সেপ্টেম্বরে প্রবাসী আয় বেড়েছে সাড়ে ১০ শতাংশ

সেপ্টেম্বরে রফতানি আয় কমেছে ৪.৭৩ শতাংশ

শুধু গত বছরের তুলনায় নয়, চলতি বছরের আগস্ট মাসের তুলনায়ও সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স বাড়ার প্রবণতা দেখা গেছে। আগস্টে প্রবাসী আয় এসেছিল ২৪২ কোটি ১৮ লাখ ডলার। অর্থাৎ মাত্র এক মাসের ব্যবধানে আয় বেড়েছে ১০ দশমিক ৯০ শতাংশ।

বিশেষ সংবাদদাতা
Printed Edition

বাংলাদেশে প্রবাসী আয় ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। সদ্য সমাপ্ত সেপ্টেম্বর মাসে দেশে এসেছে ২৬৮ কোটি ৫৮ লাখ ডলার। গত বছরের একই মাসে এসেছিল ২৪০ কোটি ৪১ লাখ ডলার। ফলে এক বছরের ব্যবধানে প্রবাসী আয় বেড়েছে ১০ দশমিক ৪৬ শতাংশ।

শুধু গত বছরের তুলনায় নয়, চলতি বছরের আগস্ট মাসের তুলনায়ও সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স বাড়ার প্রবণতা দেখা গেছে। আগস্টে প্রবাসী আয় এসেছিল ২৪২ কোটি ১৮ লাখ ডলার। অর্থাৎ মাত্র এক মাসের ব্যবধানে আয় বেড়েছে ১০ দশমিক ৯০ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

ধারাবাহিক ইতিবাচক প্রবণতা : ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে প্রবাসী আয় যে ধারাবাহিকতায় বাড়ছে তা রিজার্ভ বৃদ্ধির পাশাপাশি মুদ্রাবাজারকে স্থিতিশীল রাখতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। বৈদেশিক মুদ্রার চাপ হ্রাস পাওয়ায় ডলারের সঙ্কট কিছুটা কমছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, অবৈধ পথে অর্থ প্রেরণ বন্ধে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ এবং বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে প্রণোদনা দেয়ার কারণে এ আয় বাড়ছে। ফলে হুন্ডি ব্যবসার প্রভাব কমেছে এবং প্রবাসীরা বেশি করে ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করছেন।

বৈদেশিক লেনদেনে উন্নতি : বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দেশের বৈদেশিক দেনা পরিশোধ সম্পন্ন হয়েছে। এতে লেনদেনের ভারসাম্যে উন্নতি হয়েছে এবং বৈদেশিক মুদ্রার ওপর চাপ কমেছে। একই সাথে বিদেশী ব্যাংকগুলোর আস্থাও ফিরে আসছে, যা বৈদেশিক লেনদেনে স্বস্তি আনছে।

ব্যাংকভিত্তিক রেমিট্যান্স প্রবাহ : প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে বেসরকারি ও সরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা লক্ষ করা যাচ্ছে। সেপ্টেম্বর মাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স সংগ্রহ করেছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, যার পরিমাণ ৬৯ কোটি ৮৫ লাখ ডলার। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, যার মাধ্যমে এসেছে ২৫ কোটি ৮২ লাখ ডলার। জনতা ব্যাংক পেয়েছে ১৭ কোটি ডলার এবং ব্র্যাক ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১৬ কোটি ডলার।

দীর্ঘমেয়াদি প্রবণতা : আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে প্রবাসী আয়ের ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। চলতি বছরের মার্চ মাসে দেশে সর্বোচ্চ ৩২৯ কোটি ডলার রেমিট্যান্স আসে, যা দেশের ইতিহাসে এক মাসে সর্বোচ্চ রেকর্ড। যদিও এরপর আর কোনো মাসে ৩০০ কোটি ডলারের বেশি আসেনি, তবে ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি বজায় আছে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশে এসেছে ৩০ বিলিয়ন ডলারের বেশি প্রবাসী আয়, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় সাড়ে ছয় বিলিয়ন বা ২৭ শতাংশ বেশি। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধারা অব্যাহত থাকলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরো শক্তিশালী হবে এবং অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ফিরবে।

সেপ্টেম্বরে রফতানি আয় কমেছে ৪.৭৩ শতাংশ

দেশে সেপ্টেম্বরে রফতানি আয় কমেছে। গত মাসে বিদেশের বাজারে ৩৬২ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য রফতানি করেছেন দেশের উদ্যোক্তারা। এ আয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪ দশমিক ৭৩ শতাংশ কম। ২০২৪ সালে সেপ্টেম্বর মাসে রফতানি আয় হয়েছিল ৩৮০ কোটি ডলার। গতকাল রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) প্রকাশিত রফতানির হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

তবে চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাস (জুলাই-সেপ্টেম্বর) রফতানি আয় বেড়েছে ৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে রফতানি হয়েছে এক হাজার ২৩১ কোটি ডলারের পণ্য। গত অর্থবছরের একই সময়ে, যা ছিল এক হাজার ১৬৫ কোটি ডলার।

প্রতিবেদনে আরো দেখা গেছে, গত বছরের সেপ্টেম্বরের তুলনায় চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে প্রধান রফতানি পণ্য তৈরী পোশাক খাতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। রফতানি কমেছে ৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ। এ ছাড়া কৃষি পণ্যে ২ দশমিক ৩৭ শতাংশ এবং প্লাস্টিক পণ্যে ৯ দশমিক ১৫ শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির দেখা পাওয়া গেছে।

অন্য দিকে আলোচ্য সময়ে প্রকৌশল পণ্যের রফতানি বেড়েছে ৩৬ দশমিক ৪৩ শতাংশ। সেই সাথে কার্পেট রফতানি ২১ দশমিক ৬৭ শতাংশ এবং হিমায়িত মাছ রফতানি ১২ দশমিক ১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বছরের সেপ্টেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক ধাক্কার প্রভাবে বাংলাদেশের তৈরী পোশাক রফতানি ৫.৬৬ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে, যা দেশের সামগ্রিক রফতানি আয়েও প্রতিফলিত হয়েছে। তৈরী পোশাক খাতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা দিয়েছে, কারণ বেশির ভাগ ক্রেতাই নতুন করে কোনো অর্ডার দিচ্ছে না। তারা এখন অতিরিক্ত ২০ শতাংশ রেসিপ্রোক্যাল শুল্কের একটি অংশ বাংলাদেশী সরবরাহকারীদের ওপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে।

তিনি বলেন রফতানিকারকদের পক্ষে এই অতিরিক্ত চাপ বহন করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়, কারণ তারা ইতোমধ্যেই প্রাথমিক শুল্ক সমন্বয় এবং উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির প্রভাবসহ বিভিন্ন ধরনের চাপে রয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের রফতানিকারকরা ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং অন্যান্য বাজারেও কঠিন প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছে, কারণ চীনা ও ভারতীয় প্রস্তুতকারকরা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এসব বাজারে রফতানি বাড়ানোর চেষ্টা করছে।

তিনি বলেন, আমরা আশঙ্কা করছি, এই ধীরগতি আগামী দুই থেকে তিন মাস অব্যাহত থাকতে পারে। তবে আন্তর্জাতিক ক্রেতারা নতুন শুল্ককাঠামোর সাথে মানিয়ে নিতে পারলে, আমাদের রফতানি আবারো পুনরুদ্ধার হবে বলে আশা করছি। এ সময়টায় রফতানিকারকদের ধৈর্য সহকারে ক্রেতাদের যেকোনো ধরনের চাপ মোকাবেলা করতে হবে।