আইজিপিকে বেবিচক কর্মকর্তার চিঠি

এপিবিএন অধিনায়কের প্রত্যাহার চাওয়া নিয়ে তোলপাড়

আমিনুল ইসলাম
Printed Edition

বিমানবন্দরে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বেবিচক ও এপিবিএন সদস্যদের মধ্যে উত্তেজনা শেষ হচ্ছে না। সম্প্রতি বিমানবন্দরে নিয়োজিত ১৩ এপিবিএনের অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি সিহাব কায়সার খানকে প্রত্যাহার চেয়ে আইজিপিকে চিঠিকে দিয়েছেন বেবিচকের সদস্য (নিরাপত্তা) এয়ার কমোডর আসিফ ইকবাল। বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার বৈঠকের প্রায় ১৬ দিন পর শিষ্টাচারের অভিযোগ এনে এই চিঠি দেয়া হয়। তবে পুলিশ সদর দফতর থেকে বলা হয়েছে, ‘এমন অভিযোগ থাকলে তা নিয়মতান্ত্রিকভাবে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পাঠাতে হবে। সরাসরি আইজিপিকে নয়’। বিষয়টি নতুন করে আলোচনার সৃষ্টির হয়েছে।

পুলিশের পক্ষ থেকে প্রশ্ন উঠেছে বেবিচক সদস্য একটি বাহিনীর প্রধানের কাছে সরাসরি এমন পত্র প্রেরণ করতে পারেন কি না? বলা হচ্ছে বৈঠকে যদি এপিবিএন অধিনায়ক কোনো শিষ্টাচার বহির্ভূত বক্তব্য দিয়ে থাকেন তাহলে সেটার অভিযোগ বা বিচার উপদেষ্টা নিজেই করতে পারতেন। বা উপস্থিত সচিবকে দিয়েও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ পাঠাতে পারতেন। তা না করে বেবিচক সদস্য ঘটনার ১৬ দিন পর কি আইজিপিকে সরাসরি চিঠি দিতে পারেন কি না।

জানা গেছে, গত ২৪ আগষ্ট সন্ধ্যার পরে বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশির আহমেদ বিমানবন্দর পরিদর্শনে যান। সেখানে তিনি বিমানবন্দরে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের সচিব, বেবিচক চেয়ারম্যানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, এপিবিএনের অধিনায়কসহ অন্যান্য কর্মকর্তা, ম্যাজিষ্ট্রেট, গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের একপর্যাায়ে উপদেষ্টা শেখ বশির আহমেদ এপিবিএন অধিনায়কের কাছে তাদের বর্তমান কার্যক্রম, কবে থেকে বিমানবন্দরে মোতায়েনসহ কিছু বিষয় জানতে চান।

এ সময় এপিবিএন অধিনায়ক বিমানবন্দরে এপিবিএন মোতায়েন ও বর্তমান অবস্থা অবহিত করেন। পাশাপাশি ২০২৪ সালের ৫ আগষ্টের পরবর্তী সময়ে বিমানবন্দরে অবস্থান নিয়ে ব্যাখ্যা করেন। তিনি উপদেষ্টাকে বলেন, ‘হঠাৎ করে যখন বাংলাদেশে কর্মবিরতির একটি ব্যাপার ছিল পুলিশের, তখন জায়গাটায় ওই শূন্যতা হলে কিউআরএফ ফ্রম এয়ার ফোর্স ডিপ্লয়মেন্ট হয়। আপনারা (বাংলাদেশ বিমানবাহিনী) যদি ‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ এ আসেন, তাহলে বর্তমানে সেনাবাহিনী যেভাবে কাজ করছে জেলায়, মেট্রোতে.. তারা সবাই কিন্তু এইড করছে, কাকে? সিভিল পাওয়ারকে। মানে পুলিশকে এইড করছে। আপনারা (বিমান বাহিনী) তো আমাকে (এপিবিএন) এইড করছেন না, আপনারা তো আমাকে রিপ্লেস করে ফেললেন, আমি তো আমার জায়গাতে নাই।’ ইন এইড টু সিভিল পাওয়ারে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পুলিশকে যে সহায়তা দিচ্ছেন একইভাবে বিমান বাহিনী কর্তৃক এপিবিএনের সহায়তা না পাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন, যা বর্তমান বাস্তবতা। এপিবিএন অধিনায়ক সিহাব কায়সার খানের ওই বক্তব্যকেই শিষ্টাচার বহির্ভূত দাবি করে চিঠিতে তার প্রত্যহারের দাবি করে করা হয়। তবে বৈঠক চলাকালে উপদেষ্টা সব কথা শুনে বলেন, ‘আমরা পরবর্তীতে বসে বিষয়টি সমাধান করব’।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ১০ সেপ্টেম্বর পুলিশ সদরদফতরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই চিঠির বিষয়টি আলোচনা হয়। সেখানে বেবিচকের কর্মকর্তা এমন চিঠি তিনি দিতে পারেন কি না তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ওই সভাতে পুলিশের কর্মকর্তারা বলেন, একটি বাহিনীর প্রধানকে এভাবে লেখা বেবিচক সদস্যের কর্মপরিধিতে এখতিয়ার নেই। যেখানে উপদেষ্টা নিজে ও মন্ত্রণালয়ের সচিব উপস্থিত ছিলেন সেখানে শিষ্টাচার লঙ্ঘিত হলে তাদেরই পত্র প্রেরণ উচিত ছিল। কিন্তু তারা এ বিষয়ে কিছুই বলেননি। ১৬ দিন পর এমন বিধিবহির্ভূত পত্র প্রেরণের পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে কি না সেটি খতিয়ে দেখা জরুরি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বেবিচকের মুখপাত্র কাওসার মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ বিষয়ে মন্তব্য করা আমার উচিত হবে না। অপর এক কর্মকর্তা বলেন, এটি আইনি ব্যাপারে। বিমান বাহিনী কর্মকর্তা ডেপুটেশনে আসার পর ম্যাজিষ্ট্রেসি পাওয়ার প্রয়োগ করতে পারবেন কি না তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।

জানা যায়, গত বছরের ৫ আগষ্ট সাবেক সরকারের পতন হলে পরিস্থিতি বিবেচনায় আর্মড পুলিশের সদস্যরা বিমানবন্দর ত্যাগ করে। এ সময় ইন এইড টু সিভিল পাওয়ারের আওতায় বিমান বাহিনীর সদস্যরা বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ নেয়। পরে বাংলাদেশ পুলিশের অন্যান্য ইউনিট কাজে ফেরার আগেই এপিবিএন বিমানবন্দরে কাজে যোগ দেয়। কিন্তু তারা পূর্বের ন্যায় বিমানবন্দরের এয়ারসাইটে যেতে বাধাপ্রাপ্ত হয়। ২৯ অক্টোবর এয়ারসাইটে এপিবিএনের কমান্ড সেন্টারটিকে নিজেদের অফিস বানায় বিমান বাহিনীর সদস্যরা। পরে গুরুত্বপূর্ণ নথি ও মালামাল খোয়া গেছে অভিযোগে বিমানবন্দর থানায় একটি জিডি করে এপিবিএন। পরে বিষয়টি নিয়ে চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি পুলিশ সদরদফতরে আইজিপির উপস্থিতিতে বেবিচক কর্মকর্তাদের সাথে একটি বৈঠক হয়। বৈঠকে জিডি প্রত্যাহারের পর এপিবিএনকে পূর্বের ন্যায় এয়ারসাইটে ডিউটি করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসেন তৎকালীন চেয়ারম্যান। এরপর ১৭ ফেব্রুয়ারি এপিবিএন জিডি প্রত্যাহার করে নেয়। ১৮ ফেব্রুয়ারি আগের মতো ডিউটির জন্য এপিবিএন সদস্যদের মোতায়েন করতে চাইলে বেবিচক তাতে বাধা দেয়। বর্তমান সময় পর্যন্ত আইজিপিকে দেয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি বেবিচক। এপিবিএন বিমানবন্দরের বাইরে (ল্যান্ড সাইট) দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।