আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাবেক তথ্যমন্ত্রী ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু তার বিরুদ্ধে আনা মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ খণ্ডন করেছেন। তিনি ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যানের উদ্দেশে বলেন, ‘আল্লাহর পর বিচার নিষ্পত্তির প্রতিনিধি আপনি। আমি নির্দোষ। সম্পূর্ণ নির্দোষ। শুধু গায়েবি মামলার ঝড়ে বিধ্বস্ত।’
রোববার (২ নভেম্বর) জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় কুষ্টিয়ায় ৬ জনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ইনুর বিরুদ্ধে আটটি অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল।
পরে এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের সামনে সাংবাদিকদের সাথে ব্রিফিং করেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, আজকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল-২ এ দুটো মামলার অভিযোগ গঠন হয়েছে। একটা হচ্ছে হাসানুল হক ইনু সাহেবের বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে মোট আটটি চার্জ গঠন করা হয়েছে। যে অভিযোগগুলোতে তার ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি হিসেবে এবং ১৪ দলীয় জোটের একজন প্রভাবশালী নেতা হিসেবে বিভিন্ন সময়ে ১৪ দলীয় জোটের মিটিংয়ে আন্দোলন দমনে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ, কারফিউ জারি, শুট এট সাইট, এগুলোর ব্যাপারে ওনার যে ভূমিকা, সেই কমান্ড এবং সুপিরিয়র রেস্পন্সিবিলিটির কারণে ওনার বিরুদ্ধে এই অভিযোগগুলো গঠন হয়েছে। তিনি বিভিন্ন সময়ে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন, ছাত্রদের সহিংস, সন্ত্রাসী, জামাত-শিবির, বিএনপি এগুলো বলে। তাদের হত্যা করাটা যে যৌক্তিক বা বৈধ এই ধরনের একটা ইমপ্রেশন তৈরি করেছেন। বিভিন্ন সময়ে উসকানিমূলক নানান ধরনের বক্তব্য, প্রেস কনফারেন্সে কথা বলেছেন। ওনার নানান ধরনের কনভারসেশন আছে। বিগত সময়ে যিনি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন শেখ হাসিনা, তার সাথে টেলিফোনে কথা বলে ড্রোন ব্যবহার করা, হেলিকপ্টার ব্যবহার করা, বোম্বিং করা, এভাবে ছাত্র-জনতাকে হত্যা করার যে পরিকল্পনা সেগুলো নিয়ে প্রাইম মিনিস্টারের সাথে ওনার আলোচনা হয়েছে। তিনি তার সম্মতি জানিয়েছেন, পরামর্শ দিয়েছেন।
তাজুল ইসলাম বলেন, কিভাবে আটক করা উচিত, আটক না করে কোর্টে প্রডিউস না করে জেলে না পাঠিয়ে কি করা উচিত, এই যে পুরো মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন হয়েছে বাংলাদেশে, সেই ব্যাপারে ওনার যে ভূমিকা, সেগুলোকে আমরা অভিযোগ আকারে নিয়ে এসেছিলাম। সেগুলোর ভিত্তিতে মোট আটটি অভিযোগ তার বিরুদ্ধে গঠন করা হয়েছে। তিনি বলেন, সর্বশেষ যে আট নম্বর অভিযোগটা ছিল; কুষ্টিয়া শহরে ছয়জন ব্যক্তিকে তার পরামর্শে, নির্দেশে সেখানকার পুলিশ এবং প্রশাসন, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, ১৪ দলীয় জোট মিলে এই পাঁচজন ছাত্র-জনতাকে হত্যা করা। এই সব মিলিয়ে আটটি অভিযোগ তার বিরুদ্ধে গঠন করা হয়েছে।
আগামী ৩০ নভেম্বর তার এই মামলার ওপেনিং স্টেটমেন্টের জন্য এবং সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন ধার্য করা হয়েছে। একই রকম অভিযোগে মাহবুবুল আলম হানিফ, যিনি আওয়ামী লীগের অন্যতম একজন নেতা এবং তারসহ কুষ্টিয়া আওয়ামী লীগের আরো তিনজন নেতাসহ মোট চারজনের বিরুদ্ধে আরো একটি মামলায় অভিযোগ গঠন হয়েছে এবং সেটার বিচারের জন্য ২৫ নভেম্বর সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন ধার্য করা হয়েছে।
ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ গঠনের শুনানি চলাকালে আদালত উনার কাছে জানতে চেয়েছিলেন, জুলাইয়ের ঘটনায় তিনি দোষ স্বীকার করবেন কি না। এ বিষয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে চিফ প্রসিকিউটরকে প্রশ্ন করা হলে বলেন, উনি বলেছেন যে, অভিযোগগুলো রাজনৈতিক। এই প্রশ্নটা মূলত আইন মেনেই আসামিকে করা হয়েছে। কারণ হচ্ছে আজকে অভিযোগ গঠনের পরে আইনের বিধান হচ্ছে আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হয় যে, আপনার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ গঠন হয়েছে, আপনি কি নিজেকে নির্দোষ মনে করেন, নাকি দোষী মনে করেন? যদি উনি নিজেকে দোষী বলেন, তাহলে আদালত এখানেই এটার ভিত্তিতে একটা রায় দিয়ে ফেলতে পারেন। আর যদি উনি মনে করেন যে তিনি নির্দোষ, নির্দোষ হলে মামলাটি বিচারে যাবে। সাক্ষ্য-প্রমাণের মাধ্যমেই তাকে প্রমাণ করতে হবে তিনি নির্দোষ, আর প্রসিকিউশন প্রমাণের চেষ্টা করবে তিনি দোষী। এই প্রশ্নের জবাবে তিনি একটা জবাবই শুধু দিতে পারবেন, সেটা হচ্ছে উনি দোষী না নির্দোষ। এর বাইরে তিনি যে সব বক্তব্য দিয়েছেন এগুলো আমলে নেয়ার কোনো সুযোগ নেই।
এদিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ইনুকে ট্রাইব্যুনালের হাজতখানা থেকে আসামির কাঠগড়ায় তোলা হয়। এরপর তার উপস্থিতিতেই প্রসিকিউশনের আনা অভিযোগ পড়ে শোনান ট্রাইব্যুনাল। একপর্যায়ে দাঁড়াতে বলে ইনুর উদ্দেশে ট্রাইব্যুনাল বলেন, “আপনার বিরুদ্ধে আটটি অভিযোগ আনা হয়েছে। আপনি ‘গিল্টি প্লিড’ (দোষ স্বীকার) করলে আমাদের কাজ শেষ হয়ে যায়। নয়তো আমরা বিচার শুরু করব।”
জবাবে ইনু বলেন, ‘আমি কয়েকটি অভিযোগ শুনেছি। বাকিগুলো শুনিনি। তবে আপনারা আমার আবেদনটি আমলে নিচ্ছেন না।’ তখন ট্রাইব্যুনাল বলেন, হ্যাঁ। আমরা আপনার আবেদনটি রিজেক্ট করেছি। আপনি দোষ স্বীকার করবেন কি না বলুন। ইনু বলেন, ‘যে অভিযোগগুলো পড়া হয়েছে আমি সব শুনিনি। তখন চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ফরমাল চার্জের কপি দিলে তিনি পড়তে পারবেন।’
এ সময় ইনু বলেন, ‘অনুমতি দিলে মাননীয় ট্রাইব্যুনালকে আমি দুটি কথা বলতে চাই। তার এমন কথায় প্রসিকিউশন থেকে বলা হয় এখানে অন্য কোনো কথা বলার সুযোগ নেই। প্রত্যুত্তরে কয়েকটা কথা বলে জবাব দিতে চান বলে জানান ইনু।’ ট্রাইব্যুনাল বলেন, এটির সুযোগ নেই। আপনি আইনজীবী নিয়োগ করেছেন। যা বলার ওনার মাধ্যমে বলবেন।
তখন ইনু বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা দুইবার বলেছেন দেশে গায়েবি মামলা হচ্ছে। আইন উপদেষ্টাও গায়েবি মামলা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। একই সাথে গায়েবি মামলার ঝড় থামছে না বলে জানিয়েছেন। তার এসব কথা শুনে আমি খুশি হয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘সিএমএম কোর্টে আমার বিরুদ্ধে ৬০টি মামলা চলমান। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালেও গায়েবি অভিযোগ এনেছে প্রসিকিউশন। আমি রাজনৈতিক আক্রোশের শিকার। গায়েবি মামলার ঝড়ে আক্রান্ত। তবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন, ৫ আগস্টের আগে যা হয়েছে তা ভুলে যান।’ এ সময় ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যানের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি আল্লাহর পর বিচার নিষ্পত্তির প্রতিনিধি আপনি। আপনি ন্যায়বিচার করবেন। আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ।’ ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর আবদুস সোবহান তরফদার ও প্রসিকিউটর আবদুস সাত্তার পালোয়ান।
গত ২৮ অক্টোবর ইনুর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী। একপর্যায়ে কোনো অভিযোগই সত্য নয় জানিয়ে তার অব্যাহতির আবেদন করেন তিনি। একই সাথে ট্রাইব্যুনালকে এসব অভিযোগ পুঙ্খানুপুঙ্খ দেখার অনুরোধ জানান। তবে ১৪ দলীয় জোটের শরিক নেতা হিসেবে কোনো দায় ইনু এড়াতে পারেন না বলে জানিয়েছে প্রসিকিউশন। জুলাই-আগস্ট আন্দোলন দমনে শেখ হাসিনার সাথে তার কথোপকথনের মাধ্যমেও কমান্ড রেসপনসিবিলিটি প্রমাণ করে। তাই তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের প্রার্থনা করা হয়। পরে আদেশের জন্য আজকের দিন নির্ধারণ করেন ট্রাইব্যুনাল।
গত বছরের ২৬ আগস্ট রাজধানীর উত্তরা থেকে হাসানুল হক ইনুকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বর্তমানে বিভিন্ন মামলায় কারাগারে রয়েছেন তিনি। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তথ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন এই জাসদ নেতা। তবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে জোটের প্রার্থী হিসেবে কুষ্টিয়ায় নিজ আসনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর কাছে হেরে যান তিনি। জুলাই-আগস্ট আন্দোলন ঘিরে কুষ্টিয়ায় হত্যাকাণ্ডের শিকার হন ছয়জন। একই সাথে আহত হন বেশ কয়েকজন। এর পরিপ্রেক্ষিতে হাসানুল হক ইনুর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা হয়। পরে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা। এরই ধারাবাহিকতায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন।
একনজরে ইনুর বিরুদ্ধে আনা আটটি অভিযোগ
এক. অভিযোগগুলো হলো হাসানুল হক ইনু তৎকালীন ক্ষমতাসীন ১৪-দলীয় জোটের অন্যতম শরিক দল জাসদের প্রধান হিসেবে ঊর্ধ্বতন অবস্থানে থেকে গত বছরের ১৮ জুলাই ‘মিরর নাউ’ নামে ভারতের মুম্বাইভিত্তিক একটি গণমাধ্যমে আন্দোলন দমনে এবং আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য আন্দোলনকারীদের বিএনপি, জামায়াত, সন্ত্রাসী ও সাম্প্রদায়িক ট্যাগ প্রদান করে এবং তাদের বিরুদ্ধে বলপ্রয়োগের উসকানি প্রদান করেন।
দুই. গত বছরের ১৯ জুলাই গণভবনে শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ও হাসানুল হক ইনুর উপস্থিতিতে ১৪ দলীয় জোটের সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভায় কোটা সংস্কার ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে দেশব্যাপী সেনা মোতায়েন করে নিরীহ, নিরস্ত্র আন্দোলনকারীদের দেখামাত্র গুলি করার নির্দেশ দেয়া হয় এবং তা সরকার কার্যকর করে। এই নির্দেশ দেয়ার সাথে তৎকালীন ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোট সরকারের অংশীদার জাসদের সভাপতি হিসেবে ইনু তার ঊর্ধ্বতন অবস্থান থেকে সরাসরি সম্পৃক্ত হয়ে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন। সেই সাথে তিনি প্ররোচনা দিয়েছেন, উসকানি দিয়েছেন ও সহায়তা করেছেন।
তিন. হাসানুল হক ইনু গত বছরের ২০ জুলাই দুপুরে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনের উদ্দেশ্যে তার নিজ জেলা কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপারকে ফোন করেন। আন্দোলনকারীদের ছবি দেখে তালিকা প্রণয়ন ও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।
চার. শেখ হাসিনার সাথে হাসানুল হক ইনু সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করতেন। আন্দোলন দমনে মারণাস্ত্র (লেথাল উইপন) ব্যবহার করে, ছত্রীসেনা নামানো, হেলিকপ্টার দিয়ে গুলি করে হত্যা, আটক ও নির্যাতনের ষড়যন্ত্র, পরিকল্পনা করেন এবং শেখ হাসিনাকে এমন নির্দেশনা দিতেন ইনু।
পাঁচ. গত বছরের ২৭ জুলাই হাসানুল হক ইনু নিউজ টোয়েন্টিফোর চ্যানেলে আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য আন্দোলনকারীদের বিএনপি, জামায়াত, সন্ত্রাসী, জঙ্গি, সাম্প্রদায়িক ইত্যাদি ট্যাগ প্রদান করে উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান করেন। সেই সাথে কারফিউ জারি করে মারণাস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে সরকারের হত্যাকাণ্ড সংঘটনসহ নির্যাতন-নিপীড়নকে কৌশলে সমর্থন করেন এই আসামি।
ছয়. গত বছরের ২৯ জুলাই শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের সভায় হাসানুল হক ইনু উপস্থিত ছিলেন। আন্দোলনকে দমন ও ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য আন্দোলনকারীদের বিএনপি, জামায়াত, সন্ত্রাসী ও সাম্প্রদায়িক ট্যাগ প্রদান করেন তিনি। হাসানুল হক ইনু জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব দেন এবং এর মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ১৪ দলীয় জোটের সশস্ত্র ক্যাডারের হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনকে বৈধতা দেয়।
সাত. গত বছরের ৪ আগস্ট আন্দোলন দমনে কারফিউ জারি করে গুলিবর্ষণসহ শেখ হাসিনার গৃহীত পদক্ষেপ অনুমোদন করেন হাসানুল হক ইনু। শেখ হাসিনার সাথে টেলিফোনে এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়নে ষড়যন্ত্র এবং সহায়তায় সম্পৃক্ত ছিলেন ইনু। পাশাপাশি তিনি নিজ দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশ প্রদান করেন।
আট. গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা, হাসানুল হক ইনু ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের ষড়যন্ত্র, পরিকল্পনা ও নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ, এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী ও পুলিশ নিরীহ-নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর কুষ্টিয়া শহরের বিভিন্ন স্থানে গুলি চালায়। এতে সেদিন আশরাফুল ইসলাম, সুরুজ আলী (বাবু), আবদুল্লাহ আল মুস্তাকিন, মো: উসামা, বাবলু ফরাজী ও ইউসুফ শেখ নামের ছয়জন নিহত হন।
মাহবুবউল আলম হানিফসহ ৪ জনের বিচার শুরু
জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে কুষ্টিয়ায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফসহ চারজনের বিচার শুরু হয়েছে। পলাতক থাকায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন ট্রাইব্যুনাল।
গতকাল রোববার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন-অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো: মঞ্জুরুল বাছিদ এবং জেলা ও দায়রা জজ নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।
মাহবুবউল আলম হানিফ ছাড়াও মামলার অপর আসামিরা হলেন কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সদর উদ্দিন খান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতা।
গত ৫ অক্টোবর এই চারজনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমা দেন প্রসিকিউশন। এতে সুনির্দিষ্ট তিনটি অভিযোগ আনা হয়। এর মধ্যে রয়েছে উসকানিমূলক বক্তব্য, ষড়যন্ত্র ও কুষ্টিয়ায় ছয়জনকে হত্যা। পরে প্রসিকিউশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। পরদিন ৬ অক্টোবর মাহবুবউল আলম হানিফসহ চারজনের বিরুদ্ধে আনা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল-২। একইসাথে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারিসহ তাদের আজ হাজিরের নির্দেশ দেয়া হয়। গত ১৪ অক্টোবর মাহবুবউল হানিফসহ চারজন ট্রাইব্যুনালে হাজির না হওয়ায় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। জুলাই-আগস্ট আন্দোলন ঘিরে কুষ্টিয়ায় হত্যাকাণ্ডের শিকার হন ছয়জন। একই সাথে আহত হন বেশ কয়েকজন। এর পরিপ্রেক্ষিতে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুবউল আলম হানিফসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। পরে প্রতিবেদন দাখিল করে তদন্ত সংস্থা।



