বিশিষ্ট লেখক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব:) মো: দেলোয়ার হোসেন বলেছেন দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা গেলে আর্থিক খাতেও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হতো। ব্যাংকিং খাতে লুটপাট, খেলাপি ঋণ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থপাচার করে অলিগার্ক শ্রেণী দেশের বাইরে থেকে ফের ষড়যন্ত্র করছে। তিনি বলেন, যেকোনো দেশে বিপ্লব বা গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও বহিঃশত্রুর আক্রমণের ঝুঁকি না থাকলে অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনাতে বহুমুখী উদ্যোগ নেয়া যায়। কিন্তু জুলাই আন্দোলনের পর অলিগার্কদের ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট দেয়া সম্ভব হয়নি বলেই এখন তারা ষড়যন্ত্রের সুযোগ খুঁজছে।
দেলোয়ার হোসেন বলেন, ৫ আগস্টের পর যে গণ-আকাক্সক্ষা ছিল সেখানে নির্বাচনের মতো বিষয়টি প্রাধান্য পায়নি বা প্রায়োরিটি লিস্টে ছিল না। কারণ ড. মুহাম্মদ ইউনূস যে পরিমাণ ভলিউম অব এক্সপেক্টেশন নিয়ে সারফেস করেছিলেন, ওনার কাছে সংস্কারের প্রবল ইচ্ছা থেকে অনেকে বলেছিলেন ৫/১০ বছর বা যতদিন হায়াত থাকে উনি দেশের জন্য কাজ করুক। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্বাচনটাকেই অনেক বড় পাওয়া মনে হচ্ছে। কারণ নির্বাচন কমিশন সংস্কারের সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন হয়নি।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক দেলোয়ার হোসেন লেখক হিসেবে ডেল এইচ খান নামে পরিচিত। ‘আধুনিক দৃষ্টিকোণে সানজুর দ্য আর্ট অব ওয়্যার’ বইটির জন্য তিনি অর্জন করেছেন সেনাপারদর্শিতা পদক। ‘তোমাকেই খুঁজছে সেনাবাহিনী’ তার একটি জনপ্রিয় বই। তার বইগুলো মূলত ইতিহাসের বিভিন্ন বিখ্যাত যুদ্ধ, রণকৌশল, যোদ্ধাদের জীবনকাহিনী ঘিরেই রচিত হয়। ‘রোহিঙ্গা রঙ্গ’ বিশ্লেষণাত্মক বইটিতে তিনি রোহিঙ্গা জাতির ইতিহাস ও ভবিষ্যৎ, উভয় সময়ের বাস্তবতাকে তুলে ধরেছেন। অনলাইনে সিভি লেখার খুঁটিনাটির মতো ব্যবহারিক জ্ঞান নিয়েও পরামর্শ দেন তিনি। জনতার দলে মুখ্য সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন ডেল এইচ খান।
নয়া দিগন্ত : প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের উদ্যোগ তো অন্তর্বর্তী সরকার নিয়েছে?
দেলোয়ার হোসেন : প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের পাশাপাশি বড় বড় খুনি বাহিনীর সংস্কারের প্রয়োজন ছিল। যে খুনি বাহিনীর সহায়তায় ফ্যাসিজম গড়ে ওঠে। বিপ্লবী সরকার কাজ শুরু করে খুনিদের ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট দিয়ে। বাস্তবে এমন অনুকূল পরিবেশ তৈরি হলে ফ্যাসিজম আবার পুনর্জন্মের সুযোগ পায়। যে লোকটিকে দিয়ে আয়নাঘরসহ বিভিন্ন অপকর্ম করিয়েছেন তাকে কোনো রকম শাস্তির আওতায় না আনলে পরবর্তীতে রাজনৈতিক ক্ষমতায় যেই আসুক তাকে সে আবার প্রলোভন দেখাবে যে ওই সিস্টেমে করেন। তারই ফলাফল হচ্ছে নূরের ওপর প্রাণঘাতী আঘাত। তারা তো এই ধরনের আঘাত করে অভ্যস্ত। একবার তাকে টিকিট দিয়ে বলেন, করতো দেখি, সে আবার দ্বিগুণ উৎসাহে করে দেখাবে।
নয়া দিগন্ত : আর্থিক খাতে ইনসাফ আসেনি কেন মনে করছেন?
দেলোয়ার হোসেন : আর্থিক ব্যবস্থাপনায় একটা ইনসাফ প্রত্যাশিত ছিল। প্রধান উপদেষ্টা দায়িত্ব নিয়েই বলেছিলেন ব্যাংক ঠিক করে দিচ্ছি। চাঁদাবাজি কমেনি, ঘুষও কমেনি। যারা ব্যাংকগুলোকে দেউলিয়া করে অর্থপাচার করে বিদেশে গিয়ে কলকাঠি নাড়ছেন তাদের সম্পদ দ্রুত ক্রোক করে জনসম্পদে পরিণত করা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদের দুই-তৃতীয়াংশ গেছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে হ্যান্ডেল করার প্রবলেম নিয়ে। পুলিশ এখনো বুঝে উঠতে পারেনি। আর্মি যে রোলটা করছে এইটা তার করার কথা না। একজন সার্জেন্টকে দিয়ে নার্সের কাজ করানোর চেষ্টা করলে ওই এফিসিয়েন্সিটা পাবেন না। একজন সৈনিককে অস্ত্র হাতে দিয়ে প্রশিক্ষণের পর এখন তার হাতে লাঠি তুলে দিলে তার যে মাইন্ডসেট, ইফেক্টিভনেস কোনোটাই অপটিমাম লেভেলে পাবেন না। সে তো লাঠির প্র্যাকটিস করেনি কখনো।
নয়া দিগন্ত : শুরু থেকেই পুলিশে দ্রুত লোকবল নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ তো দেয়া যেত
দেলোয়ার হোসেন : অফকোর্স। হাতে তো এলিমেন্ট ছিল। ড. ইউনূসকে শুরুতেই পরামর্শ দিয়েছিলাম যে রিটায়ার্ড আর্মি, নেভি, এয়ারফোর্স, পুলিশ, বিজিবির সদস্য রয়েছে তাদের কাজে লাগাতে। কারণ তাদের অনেকের অবসরের আগে ৩-৫ বছর চাকরি এক্সটেনশন করার সুযোগ থাকে। ওই লটটা হাতে ছিল। তাদের চাকরির বিধিমালাতেই আছে ‘কলব্যাক’। যেকোনো জরুরি পরিস্থিতি বা যুদ্ধকালীন সময়ে এসব ফোর্সের সদস্যদের কাজে লাগানোর জন্য চুক্তি করা হয়। এমনকি কলব্যাকে দ্রুত যাতে আসতে পারে সে জন্য একটা ইউনিফর্ম দিয়ে দেয়া হয়।
নয়া দিগন্ত : আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো হলে এর ওপর নির্ভর করে অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার কাজ শুরু করা যেত।
দেলোয়ার হোসেন : ইতিহাস পর্যালোচনা করলে বিপ্লব পরবর্তী যেকোনো দেশে ল অ্যান্ড অর্ডার সিচুয়েশন থাকে প্রায়োরিটি নাম্বার ওয়ান। নাম্বার টু হচ্ছে বহিঃশত্রুর হাত থেকে দেশকে রক্ষা করা। কারণ ওই মুহুর্তে দেশটা খুব ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকে। এই নাজুক অবস্থায় একটা রাষ্ট্রকে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র কিন্তু অনেকভাবে আক্রমণ করে ফায়দা লোটার চেষ্টা করে। এসব নিয়ন্ত্রণ করা গেলে সাধারণ মানুষের ভেতর একটা আস্থা ফিরে আসে এবং তখন অর্থনৈতিক বিশৃঙ্খলা দূর করার কাজে হাত দেয়া সম্ভব হয়।
নয়া দিগন্ত : প্রতিবেশী দেশ ভারতে হাসিনা আশ্রয় নিয়েছেন এবং পার্টি অফিস খুলে পুনরায় রাজনৈতিক কার্যক্রম শুরুর কথা শোনা যাচ্ছে
দেলোয়ার হোসেন : হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর প্রথমেই ভারত বাংলাদেশবিরোধী ব্যাপক মিডিয়া অপপ্রচার শুরু করে। আগেকার দিনে অস্ত্র নিয়ে অ্যাটাক করে কিছু গ্রাম দখল করে ফেলত। এখনকার দিনে মিডিয়া দিয়ে অ্যাটাক করে। তো ড. মুহাম্মদ ইউনূসের একটা অ্যাডভান্সই ছিল যে ওনাকে মোল্লা বা জঙ্গি সাজাতে পারেনি।
নয়া দিগন্ত : এখনো তো নির্বাচনের কয়েক মাস বাকি, উপদেষ্টা পরিষদ কিভাবে আরো সক্রিয় ও কার্যকর হয়ে উঠতে পারে?
দেলোয়ার হোসেন : না এরা সবাই এক্সিট মুডে আছে। এরা আর পারবে বলে মনে হয় না। ওদের জন্য গেম ইজ ওভার।
নয়া দিগন্ত : একটাই লক্ষ্য নির্বাচন..
দেলোয়ার হোসেন : ইউনূস সাহেবের কাছে একটাই চাওয়া পাওয়া এখন নির্বাচন এবং তা দিতে না পারলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে সরে যাওয়া। প্রকান্তরে ওনার হাতে এখন জিনিস কিছুই নাই। ওনার উপদেষ্টা পরিষদ কখনই ও রকম চার্জড আপ ছিল না যে তারা স্ট্রংলি কিছু একটা করতে পারবে। বিদেশ থেকে যারা আসছেন উপদেষ্টা পরিষদে তারা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট বা হিউম্যান রিসার্চ নিয়ে অনেক দিন কাজ করেননি। তো ক্রাইসিস মোমেন্টে এসে কি করবেন। সম্ভবত প্যাসকেল বলে গিয়েছেন যে দেশ সমস্যা সমাধানে সবসময় এক্সপ্যাট্রিয়টদের মেধার ওপর নির্ভর করে ওই দেশের উন্নতির সম্ভাবনা খুব কম। তাদের মধ্যে ওই কনভিকশনটা থাকে না।
নয়া দিগন্ত : কিন্তু ঐকমত্য কমিশনে সংস্কারের জন্য বৈঠকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাজনীতিবিদরা তো সময় দিয়েছেন...
দেলোয়ার হোসেন : রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতার অভাবের চেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে মেধার অভাব। একজন রাজনৈতিক নেতাকে আপনি যদি জিজ্ঞেস করেন যে আমার বাচ্চার জন্য আপনার ফিউচার প্লান কি? সে ম্যাক্সিমাম বলতে পারবে আগামী নির্বাচন সম্পর্কে তার প্লান কি?
নয়া দিগন্ত : নির্বাচন পরিস্থিতি সামাল দেয়া কতটুকু সম্ভব হবে?
দেলোয়ার হোসেন : নির্বাচন কমিশন সংস্কারের জন্য যে কমিশন সুপারিশগুলো এসেছে, একটাও কার্যকর হয় নাই। কিভাবে নির্বাচনে আগের পরিস্থিতি রেখে ডিফারেন্ট রেজাল্ট আশা করেন। কালোটাকার ব্যবহার, পেশীশক্তির ব্যবহার সবই থাকবে। নির্বাচন কমিশনের এমন কোনো গুণগত পরিবর্তন দেখিনি যেগুলো দিয়ে এসব সমস্যা নির্বাচন কমিশন মোকাবেলা করবে। কাদেরকে দিয়ে করাবে। এটা এক্সিকিউশনের ব্যাপার। রাজনৈতিক দলগুলো যদি কালোটাকার মালিকদের মনোনয়ন দেয় তাহলে তা রোধ করার মতো নির্বাচন কমিশনের হাতে ইনস্ট্রুমেন্ট কই। একপাল গাধার ভেতর থেকে আমাকে একটা সিংহ ধরে নিয়ে আসতে বললে কিভাবে আনব। নির্বাচনে চাঁদাবাজ, খুনি, চিহ্নিত সন্ত্রাসী, আগের করাপটেড যারা, যাদের করাপশনের হিস্ট্রি আছে এগুলো রহিত করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। তফসিল ঘোষণার পর রাজনৈতিক দলগুলো প্রার্থী ঘোষণা করলে নির্বাচন কমিশনের হাতে এমন কোনো মেকানিজম নেই যে এক রাতের মধ্যে মিটিং করে প্রার্থীদের আমলনামা ধরে ফেলতে পারবে। নির্বাচন কমিশন যদি রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে তাদের প্রার্থী তালিকা চেয়ে তা পাওয়ার পর ভেটিং শুরু করতে পারত, দুদক ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো অনুসন্ধান করতে পারত তাহলে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে প্রার্থী নিয়ে শুনানি করা যেত। অনলাইনে প্রার্থীদের আমলনামা নির্বাচন কমিশন দেখিয়ে বলতে পারত এই হচ্ছে তার আমলনামা, এই কারণে তাকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ দেয়া গেল না।
নয়া দিগন্ত : নির্বাচনের পর তাহলে সেই পুরাতন রাষ্ট্রকাঠামো, ভেঙে পড়া প্রতিষ্ঠান, প্রশাসন দিয়ে আমরা কি লাভ করব?
দেলোয়ার হোসেন : খুবই কঠিন। যে পুলিশ ঘুষসহ মাসিক একটা ভালো অ্যামাউন্ট পেত, সে দীর্ঘদিন ধরে এর বাইরে আছে, তার মানসিক অবস্থার কথা চিন্তা করেন, সুযোগ পেলে সে তো তার অপব্যবহার করবে না সে নিশ্চয়তা কোথায়।
নয়া দিগন্ত : ১৭ বছরের ফ্যাসিস্টের জঞ্জাল পরিষ্কার করার আশা থেকেই কি মানুষের এমন ধারণা ছিল?
দেলোয়ার হোসেন : ড. ইউনূস যেহেতু গ্লোবাল পার্সোন, আমরা ভেবেছিলাম ওনার ক্যাপাসিটি দিয়ে উনি নিশ্চয়ই ফ্যাসিস্ট যে এলিমেন্টগুলো আছে এগুলো ক্লিয়ার করবেন এবং প্রতিষ্ঠানগুলো দাঁড় করাবেন। সমস্যা হচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর রিপেয়ারে উনি দেশী লোকবলকে কাজে লাগাতে পারেননি। আমরা তাকে উপযুক্ত মনে করে সম্মান দিয়েছি তো রাইট ম্যান ওয়াজ সাপোজড টু বি ইন দ্য রাইট প্লেস। কিন্তু উনি ওনার পজিশন নেগোশিয়েট করলেন ছাত্রদের সাথে। এটা দুঃখজনক যে আমি প্রধান উপদেষ্টা হবো এবং তার বিনিময়ে তোমাদেরকে আমি তিনটা উপদেষ্টার সিট দেবো। এই পলিটিক্যাল ভাগাভাগি আমরা চাইনি। গ্রামীণ ব্যাংকের কয়েকজন বেনিফেসিয়ারিকে উনি বসালেন। তাড়াহুড়া করে একটা উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করতে গিয়ে উনি পরিচিতজনদের মধ্যে থেকেই অনেককে নিয়েছেন।
নয়া দিগন্ত : গত এক বছরে উপদেষ্টাদের কাজের মান সন্তোষজনক না হলে পরিবর্তনের সুযোগ তো ছিল?
দেলোয়ার হোসেন : কেউ একজন ক্রমাগত ভুল করছে এটা দেখে আপনার উচিত ছিল তাকে থামানো। নাহিদ ইসলামের ভদ্রতা বোধ ছিল তিনি পদত্যাগ করে চলে গেছেন, আরেকজনের ভদ্রতা বোধ নাও থাকতে পারে, না থাকলে যখন একটা ছেলে পিস্তল নিয়ে রওনা দিচ্ছে, হাঁসের মাংস নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করছে, আপনি মুরব্বি হিসেবে তাকে জবাবদিহিতার মধ্যে আনতে পারতেন। এটাতো নির্বাচিত সরকার না, সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট সরকার। ওনার কাছে আমাদের এক্সপেক্টেশন ছিল ছাত্রদের উনি ঠাণ্ডা করে পড়াশুনায় ব্যাক করাবেন। উনি বললেন, চাকরি করার দরকার নেই, সবাই ব্যবসা কর। দ্বিতীয়ত উনি রাজনৈতিক দল গঠনের যে স্বপ্ন অতীতে দেখেছিলেন, সেই জনশক্তি যেটা মিসক্যারেজ হলেও স্বপ্নটা আবার দেখার চেষ্টা করলেন, প্রকান্তরে একটা রাজনৈতিক দল করলেন। এন্টার একটা/দুইটা জেনারেশন পড়াশোনা ও একাডেমিক লক্ষ্য অর্জন থেকে শিফট করল, এই ছেলেরা তো চাকরি পাবে না। আমি জুলাই যোদ্ধা বললে তো কোনো অফিস তাকে চাকরি দেবে না।
নয়া দিগন্ত : তরুণদের রাজনৈতিক দলের বাইরেও আরো বিশাল তরুণ জনগোষ্ঠীকে গঠনমূলকভাবে কাজে লাগানোর সুযোগ কি ভেস্তে যাচ্ছে?
দেলোয়ার হোসেন : তরুণদের হাতে রং এক্সপেক্টেশন দেয়া হয়েছে। যে ছেলেটা চিন্তা করছিল এমবিএ করব, স্কলারশিপ নিয়ে দেশের বাইরে যাবো, জব শুরু করে বিয়ে করব তাদের সবার চোখে এখন উপদেষ্টা হওয়ার স্বপ্ন। সোশ্যাল ফেব্রিক্সটা নষ্ট হয়ে গেছে।
নয়া দিগন্ত : দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতিতে তরুণরা বিভ্রান্ত হয়েছে, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, সহিংসতায় জড়িয়ে পড়েছে ... রাজনীতিতে মেধা বিকাশের সুযোগ খুব পায়নি...
দেলোয়ার হোসেন : সরকার পতন ছাড়া সমন্বয়কদের ভালো কাজের কাভারেজ পত্রিকায় দেখা যায় না। বৃক্ষরোপণ বা সামাজিক কর্মকাণ্ডে তাদের উপস্থিতি নেই। আমাদের চোখের সামনে একটা জেনারেশন ক্র্যাশ হয়ে গেল। এটাও বড় এক বেইনসাফি। এই জেনারেশনটা এখন ভাবতে শুরু করেছে রাজনীতি তারা সবার চেয়ে ভালো বুঝে। একটা কম্পিউটার ভেঙে ফেলার মধ্যে আহামরি বীরত্বের ব্যাপার নাই কিন্তু সেটি বানাতে যে পরিশ্রম ও প্রযুক্তি প্রয়োজন সেই চিন্তাধারা থেকে তরুণরা সরে যাচ্ছে। এটা তারা টের পাচ্ছে না।