নিজস্ব প্রতিবেদক
ইসলামী ব্যাংক থেকে অর্থলুটের অভিযোগে অভিযুক্ত এস আলম গ্রুপের জব্দ করা শেয়ার বিক্রি করে ব্যাংকের দেনা পরিশোধের দাবি জানিয়েছে সচেতন ব্যবসায়ী ফোরাম। একই সাথে ব্যাংকের স্বাভাবিক কার্যক্রম ও স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনতে পূর্ববর্তী পরিচালনা পর্ষদের হাতে মালিকানা ফিরিয়ে দেয়ার দাবিও জানিয়েছেন সংগঠনের নেতারা।
গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানান তারা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সচেতন ব্যবসায়ী ফোরামের সদস্যসচিব ও ব্যবসায়ী নেতা মো: মুস্তাফিজুর রহমান। এতে উপস্থিত ছিলেন হকস বে-এর চেয়ারম্যান, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক এবং বারভিডার সভাপতি আব্দুল হক, শিল্পোদ্যোক্তা আল মামুন, ব্যবসায়ী আতাউল্লাহ প্রমুখ।
এ সময় বক্তারা বলেন, ইসলামী ব্যাংক দেশের প্রথম ইসলামী বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে দীর্ঘদিন শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রেখেছিল। কিন্তু গত কয়েক বছরে এক প্রভাবশালী গ্রুপ কর্তৃক ব্যাংক দখল, শেয়ার জালিয়াতি, অবৈধ নিয়োগ ও অর্থপাচারের কারণে ব্যাংকটির সুনাম ও স্থিতি মারাত্মক তিগ্রস্ত হয়েছে। তারা জানান, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের ২ শতাংশ শেয়ার হোল্ডিং বাধ্যবাধকতা অপব্যবহার করে প্রকৃত স্পন্সর ডিরেক্টরদের বোর্ড থেকে বাদ দিয়ে নির্দিষ্ট গ্রুপকে প্রভাবশালী আসনে বসানো হয়েছে ব্যাংকে।
বারভিডার সভাপতি আব্দুল হক বলেন, আর্থিক খাতে আর কোনো অলিগার্ক দেখতে চাই না। সব লোনকৃত ও পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনতে ব্যবস্থা নিতে হবে। এস আলমের তত্ত্বাবধানে থাকা শেয়ারগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক দ্রুত ডিপোজিট করে ব্যাংকের দায় পরিশোধের ব্যবস্থা করুক এবং পূর্ববর্তী পরিচালনা পরিষদের হাতে মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে। এস আলমের জব্দকৃত ও আদালতে অ্যাটাচকৃত সম্পদ বিক্রি করে ব্যাংকের দায় শোধ করা হোক।
এ ব্যবসায়ী নেতা বলেন, আর্থিক খাত বিশ্বাসের জায়গা। জোর দাবি জানাই এস আলম গ্রুপের অধীনে অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্তদের অবিলম্বে বহিষ্কার করে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সারা দেশের মেধাবী ও যোগ্য প্রার্থীদের পরীাভিত্তিক নিয়োগ করা হোক। ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ অডিট ও তদন্ত কমিটি গঠন করে পূর্ববর্তী লেনদেন, নিয়োগ ও শেয়ার হস্তান্তরের পূর্ণ হিসাব প্রকাশ করা হোক।
সচেতন ব্যবসায়ী ফোরামের সদস্যসচিব মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি-কে ঘিরে ভয়াবহ আর্থিক অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার চিত্র তুলে ধরা হয়। ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ইসলামী ব্যাংক দ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দেশের অন্যতম শীর্ষ ব্যাংকে পরিণত হয়। গার্মেন্টস, বড়, মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্পসহ প্রায় ছয় হাজার শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপন এবং প্রায় ৮৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানে এই ব্যাংকের অবদান ছিল অপরিসীম।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি এস আলম গ্রুপ রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রভাব খাটিয়ে ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালককে পদত্যাগে বাধ্য করে এবং ব্যাংকের বোর্ড দখল করে নেয়। এরপর নিজেদের অনুগতদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়ে ব্যাংকের প্রশাসনিক কাঠামোকে দুর্বল করে ফেলে। এস আলম গ্রুপ নামে-বেনামে ইসলামী ব্যাংক থেকে এক লাখ কোটি টাকারও বেশি অর্থ আত্মসাৎ করেছে। ফলে ব্যাংক মারাত্মক তারল্য সঙ্কটে পড়ে এবং অনেক ভালো মানের গ্রাহক ও শিল্পপ্রতিষ্ঠান ব্যাংক ত্যাগে বাধ্য হয়।
মুস্তাফিজুর রহমান আরো বলেন, এস আলম গ্রুপ ব্যাংকের মানবসম্পদ খাতেও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে। কোনো বিজ্ঞাপন বা পরীার মাধ্যমে নয়, বরং মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে প্রায় আট হাজার ৩৪০ জনকে অবৈধভাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে চার হাজার পটিয়া এবং সাড়ে সাত হাজারের বেশি নিয়োগ চট্টগ্রাম অঞ্চলে হয়েছে। এমনকি অনেকেই ভুয়া সনদপত্র ব্যবহার করে ব্যাংকে যোগ দিয়েছেন।
ফোরামের বক্তব্য অনুযায়ী, এসব অবৈধ নিয়োগের ফলে ব্যাংক প্রতি বছর প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার তির সম্মুখীন হচ্ছে, যা গত সাত বছরে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকারও বেশি। অন্যদিকে, প্রায় এক লাখ কোটি টাকা লোপাটসহ এই দু’টি বড় সঙ্কট মিলিয়ে ইসলামী ব্যাংক এখন টিকে থাকার জন্য লড়াই করছে। সচেতন ব্যবসায়ী ফোরামের প থেকে এসব অনিয়মের দ্রুত প্রতিকার এবং এস আলম গ্রুপের জব্দ করা শেয়ার বিক্রি করে ব্যাংকের দায় পরিশোধের দাবি জানানো হয়। পাশাপাশি, পূর্ববর্তী পরিচালনা পর্ষদের হাতে ব্যাংকের মালিকানা ফিরিয়ে দেয়ারও আহ্বান জানান তারা।
এদিকে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয় ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসিতে অবৈধভাবে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়োগ বাতিল এবং ব্যাংকটি থেকে শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের পাচার করা অর্থ ফেরত আনার দাবি জানিয়েছে সচেতন ব্যবসায়ী ফোরাম। এসব বিষয়ে দ্রুত পদপে নেয়া না হলে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ঘেরাওসহ কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ফোরামের নেতারা।
এসময় বক্তারা বলেন, ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি ব্যবসায়ী গ্রুপ এস আলম রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রভাবে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ও এমডিকে পদত্যাগে বাধ্য করে এবং বোর্ড দখল করে নেয়। পরবর্তী সময়ে তারা নিজেদের অনুগত ব্যক্তিদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দিয়ে ব্যাংকের প্রশাসনকে দুর্বল করে ফেলে। এস আলম গ্রুপ ব্যাংকের তহবিল থেকে নামে-বেনামে এক লাখ কোটি টাকারও বেশি অর্থ আত্মসাৎ করেছে। এতে ব্যাংকটি মারাত্মক তারল্য সঙ্কটে পড়ে এবং দেশের বড় শিল্পগ্রুপ ও ভালো গ্রাহকরা ব্যাংক ছাড়তে বাধ্য হন।
সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ীরা জানান, এস আলম গ্রুপ ব্যাংকের মানবসম্পদ খাতেও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে। কোনো বিজ্ঞাপন বা পরীার মাধ্যমে নয়, বরং মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে আট হাজার ৩৪০ জনকে অবৈধভাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে চার হাজার প্রার্থী চট্টগ্রামের পটিয়া এলাকা থেকে এবং সবমিলিয়ে সাড়ে সাত হাজারের বেশি প্রার্থী চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে নিয়োগ পান। তাদের অনেকেই ভুয়া সনদপত্র ব্যবহার করে ব্যাংকে যোগ দেন। সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ীরা জানান, অবৈধ নিয়োগের ফলে ব্যাংকটি প্রতি বছর প্রায় এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা তির মুখে পড়ছে, যা সাত বছরে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি। অন্যদিকে, ব্যাংকের এক লাখ কোটি টাকারও বেশি লোপাট হয়েছে। এ দুই সঙ্কট মিলে ইসলামী ব্যাংক এখন টিকে থাকার সংগ্রামে রয়েছে।
বারভিডা সভাপতি ব্যবসায়ী আব্দুল হক বলেন, এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম ওরফে এস আলম পালিয়ে যাওয়ার এক বছরেরও বেশি সময় পার হলেও ব্যাংক কর্তৃপ মানবিক কারণে এখনো অবৈধ নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারীদের বরখাস্ত করেনি। সম্প্রতি দতা যাচাই পরীায় অংশ না নিয়ে এসব কর্মকর্তা ব্যাংকের প্রতি অবাধ্যতা প্রকাশ করেছেন এবং অপপ্রচার চালাচ্ছেন যা ব্যাংকের স্থিতিশীলতার জন্য বড় হুমকি। বক্তারা দাবি করেন, ইসলামী ব্যাংকের ৮২ শতাংশ শেয়ার এখনো এস আলমের মালিকানায় রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক তা জব্দ করলেও এখনো লিকুইডেশন প্রক্রিয়া শুরু করেনি যা রহস্যজনক।