বর্ষবরণে ফ্যাসিবাদ ও ফিলিস্তিনে গণহত্যার বিরুদ্ধে বার্তা

সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক
Printed Edition
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা থেকে বের হওয়া বর্ষবরণের আনন্দ শোভাযাত্রা : নয়া দিগন্ত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা থেকে বের হওয়া বর্ষবরণের আনন্দ শোভাযাত্রা : নয়া দিগন্ত

হাজারো প্রাণের উচ্ছ্বাসে ধর্ম-বর্ণের গণ্ডি পেরিয়ে বাংলা নতুন বছর ১৪৩২ বরণ করেছে রাজধানীবাসী। এবারের বৈশাখী আনন্দ শোভাযাত্রায় ফ্যাসিবাদ অবসানের বার্তার সাথে ফিলিস্তিনে গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদও উঠে আসে। ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথে রাজধানী জুড়ে আনন্দ উৎসবে মেতে ওঠে মানুষ। রমনার বটমূল, চারুকলা, টিএসসিসহ ঢাকার সব বিনোদন স্পটে মানুষের ঢল নামে। উৎসবের মাধ্যমে বাংলা বর্ষপঞ্জির ১৪৩১ সনকে বিদায় জানিয়ে ১৪৩২ সনকে স্বাগত জানানো হয়।

দিনের শুরুতে মূল আয়োজনের বাইরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক, সামাজিক সংগঠন নানান অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

ছায়ানটের আয়োজনে রমনা বটমূলে ভোর ৬টা ১৫ মিনিটে প্রায় দেড়শ জনের সুরবাণীতে নতুন বছরকে স্বাগত জানানো শুরু হয়। এতে ফিলিস্তিনে ইসরাইলি গণহত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়ে অনুষ্ঠানে এক মিনিট নীরবতাও পালন করে ছায়ানট।

দিনের শুরুতে উপস্থিতি কিছুটা কম থাকলেও ৭টার পর পর সড়কে ঢল নামে মানুষের। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই রঙিন পোশাকে রমনার বটমূলে আসেন নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে। উৎসবকে ঘিরে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় রমনার বটমূল চত্বর। এছাড়াও পার্কের ভেতরের বিভিন্ন স্থানজুড়েও রয়েছে লোকসমাগম।

এবার রমনার বটমূলে পূর্ব-পশ্চিমে অর্ধবৃত্তাকার ৭২ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৩০ ফুট প্রস্থের মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয়েছে এ বর্ণাঢ্য আয়োজন। ছায়ানটের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এবার মঞ্চে মোট ২৪টি গান পরিবেশনা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ৯টি সম্মিলিত সঙ্গীত, ১২টি একক কণ্ঠে পরিবেশনা এবং ৩টি পাঠ। নববর্ষের শুভেচ্ছা বক্তব্য পাঠ করেন ছায়ানটের নির্বাহী সভাপতি ড. সারওয়ার আলী। অনুষ্ঠান শেষ হয় জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনার মাধ্যমে।

সকাল ৯টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয় বর্ণাঢ্য বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রাটি শাহবাগ, টিএসসি মোড়, শহীদ মিনার, শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্র, দোয়েল চত্বর হয়ে বাংলা একাডেমির সামনের রাস্তা দিয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টা শেষে পুনরায় চারুকলা অনুষদে গিয়ে শেষ হয়।

লোক-ঐতিহ্য এবং চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের চেতনাকে ধারণ করে আরো বড় পরিসরে ও বৈচিত্র্যপূর্ণভাবে এ বছর শোভাযাত্রার আয়োজন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’ প্রতিপাদ্যে আয়োজিত এ শোভাযাত্রার নেতৃত্ব দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন, কৃষক ও রিকশাচালক প্রতিনিধি, নারী ফুটবলার এবং ২৮টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সদস্যসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষ অংশ নেন। শোভাযাত্রা বর্ণিল মুখোশ, রঙিন পোস্টার, প্ল্যাকার্ড ও ঐতিহ্যবাহী সাজসজ্জায় উৎসবমুখর হয়ে ওঠে। এবারের শোভাযাত্রায় ৭টি বড়, ৭টি মাঝারি ও ৭টি ছোট মোটিফসহ মোট ২১টি শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হয়। মূল মোটিফ ছিল ‘স্বৈরাচারের প্রতিকৃতি’। এ ছাড়াও শোভাযাত্রায় পায়রা, মাছ, বাঘ। ৩৬ জুলাই টাইপোগ্রাফি আর পানির বোতলের মোটিফ মনে করিয়ে দেয় জুলাই আন্দোলনে নিহত মুগ্ধের কথা।

ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানিয়ে এতে ফিলিস্তিনের পতাকা ও প্রতীকী মোটিফ যেমন- তরমুজের ফালি ব্যবহৃত হয়। এর মাধ্যমে শোভাযাত্রায় ফিলিস্তিনে গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদও উঠে আসে। আর ফ্যাসিস্টের প্রতিকৃতির মাধ্যমে দেয়া হয় ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক বার্তা। এর আগে শনিবার ভোরের দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয় ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রার’ জন্য তৈরি করা ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’ মোটিফ। পরে একদিনের মধ্যেই ‘ফ্যাসিবাদের প্রতিকৃতি' আবার নির্মাণ করে শোভাযাত্রার আয়োজন সংশ্লিষ্টরা। এ মোটিফটি ছিল শোভাযাত্রার সামনে। নতুন করে তৈরি করা এ ‘মোটিফের’ উচ্চতা ১৬ ফুট।

সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, ঢাবি ভিসিসহ অনেকে শোভাযাত্রায় অংশ নেন। এ ছাড়া চাকমা, মারমা, গারো, বাঙালিসহ ২৮টি জাতিগোষ্ঠীর উৎসবে অংশ নেন।

শোভাযাত্রায় অংশ নেয় বাংলাদেশ মিউজিক্যাল ব্যান্ড অ্যাসোসিয়েশন (বামবা)। এ ছাড়া কৃষককে গুরুত্বপূর্ণ থিম হিসেবে শোভাযাত্রায় তুলে ধরা হয়। নবপ্রাণ আন্দোলনের তত্ত্বাবধানে সাধু ও বাউলদের অংশগ্রহণ, নারী ফুটবলারদের অংশগ্রহণও ছিল শোভাযাত্রায়।

আনন্দ শোভাযাত্রায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আজহারুল ইসলাম বলেন, ’আগেও পহেলা বৈশাখে চারুকলা থেকে যে শোভাযাত্রাটি হতো, তার নাম ছিল ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’। সেটি পরে মঙ্গল শোভাযাত্রা করা হয়েছিল। আমরা আবার ‘আনন্দ শোভাযাত্রায়’ ফিরে গেলাম। এটাকে পুনরুদ্ধার বলা যেতে পারে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার ডিন অধ্যাপক আজহারুল ইসলাম বলেন, তরমুজ ফিলিস্তিনিদের কাছে ‘প্রতিরোধ ও অধ্যবসায়ের প্রতীক’। ইসরাইলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে কয়েক দশক ধরে ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি প্রতীক হিসেবে উপস্থাপন করা হলেও মূলত এটি তাদের পতাকা বোঝাতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এর কারণ হলো ফলটির বাইরের অংশের রঙ সবুজ। আর ভেতরের অংশগুলোর রঙ লাল, সাদা ও কালো। এ রঙগুলো ফিলিস্তিনের পতাকার রঙের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি : ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)তে বর্ণিল আয়োজনে ও উৎসবমুখর পরিবেশে বাংলা নববর্ষ উদযাপিত হয়। সকাল ৯টা থেকে ডিআরইউ প্রাঙ্গণে সদস্যদের মাঝে মুড়ি-মোয়া, নকুলদানা, মুড়কি, মুড়ালি, কদমা ও বাতাসা পরিবেশন করা হয়। ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সঙ্গীত পরিবেশন করেন ডিআরইউ সদস্য, সন্তান ও অতিথি সঙ্গীতশিল্পীরা। দুপুরে ডিআরইউ ক্যান্টিনে সাদা ভাত, ডিম, মুরগি/মাছ, বেগুন ভাজি, শুঁটকি ভর্তা, সবজি ও আম ডাল পরিবেশন করা হয়।

দিনভর অনুষ্ঠানে ডিআরইউ সভাপতি আবু সালেহ আকনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেলের সঞ্চালনায় সাবেক সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা, ইলিয়াস হোসেন, রফিকুল ইসলাম আজাদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন মাসুম, মনির হোসেন লিটন, রাজু আহমেদ, কবির আহমেদ খান, মশিউর রহমান খান, সহসভাপতি গাযী আনোয়ার, যুগ্ম সম্পাদক নাদিয়া শারমিনসহ অন্য কর্মকর্তা ও ডিআরইউ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে শিল্পীরা গান পরিবেশন করেন।

চট্টগ্রামে উৎসবমুখর পরিবেশে বাংলা নববর্ষ উদযাপন

চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, বন্দর নগরী চট্টগ্রামে উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপিত হয়েছে বাংলা নববর্ষ-১৪৩২। ওই দিন পয়লা বৈশাখ ১৪৩২ উপলক্ষে জেলা প্রশাসন চট্টগ্রাম কর্তৃক আলোচনা সভা, পুরস্কার বিতরণ এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান জেলা শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে আয়োজন করা হয়।

সকালে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমের সভাপতিত্বে ও চান্দগাঁও ভূমি সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো: ইউসুফ হাসানের সঞ্চালনায় পয়লা বৈশাখের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বিভাগীয় কমিশনার ড. মো: জিয়াউদ্দীন পয়লা বৈশাখের বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রার শুভ উদ্বোধন করেন। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি (ক্রাইম ম্যানেজমেন্ট) ওয়াহিদুল হক চৌধুরী ও সিএমপির উপ-কমিশনার (অতিরিক্ত ডিআইজি) নেছার উদ্দিন আহমেদ।

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন জেলা আনসার-ভিডিপি কমান্ডার মো: আবু সোলায়মান ও জেলা মহিলাবিষয়ক উপ-পরিচালক আতিয়া চৌধুরী। শেষে অনুষ্ঠান মঞ্চে দলীয় সঙ্গীত ও দলীয় নৃত্য পরিবেশন করেন চট্টগ্রাম জেলা শিশু একাডেমি ও জেলা শিল্পকলা একাডেমির শিক্ষার্থীরা।

রংপুরে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা

রংপুর ব্যুরো জানায়, কেউ খেলছেন লাঠি খেলা, কেউ ধরছেন মাছ। কারো হাতে লাঙল জোয়াল, কেউ বয়ে চলেছেন পালকি।

সোমবার (১৪ এপ্রিল) এই ধরনের নানা ঐতিহ্যবাহী উপকরণের প্রদর্শনী ছিল রংপুর মহানগরীতে বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রায়। ছিল ঠেংগা, ঘোড়ার গাড়ি, গড়ুর গাড়ি, ভ্যান রিকশাসহ নিত্যদিনের ব্যবহার্য নানা উপকরণ। ছিল ফ্যাসিবাদ বিরোধী নানা আলপনা, মোটিফ।

বেলা সোয়া ১১টায় জিলা স্কুলের প্রধানর গেটে শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন বিভাগীয় কমিশনার শহিদুল ইসলাম। সাথে ছিলেন রেঞ্জ ডিআইজি মো: আমিনুল ইসলাম, মহানগর পুলিশ কমিশনার মজিদ আলী, ডিসি মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল, এসপি আবু সাঈমসহ সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সংগঠন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং শ্রেণী-পেশার হাজার হাজার মানুষ। দেড় ঘণ্টাব্যাপী নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে শোভাযাত্রাটি। যা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। এর আগে জিলা স্কুলের বটতলায় জেলা প্রশাসন এবং পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে শুরু হয় সাংস্কৃতিক ঐক্য পরিষদের পরিবেশনা। পরে টাউন হল মাঠে উদ্বোধন করা হয় পাঁচ দিনব্যাপী মেলার। হাজার হাজার বিভিন্ন বয়সী ও শ্রেণী-পেশার মানুষ অংশ নেন উৎসবে। এ ছাড়াও রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে হয় শোভাযাত্রা ও মেলা।

উৎসবে অংশ নেয়া সবার কণ্ঠে ছিল আয়োজনে ছিল প্রাণ। ছিল না কোনো আতঙ্ক। সবার কণ্ঠের ৫ আগস্ট পরবর্তী বাংলাদেশ বিনির্মাণে ঐতিহ্য লালন পালন করার প্রত্যয়।

বরিশালে বর্ণিল আয়োজন

বরিশাল ব্যুরো জানায়, নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ কে বরণ করেছে বরিশালবাসী। সোমবার সকাল ৯টায় বরিশাল সার্কিট হাউজ চত্বরে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে জাতীয় সঙ্গীত ও বৈশাখী সঙ্গীতের মাধ্যমে শুরু হয় বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা। এতে অংশ নেয় বরিশাল সিটি করপোরেশন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, বাংলাদেশী সাংস্কৃতিক জোট, বরিশাল সংস্কৃতিকেন্দ্র, জাসাস, সূচনা সাংস্কৃতিক সংসদ, সেইন্ট বাংলাদেশ, শিল্পকলা ও শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন। শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দেন বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার মো: রায়হান কাওছার, ডিআইজি মঞ্জুর মোর্শেদ আলম, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেনসহ বরিশাল বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসনের শীর্ষ ব্যক্তিরা।

শোভাযাত্রায় বাংলাদেশের জাতীয় ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাথে সংশ্লিষ্ট নানা অনুষঙ্গের ডিসপ্লে প্রদর্শন করা হয়। হাতি, ঘোড়া, ঢেঁকি, পালকি, জেলে, মজুর, কৃষকসহ সব শ্রেণীর গ্রামীণ ঐতিহ্যের সম্ভারে সরব হয়ে ওঠে নববর্ষের শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রাটি বরিশাল নগরীর সার্কিট হাউজ থেকে শুরু হয়ে কাকলীর মোড়, বিবির পুকুর, গির্জামহল্লা, নগর ভবন, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এবং হেমায়েত উদ্দিন ঈদগাহ ও বরিশাল ক্লাব হয়ে পুনরায় সার্কিট হাউজে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে নির্মিত মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন বরিশাল জেলা শিল্পকলা একাডেমি ও শিশু একাডেমির শিল্পীরা।

বিকেল থেকে নগরীর বেলস্ পার্কে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে শুরু হয় ০৭ দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা। মেলায় হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে মুখরিত হয় মেলা প্রাঙ্গণ। সন্ধ্যায় মেলা প্রাঙ্গণেও পরিবেশিত হয় সাংস্কৃতিক অন্ষ্ঠুান।

খুলনায় বর্ণাঢ্য আয়োজন

খুলনা ব্যুরো জানায়, আনন্দঘন পরিবেশে সোমবার খুলনায় বাংলা নববর্ষকে বরণ করা হয়। এ উপলক্ষে খুলনা জেলা প্রশাসন বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা, লোকজ মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

সকালে রেলওয়ে স্টেশন প্রাঙ্গণ থেকে আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়ে শহীদ হাদিস পার্কে গিয়ে শেষ হয়। শোভাযাত্রায় সরকারি-বেসরকারি দফতরের কর্মকর্তা, বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ অংশ নেন। এরপর শহীদ হাদিস পার্কে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বিভাগীয় কমিশনার মো: ফিরোজ সরকার বক্তৃতা দেন। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মো: হুসাইন শওকত, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (শিক্ষা ও আইসিটি) দেবপ্রসাদ পাল, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) আবু সায়েদ মো: মনজুর আলম, পুলিশ সুপার টি এম মোশাররফ হোসেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

জেলা কারাগার, হাসপাতাল ও সরকারি শিশু পরিবার, এতিমখানাগুলোতে ঐতিহ্যবাহী বাংলা খাবার পরিবেশন এবং শিশু পরিবারের শিশুদের নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো স্ব-স্ব ব্যবস্থাপনায় উৎসবমুখর পরিবেশে পয়লা বৈশাখ উদযাপন করে। শহীদ হাদিস পার্কে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের খুলনা কার্যালয়ের আয়োজনে দিনব্যাপী লোকজ মেলা অনুষ্ঠিত হয়।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মাঠে বেলুন, ফেস্টুন ও পায়রা উড়িয়ে পয়লা বৈশাখের কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন ভিসি প্রফেসর ড. মো: রেজাউল করিম। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে চারুকলা স্কুল থেকে বের হয় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। দিনব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মাঠে অনুষ্ঠিত হয় বৈশাখী মেলা।