়ারম্যান মুনির উল্লাহর সাথে যোগাযোগ করার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, পীর সাহেব কারো সাথে কথা বলেন না। এমনকি কোনো অনুষ্ঠানে গেলেও তার ছবি ব্যবহার না করতে নির্দেশ রয়েছে।
দখলের মচ্ছব
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি মুনির উল্লাহকে ৮ ব্যক্তির পক্ষে চট্টগ্রাম আদালতের আইনজীবী মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন লিগ্যাল ডিমান্ড নোটিশ ফর জাস্টিস পাঠিয়েছেন। এতে দেখা যায়, রাউজান থানায় মুনির উল্লাহর বিরুদ্ধে ১৩টি মামলা রয়েছে। অধিকাংশ মামলা জায়গা দখলের অভিযোগে। এর মধ্যে সৈয়দ বাড়ির মো: জালাল উদ্দিন ও জামাল উদ্দিনের বিপুল পরিমাণ জমি দখলে নেন। তাদের অভিযোগ, মুনির উল্লাহর সমর্থকদের কারো জায়গা-জমির ওপর নজর পড়লে তা রেজিস্ট্রি করে দিয়ে দিতে হয়। না দিলে, হামলা, মামলা এবং জোরপূর্বক দখল করে নেন। তাদের এ রকম অত্যাচারের শিকার হয়েছেন রাউজানের শতশত মানুষ।
গত বছরের আগস্টে মুনিরিয়া যুব তবলীগ কমিটির লোকজন এলাকায় ফেরার পর স্থানীয় লোকজনের জায়গা দখলে নেমেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এরমধ্যে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি কাগতিয়া মাইজপাড়া মজিদা পুকুরের লিজ গ্রহীতাদের মাছ লুট করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রবাসী নাছের আহমদ, আখতার, বখতিয়ার ও মোহাম্মদ ছৈয়দ। তারা জানান, মুনির উল্লাহর লোকজন জোর করে পুকুরের মাছ তুলে নিয়ে যায়। পরে বেআইনিভাবে পুকুরের বেশির ভাগ অংশ ভরাট করে ফেলে। এ সময় বেশ কিছু গাছ কেটে ফেলা হয়। এ ছাড়া মাজুর ও ইলিয়াছের অভিযোগ, মনিরিয়া যুব তাবলীগের লোকজন তাদের জমি জোরপূর্বক ভরাট করে ফেলেন। দরগার পাশে প্রবাসী মুহাম্মদ কালাম উদ্দিনের ১২ শতক জায়গা ও মৃত সরু মিয়ার ৩০ শতক জায়গা মুনির উল্লাহর লোকজন সম্প্রতি ভরাট করে দখলে নিয়েছেন। মুনির উল্লাহর বাড়ির পূর্বপাশে জমি রয়েছে আব্দুস সালামের। তার অভিযোগ, মনির উল্লা তার ১০ শতক জায়গা জোর করে দখল করে নিয়েছেন। তার ভয়ে দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় যান না তিনি। বর্তমানে ঢাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। তিনি বলেন, কাল পত্রিকায় আমার বক্তব্য আসলে মনির উল্লার বাহিনী আমার বাড়ির একটি ইটও রাখবে না। খুব ভয়ানক, অত্যাচারী।
কথায় কথায় হামলা-মারধর
মুনিরিয়া যুব তাবলীগ কমিটির লোকজন তাদের সাথে কোনো কারণে বনিবনা না হলে কথায় কথায় হামলা ও মারধর করেন বলে অভিযোগ করেছেন একাধিক ভুক্তভোগী। সঙ্ঘবদ্ধভাবে তারা হামলা চালায় বলে ভুক্তভোগীরা জানান। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১৯৯৭ সালে ২৭ আগস্ট রাঙ্গুনীয়ায় মাওলানা মফজ্জল আহমদ নঈমীকে আক্রমণ করে মুনিরিয়া যুব তাবলীগের লোকজন। এ ব্যাপারে রাউজান থানায় মামলা করা হয়। ২০০৪ সালে ২৫ জুন মুনির উল্লাহর বিরুদ্ধে হামলা ও ভয়ভীতির অভিযোগ এনে তার বড় ভাই মাওলানা মুহাম্মদ উল্লাহ কোতোয়ালি থানায় জিডি করে, জিডি নং ১৬১৪। একই বছর ৬ মার্চ মুনির উল্লার প্রতিবেশী জালাল উদ্দিন ও জামাল উদ্দিন সম্পত্তি আত্মসাতের অভিযোগ তুলে তার বিরুদ্ধে রাউজান থানায় মামলা করে। জিডি নং ৯২০ মামলা নং ২৪৮/২০০২/২৮(০৫)০৬। ২০০৭ সালে ১৭ জুলাই রাউজান শাহ আমানত জামে মসজিদের খতিব মাওলানা হুমায়ুন কবিরকে অপহরণ করে মারধর করে তার অনুসারীরা। এ ঘটনায় রাউজান থানায় মামলা হয়। একই বছরের ২৯ মে রাউজান দারুল উলুম ইসলাম মাদরাসার শিক্ষক মাওলানা আসাদুজ্জামান কাগতিয়া মাদরাসা ছাত্রদের গহিরা মাদরাসায় সেন্টারে নকল করতে না দেয়ায় মুনির উল্লার অনুসারীরা তাকে মারধর করেন। এ ঘটনায় রাউজান থানায় মামলা হয়। একই বছর ১ জুন নগরের জামিয়াতুল ফালাহ মসজিদে তরীকত কনফারেন্সে আসা মগদাই গ্রামের মাওলানা মোজাম্মেল আততায়ীকে সার্কিট হাউজের পাশে নিয়ে মারধর করে। তিনি কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। ২০০৯ সালে ফটিকছড়ি জাহানপুরে ওয়াজ করে ফেরার পথে মুনিরিয়া তাবলীগের হামলায় ইসলামী ফ্রন্ট নেতা মাওলানা মহিউদ্দিন রজভী মারাত্মকভাবে আহত হন। একই বছর কদলপুরে তাদের হামলার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন মাওলানা নঈমুদ্দীন। মুনিরিয়া যুব তাবলীগের হামলা থেকে বাদ যাননি প্রখ্যাত আলেম আল্লামা শফিউল ইসলাম নেজামী। তাকে ২০১০ সালের ৯ এপ্রিল হাটহাজারী এলাকায় হাত ও পায়ের রগ কেটে দেয়। তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, মুনিরিয়া যুব তাবলীগ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত। তাদের দ্বারা আক্রান্ত হয়নি এমন আলেম ও ওলামা উত্তর চট্টগ্রামে নেই।
২০১০ সালের ১৫ এপ্রিল রাউজান মুন্সিঘাটায় মুনিরিয়া যুব তাবলীগ কমিটির হামলায় ছাত্রসেনা কর্মী মুহাম্মাদ নঈমুদ্দীন আহত হয়ে এক মাস পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ ঘটনায় মুনির উল্লাহর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের হয়। ২০১০ সালের ৩ অক্টোবর আইনজীবী মোমিনুল ইসলামকে নগরের হাজারী গলিতে মারধর করে। এ ঘটনায় তিনি কোতোয়ালি থানায় মামলা নং ২৮(১০)০৪ দায়ের করেন। ২০১৩ সালের ৪ ডিসেম্বর ‘গাউসুল আজম’ নিয়ে ভিন্ন মত পোষণ করায় কদলপুরের মীর বাগিচার মুহম্মদ রবিউল হোসেন সুমনকে পায়ে ড্রিল মেশিন ঢুকিয়ে দিয়ে অত্যাচার করে মুনিরিয়া যুব তাবলীগের শহীদ ও আজিজ। ২০১৮ সালে জামেয়া আহমদীয়া সুন্নিয়া মাদরাসার ফাজিল ২য় বর্ষের ছাত্র মুহাম্মদ ইয়াসির আরাফাতকে পিটিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করার অভিযোগ রয়েছে।
গাউছিয়া কমিটি বাংলাদেশের মহাসচিব অ্যাডভোকেট মোসাহেব উদ্দীন বখতিয়ারের অভিযোগ তাকে গহিরা মোবারকখীল মাহফিল চলাকালীন মুনির উল্লাহ ও তার বাহিনী হামলা করে। এ ব্যাপারে রাউজান থানার মামলা বিচারাধীন রয়েছে। ২০১৯ সালের ১৩ মার্চ রাউজানের মুহাম্মদপুরের মোয়াজ্জেম বাড়ির হাফেজ মওলানা নুরুল আবসারকে রড ও হাতল দিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করে। একই বছর ১৭ মার্চ শামসুল আলম, ২০১৯ সালের ১৭ এপ্রিল স্থানীয় সমবায় সমিতির চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হককে রমজান আলী হাটে মারাত্মকভাবে পিটিয়ে আহত করে। এ সময় মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল আনোয়ার তাকে বাঁচাতে গেলে তাকেও মুনির উল্লাহর অনুসারীরা মারধর করেন। এ দু’টি ঘটনায় মামলা বিচারাধীন রয়েছে বলে ভুক্তভোগীরা জানান। এ ছাড়া মুনিরিয়া তাবলীগের অত্যাচার-নিপীড়নের শিকার হয়েছেন শতশত মানুষ। হামলার শিকারদের ভয়ে এলাকা পর্যন্ত ছাড়তে হয়েছে।
ঠকিয়েছেন নিকট আত্মীয়দেরও
মুনির উল্ল্যাহর পিতা মাওলানা তফজ্জল আহমদ ছিলেন হাটহাজারী উপজেলার মাদাশা এলাকার বাসিন্দা। তিনি এক প্রকার এতিম ছিলেন। তিনি কাগতিয়া মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা রুহুল আমিনের কাছে আশ্রয় নেন। পরে তার মেঝ মেয়ে তাজুর নূরকে বিয়ে করেন মাওলানা তফজ্জল আহমদ। এরপর তফজ্জল আহমদ ও তার সন্তান মনির উল্লাহ মিলে মাওলানা রুহুল আমিনের সমস্ত সম্পত্তি দখলে নেন। এতে রুহুল আমিনের বাকি ৩ মেয়ে রহমত নূর, নিয়াজুর নূর ও শমশুর নূরের ওয়ারিশদের সম্পদও জোর করে দখলে নেন মুনির উল্লাহ ও তার বাবা। মাওলানা রুহুল আমিনের একাধিক ওয়ারিশের অভিযোগ, মুনির উল্লার অনুসারীরা তাদের এলাকায় ভিড়তে দিচ্ছে না। নানা প্রকার হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। মনির উল্লাহ তাদের সমস্ত সম্পত্তি দখল করে রেখেছেন। প্রাণ ভয়ে এলাকায় পর্যন্ত তারা যেতে পারছে না।
এক আত্মীয় নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমি আমার মায়ের সম্পত্তির জন্য খালাতো ভাই মনির উল্লাহর সাথে কথা বলেছিলাম। তিনি তার লোকজন দিয়ে ধরে আমাকে বস্তা ভরে একটি খালের মধ্যে চুবিয়ে দেয়। পরে প্রাণের ভিক্ষা চেয়ে শেষ রক্ষা পাই।
ঠকবাজির অভিযোগ
কাগতিয়া এশাতুল উলুম কামিল মাদরাসার বর্তমান অধ্যক্ষ মুনির উল্লাহ। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ওই মাদরাসা থেকে ১৯৯৬ সালে কামিল পাস করেন। তিনি ১৯৯৭ সালে ওই মাদরাসায় অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন। একাধিক শিক্ষাবিদরা জানিয়েছেন, কোনো কামিল মাদরাসায় অধ্যক্ষ হতে গেলে অন্তত ১৫ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হয়। কিন্তু মুনির উল্লাহর ক্ষেত্রে তা মানা হয়নি।
এ দিকে দৈনিক নয়া দিগন্তের হাতে এসেছে মুনির উল্লাহ দু’টি জন্ম সনদ। এর মধ্যে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের জাতীয়তা সনদে দেখা যায় তার জন্ম ১ জানুয়ারি ১৯৭৪ সাল। তার চেয়ারম্যান সার্টিফিকেটে দেখা যায় ৩ ডিসেম্বর ১৯৬৪ সাল।
এ বিষয়গুলো নিয়ে মুনিরিয়া যুব তাবলীগ কমিটির মহাসচিব প্রফেসর ড. মো: আবুল মনসুর বলেন, অধ্যক্ষ মুনির উল্লাহ একজন কামেল মানুষ। তার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো ঠিক না।
এ দিকে অধ্যক্ষ মুনির উল্লাহর সাথে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।