অতি বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনে সক্ষমতা হারিয়েছে ঢাকা

সময়ের সাথে সাথে নগরবাসীর ঝুঁকি বাড়ছে। ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভেঙে পড়া, খাল ভরাট ও বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনে অচলাবস্থায় রাজধানী এমন শোচনীয় অবস্থায় পড়েছে।

আবুল কালাম
Printed Edition

অতি বৃষ্টিতে পানি নিষ্কাশনের সক্ষমতা হারিয়েছে ঢাকা মহানগরী। ফলে বর্ষা মওসুমে বৃষ্টিতে প্রায়ই ডুবছে নগরী। এতে দুর্ভোগে পড়ছেন ঢাকাবাসী। এরই মধ্যে আবারো সতর্কবার্তা দিয়েছেন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, কয়েক দিনের প্রচণ্ড ভ্যাপসা গরমের ভেতরে ধেয়ে আসছে শক্তিশালী আংশিক মৌসুমি বৃষ্টিবলয় ঈশান। এতে করে আবারো ঢাকা ডোবার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন নগরবাসী।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সময়ের সাথে সাথে নগরবাসীর ঝুঁকি বাড়ছে। ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভেঙে পড়া, খাল ভরাট ও বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনে অচলাবস্থায় রাজধানী এমন শোচনীয় অবস্থায় পড়েছে। তাদের ভাষ্য, ধারণ ক্ষমতার চার গুণ বেশি লোকের বসবাসে অনেক আগেই ভেঙে পড়েছে নাগরিক সুযোগ-সুবিধা। এমন অবস্থার মধ্যেও জলাবব্ধতা নিরসনে দৃশ্যমান উন্নতি হয়নি। ফলে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনে সক্ষমতা হারিয়েছে এই মেগা সিটি।

একাধিক পরিসংখ্যান বলছে, ৫৪ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টির পানি নগরী থেকে নিষ্কাশন সম্ভব। এর বেশি নিষ্কাশনের সক্ষমতা ঢাকা শহর অনেক আগেই হারিয়েছে। ফলে সর্বোচ্চ ৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হলেই নগরী পানিতে ডুবে যাচ্ছে।

আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের মতে, ঘণ্টায় ০.২৫ মিলিমিটার থেকে ১ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাতকে হালকা, ৪ মিলিমিটার থেকে ১৬ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাতকে ভারী, ১৬ মিলিমিটার থেকে ৫০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাতকে অতি ভারী এবং ৫০ মিলিমিটারের অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত বা চরম বৃষ্টি বলে ধরে নেয়া হয়।

বিরাজমান পরিস্থিতিতে পরিবেশ বিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবদুর রব নয়া দিগন্তকে বলেন, বৃষ্টির পানি সড়কের নিচের অংশের নালা হয়ে খাল ও নদীতে গিয়ে পড়ে। সেই নালা এখন বন্ধ হয়ে পড়েছে। অন্য দিকে খালের তলায় মাটি জমে গভীরতা কমে যাওয়ায় পানির ধারণক্ষমতা কমে গেছে। এমতাবস্থায় দুই সিটি করপোরেশনকে খালের গভীরতা বাড়াতে জোর দিতে হবে। এ ছাড়া বৃষ্টির পানি নর্দমা হয়ে খালের মাধ্যমে নদীতে যাওয়া পর্যন্ত যে প্রক্রিয়া আছে তা নিশ্চিত করতে হবে।

অন্য দিকে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো: খালিদ হাসান নয়া দিগন্তকে বলেন, অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণেই এমনটা হয়েছে। যেকোনো পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নে কেউ নিয়ম মানছে না। ড্রেনেজ ব্যবস্থা ঠিক নেই। খালগুলো দখল হয়ে গেছে। আসল কথা হলো জলাবদ্ধতা নিরসনে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন। তবেই নগরবাসীর মুক্তি মিলবে।

সার্বিক বিষয় নিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ জানান, রাজধানীর জলাবদ্ধতা সমাধানে বিগত সময় ধরে ঢাকা ওয়াসা ও সিটি করপোরেশন হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করেও তার নিরসন সম্ভব হয়নি।

তবে বর্তমান সরকার গত ২ ফেব্রুয়ারি নতুন করে খাল বাঁচানোর উদ্যোগ গ্রহণ করে। এ ছাড়া রাজধানীর জলাবদ্ধতার স্থান বা হটস্পট চিহ্নিত করা হয়েছে। এই কার্যক্রমের আওতায় ঢাকার খালগুলোতে পানির প্রবাহ ফিরিয়ে আনা এবং খাল খনন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ কাজ শেষ হলে ঢাকা অতি বৃষ্টিতে পানি নিষ্কাশনের সক্ষমতা ফিরে পাবে।