বিশেষ সংবাদদাতা
মহেশখালী-মাতারবাড়ীতে নতুন শহরের জন্ম হবে বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, ‘শুধু গভীর সমুদ্রবন্দর নয়, আমাদের একটা ব্লু ইকোনমি গড়ে তোলার ভিশন নিয়ে কাজ করতে হবে। ওই এলাকা শুধু একটা ফ্যাসিলেটিং জোন হিসেবে নয়; বরং সেখানে একটা নতুন শহরের জন্ম হবে। সেখান থেকে আমাদের আন্তর্জাতিকভাবে কানেক্টিভিটি তৈরি হবে। সমুদ্রই হবে বিশ্বের পথে আমাদের মহাসড়ক।’
গতকাল বুধবার প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন নবগঠিত মহেশখালী সমন্বিত উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (মিডা) সদস্যরা। এর নেতৃত্বে ছিলেন মিডার চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুণ। এ সময় তিনি এ কথা বলেন।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন- মিডার সদস্য কমোডর তানজিম ফারুক ও মো: সারোয়ার আলম এবং প্রধান উপদেষ্টার এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ ও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সচিব মো: সাইফুল্লাহ পান্না। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বৈঠকে গভীর সমুদ্র নিয়ে গবেষণার ওপর বিশেষভাবে জোর দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। মহেশখালী অঞ্চলে একটি আন্তর্জাতিক মানের ট্রেনিং ফ্যাসিলিটি গড়ে তোলার ওপরেও জোর দেন তিনি। এ ক্ষেত্রে বিশ্বে যারা বিশেষজ্ঞ আছেন প্রয়োজনে তাদের কাছ থেকে পরামর্শ ও সহযোগিতা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন প্রফেসর ইউনূস। তিনি বলেন, ‘আমরা সমুদ্রজগতে কখনো প্রবেশ করিনি। ওটা নিয়ে চিন্তাও করিনি। এ বিষয়ে গবেষণা, ফাইন্ডিংস নেই। এর সম্পর্কিত কী কী গবেষণা আছে, অন্য দেশের গবেষণাপত্র যেটা আমাদের সাথেও মিলবে ভালো সেগুলো খুঁজে বের করতে হবে এবং নিজস্ব গবেষণা করতে হবে। এ জন্য প্রতিষ্ঠান দরকার। অ্যাকাডেমিয়া গড়ে তুলতে হবে, ওশান ইকোনমি নিয়ে ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স আয়োজন করতে হবে।’ এর পাশাপাশি, পরিবেশ সংরক্ষণের ওপরেও জোর দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। বৈঠকে ইকো-ট্যুরিজম পার্ক করার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সেখানকার বনভূমি এখন কী অবস্থায় আছে, ভবিষ্যতে আমরা বনভূমিগুলোকে কী অবস্থায় দেখতে চাই সেই পরিকল্পনাও করতে হবে।’
বৈঠকে মহেশখালী-মাতারবাড়ী প্রকল্পের ওপর একটি প্রেজেন্টেশন দেন মিডার চেয়ারম্যান। মিডার আগামী চার মাসের কর্মপরিকল্পনা উপস্থাপন করেন তিনি।
আশিক চৌধুরী জানান, প্রকল্পটি তিন ধাপে সম্পন্ন হবে । প্রথম ধাপ ২০২৫ থেকে ২০৩০, দ্বিতীয় ধাপ ২০৩০ থেকে ২০৪৫ এবং তৃতীয় ধাপ ২০৪৫ থেকে ২০৫৫ পর্যন্ত। প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে প্রায় ২৫ লাখ লোকের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থান হবে এবং জিডিপিতে দেড় শ’ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যুক্ত হবে বলে জানান তিনি।
মাতারবাড়ী ও মহেশখালী হবে আগামীর সিঙ্গাপুর : আশিক চৌধুরী
আগামী ৩০ বছর পর কক্সবাজারের মাতারবাড়ী ও মহেশখালী চীনের সাংহাই বা সিঙ্গাপুরের বন্দরের মতো উন্নতমানের বন্দর তথা কমার্শিয়াল হাব হবে। এ সময়ে ২৫ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে এখানে।
গতকাল বুধবার রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।
বিডার নির্বাহী সভাপতি বলেন, আগামী ১২০ দিনের মধ্যে প্রশাসনিক কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে। মহেশখালী সমন্বিত উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (এমআইডিএ) ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ৩৩ হাজার একর আয়তনের জমিতে তিনটি ধাপে (২০২৫ থেকে ২০৩০, ২০৩০ থেকে ২০৪৫ ও ২০৪৫ থেকে ২০৫৫) এর কার্যক্রম বাস্তবায়িত হবে।
এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে প্রত্যক্ষভাবে প্রায় দেড় লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ লক্ষ্যে মহেশখালী সমন্বিত উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। মহেশখালী ও মাতারবাড়ী নিয়ে সরকারের পরিকল্পনা জানিয়ে আশিক চৌধুরী বলেন, আমরা এটাকে টাউনশিপ হিসেবে দেখতে চাই। পৃথিবীর সবচেয়ে সাকসেসফুল ডিপ সি পোর্টসসহ টাউনশিপ সিঙ্গাপুরকে বলা হয়। আরেকটা পোর্টের কথা প্রায়ই উঠে আসে, সেটা হচ্ছে সাংহাই। মাতারবাড়ী শহর হলে দেশের অর্থনীতির জিডিপিতে প্রায় দেড় শ’ বিলিয়ন ডলার যুক্ত হবে বলে উল্লেখ করেন আশিক চৌধুরী। তিনি বলেন, প্রায় দেড় শ’ বিলিয়ন ডলারের মতো আমরা জিডিপিতে কোন কন্ট্রিবিউশন করছি, এই এলাকার থেকে। এটা হবে বাণিজ্যিক হাব। যে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের রিজার্ভে সঞ্চিত হবে। প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে, প্রায় দেড় লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে আশা প্রকাশ করে আশিক চৌধুরী বলেন, চূড়ান্তভাবে প্রায় দেড় লাখ লোকের প্রত্যক্ষভাবে কর্মসংস্থান আমরা আশা করছি। এ ছাড়াও পরোক্ষভাবে প্রায় ২৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান আমরা আশা করছি।
এ প্রকল্প তিনটি ধাপে ২০২৫ সাল থেকে ২০৫৫ সাল পর্যন্ত কাজ করবে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, তিনটা পিরিয়ডে এই প্রকল্পকে ২০২৫ সাল থেকে ২০৫৫ সাল পর্যন্ত সাজাতে পারেন। প্রথম পাঁচ বছরকে আমরা বলছি, বিকাশকাল। এই সময়ে ফাউন্ডেশনের কাজ, সড়ক সংযোগের কাজ করা হবে। এরপরের সময়টা হচ্ছে, পরিবেশ উন্নয়নকাল। সেখানে আমরা বন্দর উন্নয়নের কাজগুলো শেষ করব। সাথে সাথে কিছু শিল্প কারখানা দাঁড়িয়ে যাবে। এটা ২০৪৩-৪৪ সাল পর্যন্ত হবে আমরা আশা করছি।
এক প্রশ্নের জবাবে আশিক চৌধুরী বলেন, যেকোনো ধরনের অস্থিতিশীলতা বিনিয়োগের গতিকে ধীর করে দিতে পারে
উত্তরা ইপিজেড বন্ধ ঘোষণায় আগামীতে বৈদেশিক বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হতে পারে বা এ ঘটনাকে পুঁজি করে কোনো ধরনের আশঙ্কা তৈরি হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যেকোনো ধরনের অস্থিতিশীলতা বিনিয়োগের গতিকে স্লো করে দিতে পারে। অন্তত যদি আমরা খুব স্পষ্ট বিনিয়োগকারীদেরকে এই কথাটুকু ব্যাখ্যা করতে না পারি, যে কেন এই ধরনের দুর্ঘটনা হলো এবং এটাকে প্রতিহত করার জন্য ভবিষ্যতে আমরা কী করব? এটা যদি আমরা ঠিকভাবে না বলতে পারি, তাহলে এই সমস্যা থেকে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘আপনি যদি গত জুন-জুলাই থেকে এফডিআইয়ের (প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ) ট্র্যাক দেখেন, তাহলে দেখা যাবে এফডিআইতে জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বরে একটা বড় ডিপ হয়েছিল। তারপর আমরা অক্টোবর, নভেম্বর, ডিসেম্বর থেকে স্লোলি ইকোনমি রিকভার করা শুরু করলাম। এফডিআই আবার ব্যাকট্র্যাক করা শুরু করল। এখন আমরা একটা নম্বরে চলে আসছি, যেটা গত বছরের এই সিমিলার টাইমের তুলনায় অনেক বেশি। আমরা পরিস্থিতি ভালো করার জন্য চেষ্টা করছি। শ্রমিক আইন নিয়ে অনেক ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয় জানিয়ে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, ‘শ্রমিকদের জন্য কী আইন হবে, সরকারের অবস্থা কী হবে, ব্যবসায়ের জন্য কী আইন হবে, এই ট্রাঙ্গুলার রিলেশনশিপকে আরো কিভাবে ভালো করা যায়, এটা নিয়ে কাজ করতে হবে।’