ওড়ার আগে বিমানের লন্ডনগামী ২ ফ্লাইটে ধরা পড়লো ত্রুটি

ঢাকা, সিলেট ও হিথ্রো বিমানবন্দরে শত শত যাত্রী ভোগান্তিতে

যাত্রীদের নিয়ে নির্ধারিত সময়ের পৌনে ৪ ঘণ্টা দেরিতে লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়ে যায় বিমান। এর মধ্যে শিডিউলে অনেক পরিবর্তন আনতে হয়। এতে বিভিন্ন দেশে অপেক্ষায় থাকা যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়ে।

মনির হোসেন
Printed Edition
ড্রিমলাইনার
ড্রিমলাইনার |ফাইল ফটো

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের লন্ডনগামী দুইটি ফ্লাইট ঢাকা থেকে ওড়ার আগেই দুই দফা টেকনিক্যাল সমস্যায় পড়ে। পরে অপেক্ষারত যাত্রীদের দুবাই থেকে আসা বিমানের অপর একটি ফ্লাইটে তুলে নির্ধারিত সময়ের পৌনে ৪ ঘণ্টা পর গন্তব্যে পাঠানো হয়। এ দুইটি ঘটনার পর ঢাকায় বিমানের পূর্বনির্ধারিত ফ্লাইট শিডিউল ব্যবস্থা লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। এর ফলে ঢাকা, সিলেট এবং গন্তব্য দেশের বিমানবন্দরে অপেক্ষায় থাকা নানা পেশার যাত্রীদের পড়তে হয় চরম দুর্ভোগে।

গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত এসব ভোগান্তির ঘটনা ঘটে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক ও লন্ডনের হিথো বিমানবন্দরে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও বিমানবন্দর টার্মিনাল সংশ্লিষ্টরা জানান, গতকাল সকাল ১০টা ২০ মিনিটে পূর্বনির্ধারিত ঢাকা-সিলেট-লন্ডনগামী ফ্লাইটটি (ড্রিমলাইনার-৭৮৭-৮০০) ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। রি-শিডিউল করা ফ্লাইটটি যথাসময়ে ছাড়তে যাত্রীদের সবাইকে আসনে বসানোও হয়। টেক অফ করার মুহূর্তে পাইলটের কাছে এয়ারক্রাফটে যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়ে। সাথে সাথে ফ্লাইটটি আর আকাশে ওড়েনি। সব যাত্রীকে এয়ারক্রাফট থেকে নামানো হয়। এরপর এয়ারক্রাফট পরিবর্তন করে আবারো লন্ডনগামী ফ্লাইটটি ছাড়ার প্রস্তুতি নেয়া শুরু হয়। তবে এবার আগেই এয়ারক্রাফটে যাত্রীদের তোলা হয়নি। এই এয়ারক্রাফটটিও ড্রিমলাইনার ৭৮৭-৮০০ মডেলের। এটিও উড্ডয়ন উপযোগী কি না তা পাইলট পরীক্ষা করেন। কিন্তু এই এয়ারক্রাফটেও দেখা দেয় ত্রুটি। এরপর এটিও ‘টেকনিক্যাল’ ঘোষণা করা হয়। পর পর দুইটি এয়ারক্রাফট টেকনিক্যাল হওয়ায় যাত্রীদের বিষয় বিবেচনা করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ অন্য এয়ারক্রাফটে তুলে লন্ডন পাঠানোর চিন্তা করেন। এরই মধ্যে দুবাই থেকে আসা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট বেলা ১১টা ২০ মিনিটে (বোয়িং-৭৮৭-৯০০ মডেল) ঢাকার বিমানবন্দরে অবতরণ করে। পরে ওই ফ্লাইটে যাত্রীদের নিয়ে নির্ধারিত সময়ের পৌনে ৪ ঘণ্টা দেরিতে লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়ে যায়। এর মধ্যে বিমানের শিডিউলে অনেক পরিবর্তন আনতে হয়। এতে বিভিন্ন দেশে অপেক্ষায় থাকা যাত্রীদের দুর্ভোগে পড়তে হয়।

হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর টার্মিনালের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা নয়া দিগন্তকে নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, বিমানের একটার পর একটা এয়ারক্রাফট টেকনিক্যাল হওয়ায় ফ্লাইট শিডিউল ভেঙে পড়েছে। বিমানের প্রকৌশল বিভাগ থেকে ত্রুটিযুক্ত এয়ারক্রাফট কিভাবে ক্লিয়ারেন্স দেয়া হচ্ছে তা নিয়ে তারা প্রশ্ন তুলে বলছেন, এসব স্পর্শকাতর বিষয়গুলো বিমান ম্যানেজমেন্টকে আরো কঠোরভাবে নজরদারি করতে হবে। তারা বলেন, এর আগে ১৬ জুলাই রাতে দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করার সময় ২৭৫ জন যাত্রী নিয়ে বিমানের একটি ড্রিমলাইনার মডেলের এয়ারক্রাফটের দুইটি চাকা ফেটে যায়। তারপরও ওই ফ্লাইটের যাত্রী এবং ক্রুদের কোনো ক্ষতি হয়নি। ওই ফ্লাইটটি গতকাল বিকেলে ঢাকা এসে পৌঁছায়। দুপুর দেড়টায় চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে যাত্রী নামিয়ে ঢাকায় আসে।

একজন কেবিন ক্রু গতকাল নয়া দিগন্তকে তার ক্ষোভের কথা জানাতে গিয়ে বলেন, বিমানের বহরে বোয়িং-৭৩৭ দুইটি এয়ারক্রাফট আছে। এটি প্রায় গন্তব্য দেশগুলোতে যাওয়ার পর, আবার কখনো ঢাকাতেই টেকনিক্যাল হয়ে পড়ছে। এই দুইটি এয়ারক্রাফট নিয়ে আমরা ফ্লাই করার পর সব সময় আতঙ্কের মধ্যে থাকি। কখন যে কোথায় কি হয়ে যায় তা নিয়ে টেনশন মাথায় থাকে। গত সপ্তাহেও এই দুইটি এয়ারক্রাফটের একটি ব্যাংককে টেকনিক্যাল হয়ে পড়ে। এমন ঘটনা প্রায় ঘটছে। এই বিষয়টি পাইলট এবং কেবিন ক্রুদের পক্ষ থেকে বিমান ম্যানেজমেন্টকে বারবার অবহিত করে আসছি। কিন্তু এসব এয়ারক্রাফটের বিষয়ে কার্যকর কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না বলে তিনি অভিযোগ করেন। তারও প্রশ্ন বিমানের প্রকৌশল বিভাগ কিভাবে ত্রুটিযুক্ত এয়ারক্রাফট আকাশে ওড়ার ক্লিয়ারেন্স দিচ্ছেন?