‘প্রিমিয়ারে ফিরতেই বিসিএলে খেলছি’

রফিকুল হায়দার ফরহাদ
Printed Edition
উত্তর বারিধারার স্ট্রাইকার ফয়সাল আহমেদ শীতল
উত্তর বারিধারার স্ট্রাইকার ফয়সাল আহমেদ শীতল

দেশের শীর্ষ লেভেলের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচে একাধিকবার উপস্থিতি। অথচ তারাই এখন খেলতে পারছেন না বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে। গোলরকক্ষক নেহাল, স্ট্রাইকার জাকির হোসেন জিকুর পর এখন ফয়সাল আহমেদ শীতল। বিপিএলে জায়গা না পেয়ে তারা খেলছেন বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়শিপ লিগে। জিকুর আরামবাগ বিসিএলের শিরোপার রেসে। সে অর্থে প্রিমিয়ারে উঠার লড়াইয়ে থাকতে পারেনি নেহালের সিটি ক্লাব। এর পরও যদি কিন্তুতে নির্ভরশীল মিরপুরের এই ক্লাব। আর শীতলের উত্তর বারিধারা দল বদলের সময় শক্তিশালী হিসেবে থাকলেও ময়দানি লড়াইয়ে আর পারেনি। শুরতে টানা পাঁচ ম্যাচে হেরে বেশ পিছিয়ে পড়েছে। তবে নিজেকে আলাদা করেই তুলে ধরেছেন শীতল। এবারের বসুন্ধরা গ্রুপ বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে ১২ ম্যাচে ৮ গোল করেছেন তিনি। পিডব্লিইডির স্বাধীনের সাথে এখন পর্যন্ত যৌথভাবে গোলদাতার শীর্ষে।

টাঙ্গাইলের সখিপুরের ছেলে শীতল। ঢাকা আবাহনীতে খেলেছেন। আকাশি-নীল জার্সিতে এএফসি কাপে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে মাঠে তার প্রতিনিধিত্ব ছিল। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে গত বছর খেলেছিলেন প্রথম বিভাগ তথা সিনিয়র ডিভিশন লিগে। আর এবার পেশাদার লিগের সেকেন্ড টায়ার বিসিএলে। দীর্ঘদেহী সুঠামদেহের শীতল জানান, এটা আমার রিজিকে ছিল। তাই আবাহনীর মতো নাম করা ক্লাবে খেলার পরও এখন খেলতে হচ্ছে নিচের লিগে।

২০১৭ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত দর্শক প্রিয় ক্লাবের খেলোয়াড় ছিলেন। বিদেশী স্ট্রাইকার ও স্থানীয় নাবিব নেওয়াজ জীবনের সাথে টক্কর দিয়েই মাঠে খেলেছেন। তবে মূল দলে নয়। বদলি হিসেবে। এই রিজার্ভ পরিচয়ে এএফসি কাপে চারটি ম্যাচ খেলেছেন। এর পরও এই পরিণতির জন্য ইনজুরি ও করোনাকেই দায়ী করলেন বর্তমানে গণবিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া ফুটবলারটি।

টাঙ্গাইলের অনেক ফুটবলারই জাতীয় দল মাতিয়েছেন। হাল আমলের বিশ্বনাথ ঘোষ, রবিউল ইসলাম, রায়হান হাসান, সদ্য সাবেক হওয়া মামুন মিয়া, গোলরক্ষক রাসেল মাহমুদ লিটনরা অন্যতম। ফয়সাল আহমেদ শীতলের এলাকার ছেলে মামুন মিয়া ও লিটন।

২০১৪ সালে প্রথম বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ খেলা শীতলের। সেবার ভিক্টোরিয়ার জার্সীতে ১১ গোল করেছিলেন বলে জানান তিনি। এর আগে ২০০৯ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ছিলেন বিকেএসপির ছাত্র হিসেবে। এই দলটির হয়ে ২০১১ সালে ভারতের সুব্রত কাপে খেলতে গিয়েছিলেন। সেখানে তিন গোল ছিল তা। বিপিএলে শীতলের প্রথম খেলা বাফুফের বর্তমান সভাপতি তাবিথ আওয়ালের সাবেক ক্লাব ফেনী সকারে। সেখানে অবশ্য তিন ম্যাচ খেলে কোনো গোল পাননি। ২০১৬ তে ফেনী সকারে থেকে এরপর যোগ দেন উত্তর বারিধারায়। এই ক্লাবের জার্সিতে একটি গোল করেছিলেন ঢাকা আবাহনীর বিপক্ষে। ব্যস এতেই আবাহনীর কর্মকর্তাদের চোখে পড়েন শীতল। তাই পরের সিজনের আবাহনীতে ডাক পাওয়া ও যোগ দেয়া। দেশের অন্যতম জনপ্রিয় এই ক্লাবের হয়ে করোনার সময়কালসহ পাঁচ বছর খেলেন। পেয়েছেন শিরোপার স্বাদ। জানান, প্রথম সিজন ছাড়া প্রতি মৌসুমেই আমার চার-পাঁচটি করে গোল ছিল। এর মধ্যে সেরা সময় গেছে ২০১৮/১৯ সিজন। সেবার পাঁচ-ছয়টি গোল করেছিলাম।

তবে আবাহনী ছাড়ার পর আর সময় ভালো যায়নি ফয়সাল আহমেদ শীতলের। আবাহনীতে বিদেশী আর স্থানীয় প্রতিষ্ঠিত স্ট্রাইকারদের জন্য নিয়মিত খেলার সুযোগ পেতেন না। তাই ম্যাচ টাইম বেশি পেতে দর্শকপ্রিয় ক্লাব ছেড়ে বাংলাদেশ পুলিশ দলে যোগ দেন। কিন্তু সেখানে দফায় দফায় ইনজুরি আর দুই দফা করোনা পজিটিভ হওয়ায় মাঠের বাইরেই বসে থাকতে হয় অধিকাংশ সময়। শীতলের কথা, পুলিশ দলে আসার পর তিন দফা ইনজুরিতে পড়ি। এর একটি ছিল প্র্যাকটিস ম্যাচে বিপক্ষ খেলোয়াড়ের সাথে সংঘর্ষে মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পাওয়া। ভেঙে যায় চারটি দাঁত। সিলেটের মাঠে ম্যাচের সময় আঘাত পেয়ে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম। দুইবার করোনা পজিটিভ আসে। এতেই আমি পিছিয়ে পড়ি।’ পরের সিজনে তাকে দলে টানে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র। সেখানে চট্টগ্রাম আবাহনীর বিপক্ষে সমতাসূচক গোল। সেখানে তার সাথে পরের সিজনের জন্য কথা পাকা হওয়ার পরও শেষ সময়ে বাদ দিয়ে দেয়। এতে প্রিমিয়ারে আর কোনো ক্লাব পাননি। তবে বসে থাকার পাত্র নন শীতল। তাই গত বছর সিনিয়র ডিভিশনে নাম লেখান উত্তর বারিধারা ক্লাবে। অসমাপ্ত সেই লিগে ছয় ম্যাচে ৯ গোল করেন। সেই ধারাক্রমেই এবারের বিসিএলে খেলছেন উত্তর বারিধারায়।

প্রিমিয়ার থেকে সিনিয়র ডিভিশন হয়ে এখন বিসিএলে। তবে অন্য আরো অনেকের মতো বিসিএলকেই শেষ ঠিকানা মানতে রাজি নন শীতল। জানান, আমি আমার ফিরতে চাই বিপিএলে। অনেকে তো ৩০ বছর বয়সেও জাতীয় দলে ডাক পায়। আমি এখনো ইয়াং। এবার বিসিএলে আরো যে ক’টি ম্যাচ সেখানে আমার ৮ গোলকে ১৪-১৫টিতে নিতে চাই। এই লিগে সর্বোচ্চ গোলদাতা হলে বড় ক্লাবের নজরে পরবই। এর মাধ্যমেই ফিরতে চাই বিপিএলে। সে সাথে স্বপ্ন দেখছি লাল-সবুজ জার্সিতে খেলার।