নিজস্ব প্রতিবেদক
হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা শুরু হচ্ছে আজ। ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে সূচনা ঘটছে এ উৎসবের। পাঁচ দিনের এ উৎসব শেষ হবে ২ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে মূর্তি বিসর্জনের মধ্য দিয়ে। ধর্মীয় এ উৎসবকে আনন্দমুখর করে তুলতে দেশজুড়ে প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। এ উপলক্ষে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতি শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মো: সাহাবুদ্দিন এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন। গত ২১ সেপ্টেম্বর দুর্গার আবাহন বা মহালয়ার মধ্য দিয়ে সূচনা হয় দেবীপক্ষের। সাধারণত দেবীপক্ষ শুরুর সাত দিন পর পাঁচ দিনের দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিক সূচনা ঘটে থাকে। এর আগে গতকাল সায়ংকালে তথা সন্ধ্যায় বোধনের মাধ্যমে দক্ষিণায়নের নিদ্রিত দেবী দুর্গার নিদ্রা ভাঙার জন্য বন্দনা পূজা করা হয়। আজ ষষ্ঠীতিথিতে সকালে দুর্গার ষষ্ঠ্যাদি কল্পারম্ভ ও ষষ্ঠীবিহিত পূজা অনুষ্ঠিত হবে। আগামীকাল সোমবার মহাসপ্তমী, মঙ্গলবার মহাষ্টমী, বুধবার মহানবমী এবং বৃহস্পতিবার বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জন ও বেলা ৩টায় শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। এবার দেবীর আগমন গজে, গমন দোলায়।
এ দিকে, দুর্গাপূজাকে ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে মণ্ডপে মণ্ডপে। রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দির, জগন্নাথ হল, কলাবাগান মাঠ, খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণ, বনানী মাঠ, বাড্ডাসহ রাজধানীর সব পূজামণ্ডপের কাজ পুরোদমে চলছে। ইতোমধ্যে অনেক জায়গায় আলোকসজ্জার কাজ শেষ হয়ে গেছে। এখন শুধু মণ্ডপের সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ চলছে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্যমতে, চলতি বছর সারা দেশে ৩৩ হাজার ৩৫৫টি মণ্ডপ ও মন্দিরে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। গত বছর যা ছিল ৩১ হাজার ৪৬১টি। সেই হিসেবে এবার পূজার আয়োজন বাড়ছে এক হাজার ৮৯৪টি। এ ছাড়া এবার ঢাকা মহানগরে ২৫৯টি পূজা হবে, যা গত বছরের চেয়ে সাতটি বেশি।
মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব বলেন, শারদীয় দুর্গাপূজা নিয়ে ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও ধর্ম উপদেষ্টার সাথে আলাদা বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে পূজা আয়োজনের নানা দিক আলোচনায় এসেছে। দুই উপদেষ্টা সুন্দরভাবে পূজা আয়োজনের কথা তাদের জানিয়েছেন। গত শুক্রবার পূজা উদযাপন পরিষদের এক সংবাদ সম্মেলনে সারা দেশের পূজামণ্ডপগুলোর জন্য ২২ দফা নির্দেশনা দেয়া হয়। এগুলোর মধ্যে আছে পূজার আয়োজন-উদ্যাপনে স্থানীয় প্রশাসন, সব রাজনৈতিক দল, সেনাবাহিনী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ছাত্রনেতাদের সম্পৃক্ত করা। ২ অক্টোবর যথানিয়মে সন্ধ্যার মধ্যে প্রতিমা বিসর্জন করা। দুর্গম এলাকায় পূজার আয়োজন স্থানীয় সংশ্লিষ্ট সবার সাথে আলোচনা করে আয়োজকেরা স্থির করবেন। উচ্চ শব্দে মাইক বাজানো, পিএসেট-আতশবাজি-পটকার ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। ভক্তিমূলক বা ধর্মীয় সঙ্গীত ছাড়া অন্য কোনো গান বাজানো থেকে বিরত থাকতে হবে। কারো ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগে এমন কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে হবে। ইভটিজিং-ছিনতাই ইত্যাদিতে কেউ জড়িত হলে আইন নিজের হাতে তুলে না নিয়ে তাদের পুলিশে সোপর্দ করতে হবে। গুজবে বিভ্রান্ত না হয়ে যেকোনো দুর্ঘটনার সংবাদ তাৎক্ষণিক সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেলে জানাতে হবে, প্রয়োজনে ৯৯৯ নম্বরে যোগাযোগ করতে হবে। দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা ও প্রশাসনের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে হবে। যেকোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা তাৎক্ষণিকভাবে প্রশাসন ও পুলিশকে অবহিত করতে হবে।
২,৮৫৭ পূজামণ্ডপের নিরাপত্তায় কাজ করছে ৪৩০ প্লাটুন বিজিবি
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা-২০২৫ উপলক্ষে সীমান্তবর্তী এলাকা এবং রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের দুই হাজার ৮৫৭টি পূজামণ্ডপের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর ৪৩০ প্লাটুন সদস্য। সীমান্তবর্তী এলাকাসহ সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিজিবির ২৪টি বেইজ ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। উৎসব চলাকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে কাজ করছে তারা।
বিজিবির নিরাপত্তাধীন মোট দুই হাজার ৮৫৭টি পূজামণ্ডপের মধ্যে সীমান্তবর্তী (সীমান্তের আট কিলোমিটারের মধ্যে এবং পার্বত্য এলাকার ১৫টি পূজামণ্ডপসহ) এলাকায় এক হাজার ৪১১টি এবং সীমান্তবর্তী এলাকার বাইরে রয়েছে এক হাজার ৪৪৬টি পূজামণ্ডপ। বাইরের পূজামণ্ডপগুলোর মধ্যে রাজধানী ঢাকা এবং নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় মোট ৪৪১টি; চট্টগ্রাম মহানগরী, রাউজান ও রাঙ্গুনিয়ায় মোট ৬৯৪টি এবং অন্যান্য স্থানে ৩১১টি পূজামণ্ডপ রয়েছে। পূজা উপলক্ষে যেকোনো অনাকক্সিক্ষত ঘটনা প্রতিরোধে বিজিবির গোয়েন্দা নজরদারি শক্তিশালী করার পাশাপাশি সীমান্ত এলাকায় বিশেষ টহল পরিচালনা করা হচ্ছে।
দুর্গাপূজা উপলক্ষে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন বাংলাদেশ খ্রিষ্টান অ্যাসোসিয়েশনেদুধু
দুর্গাপূজা উপলক্ষে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন বাংলাদেশ খ্রিষ্টান অ্যাসোসিয়েশন জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভাপতি এলবার্ট পি. কস্টা এবং ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব জুয়েল আন্তনি চৌধুরী। বিবৃতিতে তারা বলেন, দুর্গাপূজা, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। দীর্ঘকাল ধরে হিন্দু সম্প্রদায় উৎসাহ-উদ্দীপনা ও উৎসবমুখর পরিবেশে নানা আয়োজনের মাধ্যমে পূজার আচার অনুষ্ঠান পালন করে আসছে । শুভেচ্ছা বার্তায় তারা আরো বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এখানে সব ধর্মের মানুষ তাদের ধর্মীয় উৎসব পালন করে। বাংলাদেশ খ্রিষ্টান অ্যাসোসিয়েশন শারদীয় উৎসব উপলক্ষে সবার সুখশান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন।



