প্রত্যন্ত এলাকায় আলো ছড়াচ্ছে ‘চিন্তন গণগ্রন্থাগার’

শহর থেকে প্রায় ১৭ কিলোমিটার দূরে কুহালং ইউনিয়নের গুংগুরু পাড়ায় প্রান্তিক খেয়াং জনগোষ্ঠীর জন্য এ গ্রন্থাগার গড়ে তুলেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া মেথুইচিং খেয়াং।

মিনারুল হক, বান্দরবান
Printed Edition
চিন্তন গ্রন্থাগারে মেঝেতে বসেই ছোট্ট ছেলেমেয়েরা বই পড়ছে
চিন্তন গ্রন্থাগারে মেঝেতে বসেই ছোট্ট ছেলেমেয়েরা বই পড়ছে |নয়া দিগন্ত

প্রযুক্তির এই যুগে যেখানে বই পড়ার আগ্রহই দিন দিন কমে যাচ্ছে, সেখানে বান্দরবানের প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকায় জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছে ‘চিন্তন গণগ্রন্থাগার’। শহর থেকে প্রায় ১৭ কিলোমিটার দূরে কুহালং ইউনিয়নের গুংগুরু পাড়ায় প্রান্তিক খেয়াং জনগোষ্ঠীর জন্য এ গ্রন্থাগার গড়ে তুলেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া মেথুইচিং খেয়াং।

শিক্ষায় পিছিয়ে থাকা নিজের জনগোষ্ঠীর দুরবস্থা দেখে গত আগস্ট মাসে তিনি নিজ উদ্যোগে প্রায় ২০০ বই সংগ্রহ করে চালু করেন পাঠাগারটি। বর্তমানে পাড়ার কমিউনিটি সেন্টারে অস্থায়ীভাবে চলছে গ্রন্থাগারের কার্যক্রম। বই রাখার জন্য উপযুক্ত জায়গা ও আসবাবপত্র না থাকলেও শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে তরুণ-তরুণী ও প্রবীণরাও নিয়মিত বই পড়তে আসছেন এখানে।

গল্প-উপন্যাস, কবিতা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক নানা ধরনের বইয়ে সাজানো এই গ্রন্থাগারে ছুটির দিনে শিশু-কিশোরদের ভিড় বেশি থাকে। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, খেয়াং সম্প্রদায়ের ছেলেমেয়েরা মেঝেতে বসেই মনোযোগ দিয়ে বই পড়ছে।

গ্রন্থাগারের প্রতিষ্ঠাতা মেথুইচিং খেয়াং বলেন, স্কুল ছুটির পর ছেলেমেয়েরা মোবাইল ফোনে আসক্ত হয়ে পড়ছে, কেউ কেউ বিপথেও যাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে তাদের ফিরিয়ে আনতে গ্রন্থাগার করার চিন্তা আসে আমার। এখন অনেকেই বই পড়ায় আগ্রহী হয়ে ওঠচ্ছে। দেখে ভালো লাগছে। তিনি স্বপ্ন দেখেন, এক দিন এই গ্রন্থাগার হবে খেয়াং জনগোষ্ঠীর শিক্ষার ভরসাস্থল।

গুংগুরু মুখ পাড়ার কারবারি ক্যচিং খেয়াং জানান, গ্রন্থাগার চালু হওয়ায় ছেলেমেয়েরা পড়ালেখায় আগ্রহী হয়ে উঠেছে। এলাকার যুব সঙ্ঘের সাধারণ সম্পাদক সাচিংপ্রু খেয়াং বলেন, প্রথমদিকে হাতে গোনা কয়েকজন আসত। এখন প্রতিদিন বই পড়তে ৪০-৫০ জন আসে। জায়গার অভাবে সবাইকে চেয়ার টেবিল দিতে পারি না। অনেকেই মেঝেতে বসে বই পড়েন। আরো কিছুসংখ্যক বই ও আসবাবপত্র পেলে কার্যক্রম আরো প্রসারিত হবে।

গতকাল শুক্রবার (২৯ আগস্ট) গ্রন্থাগারটি পরিদর্শন করেন বান্দরবান সরকারি কলেজের প্রভাষক মেহেদী হাসান ও স্থানীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বাচ্চু। তারা বলেন, যেখানে শহরে বই পড়ার প্রবণতাই ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে, সেখানে পাহাড়ের প্রত্যন্ত এলাকায় এ ধরনের উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শিক্ষার উন্নয়নে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করি।

তারা গ্রন্থাগারের উন্নয়নে সমাজের সামর্থ্যবান ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।