দীর্ঘ বিরতির পর অবশেষে ওষুধ নিয়ন্ত্রণ কমিটির (ডিসিসি) সভা ডাকা হয়েছে। এ সভাটি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলেও ওষুধ কোম্পানির কোনো প্রতিনিধিকে অংশগ্রহণ করতে দেয়া হবে না। যদিও এ বিষয়টিতে ওষুধ শিল্প সমিতির আপত্তি রয়েছে।
ইতোমধ্যে হাজারখানেক ওষুধের নাম রেজিস্ট্রেশনের জন্য জমা পড়ে আছে বাংলাদেশ ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরে। জানা গেছে, জমা দেয়া ওষুধগুলোর বেশির ভাগই অ্যাডভান্সড লেভেলের। অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকা ওষুধগুলোর বেশির ভাগই ওষুধ আবিষ্কারক মূল কোম্পানির প্যাটেন্ট রাইট রয়েছে। ২০২৬ সালের অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকায় থাকবে বলে বিশ্বের যেকোনো কোম্পানির ওষুধের উৎপাদন ও বিপণন করতে পারবে, প্যাটেন্ট রাইট কার্যকর থাকা সত্ত্বেও। ওষুধ কোম্পানি কিংবা ওষুধ শিল্প সমিতি মনে করে, এখনই উচিত বেশি সংখ্যক প্যাটেন্টভুক্ত ওষুধের অনুমোদন দিয়ে রাখা।
জানা গেছে, ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরে অনুমোদনের জন্য যেসব ওষুধের তালিকা দেয়া হয়েছে সেগুলো অনুমোদন নিতে পারলে ওষুধ কোম্পানিগুলো আগামী ১৫ বছর বাংলাদেশের জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ তৈরি করতে পারবে। এর মধ্যে বাংলাদেশের সক্ষমতা বাড়বে, গড়ে উঠবে ওষুধের কাঁচামাল তৈরির (এপিআই) শিল্প। আবার কিছু ওষুধ কোম্পানি এর মধ্যেই নিজেদের মধ্যে রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আরঅ্যান্ডডি) সক্ষমতা গড়ে তুলতে পারবে। বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতি বলছে, বর্তমানে বাংলাদেশ নিজের প্রয়োজনের ৯৮ শতাংশ ওষুধ উৎপাদন করে থাকে। এ দেশের কয়েকটি ওষুধ কোম্পানি ইউরোপ-আমেরিকাসহ উন্নত দেশের ওষুধ নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানের ‘উন্নতমানের ওষুধ তৈরির সক্ষমতা আছে’ এ ধরনের সার্টিফিকেট অর্জন করেছে। ফলে আগামী দিনগুলোতে এখনকার চেয়ে আরো অনেক বেশি ওষুধ রফতানি করার সম্ভাবনা রয়েছে। এমতাবস্থায় এখনই নতুন ওষুধ তৈরির অনুমোদন নিতে না পারলে রফতানি বাধাগ্রস্ত হবে।
বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (বিআইডিএ) তথ্য অনুসারে বাংলাদেশ ২০২৪ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের গত এপ্রিল পর্যন্ত ১৭ কোটি ৭৪ লাখ ডলারের ওষুধ রফতানি করেছে। নতুন ওষুধের অনুমোদন পেলে আরো অনেক বেশি পরিমাণ ওষুধ রফতানি করা সম্ভব হবে। কারণ, ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরে জমা পড়া ওষুধগুলোর বেশির ভাগই অ্যাডভান্সড লেভেলের ওষুধ।
জানা গেছে, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে সালমান রহমানদের দাপটে তার ইচ্ছার বাইরে কেউ ওষুধের অনুমোদন নিতে পারতেন না। সে কারণে এবার ডিসিসি সভায় কোনো ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিকে রাখা হয়নি বলে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের একটি সূত্র জানিয়েছে।
ওষুধ নিয়ন্ত্রণ কমিটিতে বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতি তাদের প্রতিনিধিত্ব চায়। এ ব্যাপারে ওষুধ শিল্প সমিতির মহাসচিব ড. মুহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, ‘ওষুধ নিয়ন্ত্রণ কমিটিতে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি না রাখলেও ওষুধ শিল্প সমিতির প্রতিনিধি থাকা উচিৎ। অন্তত: পর্যবেক্ষক পর্যায়ে হলেও সমিতির প্রতিনিধিত্ব থাকতে হবে। কারণ, একটা ওষুধ কোনো কোম্পানি কেন আনতে চাচ্ছে, বাংলাদেশে এর দরকারটা কী তার ব্যাখ্যা সংশ্লিষ্ট ওষুধ কোম্পানির লোকজনই ভালো করে দিতে পারবে। কোনো কোম্পানির ওষুধ অনুমোদন না পেলে এর পক্ষে কথা বলারও কেউ থাকবে না। সে কারণে ওষুধ শিল্প সমিতির পক্ষ থেকে একজন অথবা দুইজনের প্রতিনিধিত্ব করার অনুমতি দেয়া উচিৎ।’
বাংলাদেশ ওষুধ প্রশাসন থেকে জানা গেছে, আগামী ২৬ আগস্ট ডিসিসি’র সভা হবে। তাতে সভাপতিত্ব করবেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব। সদস্যসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন বাংলাদেশ ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক। এর বাইরে স্বাস্থ্যসেবা বা ওষুধের সাথে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এমন কয়েকটি সংগঠনের প্রতিনিধি থাকবেন সদস্য হিসেবে।
ওষুধ কোম্পানিগুলোর সূত্রে জানা গেছে, তারা আরো অনেক ওষুধের অনুমোদন পাওয়ার জন্য আবেদন জমা দিয়েছেন অথবা জমা দেয়ার অপেক্ষায় আছেন। সবার উদ্দেশ্য এলডিসি উত্তরণের আগেই সক্ষমতা অনুযায়ী ওষুধের অনুমোদন করিয়ে রাখা। অনুমোদন নিয়ে রাখলেই প্যাটেন্ট রাইট কার্যকর হবে না। সে কারণে তারা অনুমোদন করিয়ে রাখতে চাচ্ছেন, পরে ধীরে ধীরে তারা ওষুধগুলো উৎপাদন ও বিপণনে যাবেন। তারা বলছেন, ওষুধ প্রশাসনের কাছ থেকে অনুমোদন নেয়ার পর উৎপাদন ও বিপণন করার আগেও আরেকটি অনুমোদন নিতে হয়। সেটা তারা পরে করবেন কিন্তু এখন তারা চাচ্ছেন, ‘অনুমোদন করিয়ে নিতে।’ এলডিসি উত্তরণ হয়ে গেলে প্যাটেন্ট রাইট ও মেধাস্বত্ব আইনের আওতায় পড়লে মূল কোম্পানিকে এর মূল্য দিয়ে বাংলাদেশে ওষুধ উৎপাদন করতে হবে। এর ফলে তখন ওষুধের দাম বেড়ে আকাশ ছোঁয়া হয়ে যাবে।