বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ফিরে পাওয়া দেশের রাজনীতিতে একটি ইতিবাচক ঘটনা বলে মনে করেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। তারা মনে করেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকার প্রতিহিংসার কারণে তাদের প্রতি অবিচার করেছিল। দীর্ঘদিন পর তারা আদালত থেকে ন্যায় বিচার পেয়েছেন।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান নয়া দিগন্তকে বলেন, জামায়াতের নিবন্ধন কেড়ে নিয়ে আওয়ামী লীগ তাদের প্রতি জুলুম ও অবিচার করেছিল। যেসব কারণে তাদের নিবন্ধন কেড়ে নেয়া হয়েছিল সেসব কারণ সব ইসলামী দলের জন্যই প্রযোজ্য। কিন্তু শুধু জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করা তাদের প্রতি অবিচার ছিল। তাদের দাবিয়ে রাখতে প্রতিহিংসা থেকে এটা করা হয়। এখন বিচার বিভাগ কিছুটা হলেও স্বাধীন। এ জন্য তারা আদালত থেকে সুবিচার পেয়েছে। দীর্ঘদিন পরে হলেও তারা ন্যায়বিচার পেয়েছে। এটা অবশ্যই একটি ভালো খবর।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমেদ নয়া দিগন্তকে বলেন, জামায়াতের নিবন্ধন ফিরে পাওয়া একটি ইতিবাচক ঘটনা। আওয়ামী লীগ সরকার কোনো কারণ ছাড়াই তাদের সুবিধার্থে একটি ইসলামী রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে দিয়েছিল। যেটা ছিল তাদের স্বৈরাচারী আচারণের বহিঃপ্রকাশ। এখন জামায়াত নিবন্ধন ফিরে পাওয়া একটি ভালো সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের দেশে রাজনীতি করার অধিকার রয়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী বলেন, জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করা একটি অন্যায় সিদ্ধান্ত ছিল। এখন আইনগতভাবে তারা রাজনীতি করার অধিকার ফিরে পেয়েছে এটা দেশের রাজনীতির জন্য অবশ্যই একটি ভালো দিক। তারা এখন দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে সঠিকভাবে ভূমিকা রাখতে পারবে। তিনি আরো বলেন, তারা গণতান্ত্রিকভাবেই দেশে রাজনীতি করছে। ’৭১ এর দোহাই দিয়ে তাদের রাজনীতি বঞ্চিত করার কোনো সুযোগ নেই।
ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা সাখওয়াত হোসাইন রাজী নয়া দিগন্তকে বলেন, জামায়াতের নিবন্ধন ফিরে পাওয়া অবশ্যই একটি ভালো খবর। এটা তাদের হক ছিল, তাদের অধিকার ছিল। আওয়ামী লীগ সরকার তাদের নিবন্ধন অন্যায়ভাবে বাতিল করেছিল। এখন তারা তাদের অধিকার ফিরে পেয়েছে। নিবন্ধন না থাকলে তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারতো না। এখন তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে এবং ভালো করবে আশা করি।
বাংলাদেশ লেবারপার্টির চেয়ারম্যান ডা: মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, জামায়াতে ইসলামী দেশের একটি প্রতিষ্ঠিত গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। গ্রহণযোগ্য প্রতিটি সংসদে তাদের প্রতিনিধি ছিল। বিগত আওয়ামী লীগ সরকার তাদের নিবন্ধন কেড়ে নিয়ে জুলুম করেছিল। তাদেরকে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত করেছিল। একইভাবে বিগত সরকার লেবার পার্টিরও নিবন্ধন কেড়ে নিয়েছিল। আমরাও আদালত থেকে ন্যায়বিচার পেয়েছি। নিবন্ধন ফিরে পেয়েছি। তিনি আরো বলেন, বিগত সরকার বিশেষ গোষ্ঠীর ইন্ধনে দেশের গণতান্ত্রিক শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল। যা গণতন্ত্রের জন্য শোভন ছিল না। এ কারণেই জামায়াত ও লেবার পার্টি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছিল।
বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির নির্বাহী সভাপতি মাওলানা এ কে এম আশরাফুল হক বলেন, জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করা ছিল আওয়ামী লীগের চরম ফ্যাসিবাদী পদক্ষেপ। দীর্ঘদিন পর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক নিবন্ধন ফিরে পাওয়ায় দেশে মুক্ত রাজনীতির যুগের যাত্রা শুরু হয়েছে। আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকার গত ১৭ বছর রাজনৈতিক যে ফ্যাসিজম কায়েম করেছিল জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ফিরে পাওয়ায় এর কিছুটা অবসান হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি আরও বলেন, জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ফিরে পাওয়ার মাধ্যমে দেশে নতুন করে মুক্ত রাজনৈতিক চর্চার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এটা ইতিহাসের একটি মাইলফলক হবে ইনশাআল্লাহ। আগামীতে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও সুস্থ রাজনৈতিক ধারা প্রতিষ্ঠা করে চিরদিনের জন্য ফ্যাসিবাদ পুনর্বাসনের পথ রুদ্ধ করতে জামায়াতে ইসলামী বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।