বিশেষ সংবাদদাতা
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় গত শনিবার রাতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন পাকিস্তানের যৌথবাহিনী প্রধান জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জা। বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা জোরদার এবং আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় সমন্বিত উদ্যোগ নেয়ার ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়।
উভয়পক্ষই বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তানের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক বন্ধনের কথা তুলে ধরে ভবিষ্যৎ অংশীদারিত্ব বৃদ্ধির আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বৈঠকে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ভুয়া সংবাদ ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য আজ বিশ্ব শান্তির অন্যতম বড় হুমকি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে অপব্যবহার করে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির প্রবণতা রোধে আন্তর্জাতিকভাবে যৌথ পদক্ষেপ নিতে হবে।
বৈঠকে জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জা বলেন, আমাদের দুই দেশ একে-অপরকে সহায়তা করবে। করাচি-চট্টগ্রাম সমুদ্র রুট চালু হয়েছে এবং শিগগিরই ঢাকা-করাচি আকাশপথও চালু হবে।
আলোচনায় জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান, এসডিজি সমন্বয়ক ও সিনিয়র সচিব লামিয়া মোরশেদ এবং ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার ইমরান হায়দার উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকের আলোচনার মূল বিষয়ের মধ্যে ছিল- দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির অঙ্গীকার; করাচি-চট্টগ্রাম সমুদ্র রুট চালু; ঢাকা-করাচি বিমান রুট খোলার প্রস্তুতি; ভুয়া তথ্য ও মিডিয়া অপব্যবহারের বিরুদ্ধে যৌথ অবস্থান ও মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে উত্তেজনা প্রশমনে মতবিনিময়।
মানবসম্পদ উন্নয়নে ইউনূস-ওয়াতানাবে বৈঠকে নতুন দিগন্ত : বাংলাদেশ থেকে দক্ষ কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়ায় নতুন উদ্যোগ নিচ্ছে জাপান। গত শনিবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথিশালা যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে সাক্ষাতে জাপানি উদ্যোক্তা ও রাজনীতিক মিকি ওয়াতানাবে ঘোষণা দেন, বাংলাদেশে একটি আন্তর্জাতিক মানের ড্রাইভিং স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হবে।
মিকি ওয়াতানাবে উল্লেখ করেন, জাপানে দক্ষ চালকের চাহিদা অনেক। বাংলাদেশ সেই ঘাটতি পূরণে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। ওয়াতানাবে জানান, প্রায় ১২ হাজার বর্গমিটার জায়গায় স্কুলটি স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা তাৎক্ষণিকভাবে কর্মকর্তাদের উপযুক্ত জমি চিহ্নিত করার নির্দেশ দেন, বিশেষ করে ঢাকার উপকণ্ঠে স্কুল স্থাপনের পরামর্শ দেন। এই বৈঠকটি ইউনূসের জাপান সফর (মে ২০২৫)-এর ধারাবাহিকতা, যেখানে দুই দেশের মধ্যে আগামী পাঁচ বছরে এক লাখ বাংলাদেশী কর্মী নিয়োগের চুক্তি হয়।
ওয়াতানাবে ইতোমধ্যে নরসিংদীর মনোহরদীতে একটি ভাষা ও পেশাগত প্রশিক্ষণ একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি জানান, এখন পর্যন্ত ৫২ জন বাংলাদেশী ইতোমধ্যে জাপানে কাজ শুরু করেছেন।
অধ্যাপক ইউনূস প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে জাপানি সংস্কৃতি ও শিষ্টাচার শেখানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, শুধু ভাষা নয়, আচরণ ও সংস্কৃতিও শেখানো জরুরি- এটি জাপানে কাজের মান ও মর্যাদা বাড়াবে।
প্রধান উপদেষ্টা আরো প্রস্তাব দেন, ড্রাইভিং প্রশিক্ষণের পাশাপাশি নার্সিং, পরিচর্যা, নির্মাণ ও কৃষি খাতেও প্রশিক্ষণ বাড়ানো উচিত। ওয়াতানাবে এতে সম্মতি জানান। বৈঠকে এসডিজি সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ ও প্রধান উপদেষ্টার ব্যক্তিগত সচিব সজীব খায়েরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
উভয়ের আলোচনার মূল বিষয় ছিল- বাংলাদেশে জাপানি অর্থায়নে ড্রাইভিং স্কুল স্থাপন; এক লাখ কর্মী নিয়োগের চুক্তির অংশ হিসেবে প্রকল্প; ভাষা ও সংস্কৃতি প্রশিক্ষণ জোরদার এবং নতুন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনে আইটি পার্ক ব্যবহারের প্রস্তাব।
প্রসঙ্গত, এক দিনে পাকিস্তান ও জাপানের সাথে দুই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক বাংলাদেশ সরকারের বহুমাত্রিক কূটনীতি ও অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বের নতুন অধ্যায় হিসেবে দেখা হচ্ছে। এক দিকে প্রতিরক্ষা ও বাণিজ্য সহযোগিতা, অন্য দিকে মানবসম্পদ উন্নয়ন-উভয় দিকেই বাংলাদেশের কৌশলগত অবস্থান আরো শক্ত হচ্ছে।



