বিভিন্ন দফতরের অনিয়মে কর্মকর্তাদের সতর্ক করলেন দুদক চেয়ারম্যান

Printed Edition

হুসাইন মালিক, চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি

‘সবাই মিলে গড়বো দেশ, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে চুয়াডাঙ্গায় অনুষ্ঠিত হয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) গণশুনানি। গতকাল জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সাহিত্য মঞ্চে এ গণশুনানির আয়োজন করে সমন্বিত দুদক কার্যালয়, ঝিনাইদহ। সহযোগিতা করে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন ও জেলা দুর্নীতি দমন প্রতিরোধ কমিটি। শুনানিতে ৯৫টি অভিযোগের মধ্যে ৩৩টি তাৎক্ষণিক নিষ্পত্তি ও ৭টি অভিযোগ খারিজ এবং বাকি অভিযোগগুলো জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সমাধানের আশ্বাস দেয়া হয়েছে।

গণশুনানির শুরুতে আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন দুদকের খুলনা বিভাগীয় পরিচালক জালাল উদ্দীন আহমদ।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দুদকের তদন্ত কমিশনার মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী, মহাপরিচালক আক্তার হোসেন ও জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) জামাল আল নাসের প্রমুখ।

গণশুনানির শুরুতেই চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন সরকারি দফতরের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। সর্ব প্রথমেই গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মহসিন আলীর বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে ধরা হয়। তিনি অভিযোগের কিছু অংশ স্বীকার করেন এবং যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা দেন। এ সময় দুদক চেয়ারম্যান তাকে সতর্ক করেন। জেলা সিভিল সার্জন ডা: হাদী মো: জিয়া উদ্দিনের বিরুদ্ধে নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস ও ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ ওঠে। তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। তবে দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য দফতরে বাজেট আত্মসাতের অভিযোগে সুনির্দিষ্ট জবাব দিতে ব্যর্থ হন তিনি।

সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা: বিদ্যুৎ কুমার বিশ্বাসের বিরুদ্ধে পরিচ্ছন্নতা খাতে ২০ লাখ ও কম্পিউটার কেনা বাবদ চার লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এবং চিকিৎসক ডা: অনিকের বিরুদ্ধে রোগীদের হয়রানির অভিযোগ ওঠে। দুদক চেয়ারম্যান উভয়কেই কড়াভাবে সতর্ক করেন।

রেজিস্ট্রার ও সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে ভূমি রেজিস্ট্রেশনে অতিরিক্ত টাকা আদায়, বিআরটিএ অফিসে দালালচক্রের দৌরাত্ম্য, পৌরসভার উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়ম, সড়ক বিভাগের কালভার্ট নির্মাণে অর্থ আত্মসাৎ, বিএডিসির নি¤œমানের বীজ বিতরণ, ওজোপাডিকো বিদ্যুৎ বিভাগের লাইনে দুর্নীতি, খাদ্য বিভাগের ওএমএস কার্যক্রমে কম ওজনের আটা বিতরণ এবং সোনালী ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগও গণশুনানিতে উত্থাপিত হয়।

প্রায় সব ক্ষেত্রেই দুদক চেয়ারম্যান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কড়াভাবে সতর্ক করেন এবং কিছু অভিযোগ তাৎক্ষণিকভাবে যাচাইয়ের নির্দেশ দেন।

গণশুনানির শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন জানান, চুয়াডাঙ্গায় গণশুনানিতে মোট ৯৫টি অভিযোগ এসেছে। এর মধ্যে ৩৩টি তাৎক্ষণিকভাবে নিষ্পত্তি করা হয়েছে, ৭টি অভিযোগ খারিজ করা হয়েছে এবং বাকি অভিযোগগুলো জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সমাধানের আশ্বাস দেয়া হয়েছে।