সাক্ষাৎকার : প্রফেসর ড. মো: শামছুল আলম

মাদরাসা শিক্ষায় গুরুত্ব দেয়া মানে দেশ নৈতিকভাবে এগিয়ে যাওয়া

“প্রান্তিক শ্রেণীর যে জনগোষ্ঠী তারা প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় খরচ জোগাতে পারে না। তার চেয়ে অনেক কম খরচ রয়েছে বলেই বিশাল একটা জনগোষ্ঠী মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষিত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে।”

রাশিদুল ইসলাম
Printed Edition
প্রফেসর ড. মো: শামছুল আলম
প্রফেসর ড. মো: শামছুল আলম

ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো: শামছুল আলম বলেছেন সময় এসেছে মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থাকে যুক্তিনির্ভর করে তোলার। এজন্য বাজেট বরাদ্দ জরুরি। গত ১৫ বছর মাদরাসা ছাত্রদের জঙ্গি তকমা দিয়ে রাষ্ট্রীয় অপপ্রচার চালানো হয়েছে। কিন্তু মাদরাসা ছাত্ররা আর অনগ্রসর থাকতে চায় না। তারা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্রে দেশে কিংবা বিদেশে সক্ষমতার স্বাক্ষর রেখেছে। বিগত সরকারগুলো মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থাকে বৈষম্যের নিষ্পেষণ থেকে উদ্ধার করতে পারেনি বরং অবহেলা করেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের কোনো আন্দোলনে এর আগে মাদরাসার ছাত্ররা এত সক্রিয় অংশগ্রহণ করেনি। জুলাই আন্দোলনে মাদরাসা ছাত্রদের শহীদ হওয়ার সংখ্যা অনেক বেশি। ডাকসু নির্বাচনে যারা নির্বাচিত হয়েছেন তাদের অধিকাংশই মাদরাসা পড়ুয়া। নরম স্বভাবের মানুষও যখন জুলুমের শিকার হয় তখন তার মধ্যেও দ্রোহের সৃষ্টি হয়। নিরীহ এসব মাদরাসার ছাত্রদের মধ্যে এত বঞ্চনা, জুলুম, অবহেলা ও অবজ্ঞা তাদের মধ্যে প্রচণ্ড দ্রোহের সৃষ্টি করেছে। জুলাই আন্দোলনে অংশগ্রহণকে তারা মোক্ষম সময় হিসেবে বেছে নেয়। কারণ মাদরাসা ছাত্রদের আন্ডারমাইন করা হয়েছে সবসময়। এ পরিস্থিতি থেকে তারা ঘুরে দাঁড়াতে চায়।

নয়া দিগন্তকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, প্রান্তিক শ্রেণীর যে জনগোষ্ঠী তারা প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় খরচ জোগাতে পারে না। তার চেয়ে অনেক কম খরচ রয়েছে বলেই বিশাল একটা জনগোষ্ঠী মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষিত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে এমন মানসিকতাসম্পন্ন মানুষকে কার্যকর শিক্ষা দিতে পারলে সৎ নেতৃত্বের প্রয়োজন পূরণ করা সম্ভব হবে । আমরা সে চেষ্টাই করছি।

নয়া দিগন্ত : বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রাজনৈতিক দলগুলোর লেজুড়বৃত্তি, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, হলে দখলদারিত্ব, গেস্টরুম কালচার, সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ে ছাত্রদের জীবন ও শিক্ষা বিপন্ন হয়ে আসছে দীর্ঘকাল, এ পরিস্থিতির পরিবর্তন কিভাবে সম্ভব? মাদরাসা ছাত্ররা কি এসব অপরাধমুক্ত?

শামছুল আলম : দেখুন বাংলাদেশে মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থা নীরবে নিভৃতে বিশাল ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ ইসলাম। একটা সুন্দর সমাজের স্বপ্ন সবাই দেখে। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখবে মাদরাসার ছাত্ররা। সবচেয়ে স্বচ্ছ, নৈতিকতার মানে উত্তীর্ণ, অপরিসীম ত্যাগের মানসিকতা নিয়ে, ভোগবাদী মানসিকতা থেকে দূরে থেকে তারা ন্যায়ের লড়াইয়ে রক্ত দিতে জানে। ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত মাদরাসার ছাত্ররা দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান ধরে রাখতে জানে। দুই-একটা যে ব্যতিক্রম নেই তা নয়। কিন্তু অধিকাংশ ছাত্র খোদাভীরু হওয়ার কারণে দুর্নীতি থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করে। ভবিষ্যৎ তাদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে। ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত ছেলেমেয়েরা অকুণ্ঠভাবে মাদরাসা পড়ুয়া ছেলেমেয়েদের সমর্থন দেবে এটা অকল্পনীয় ছিল। তারা দ্বিতীয় কোনো বিকল্প খুঁজে পায়নি। তারা দেখেছে তাদের এসব বন্ধুরা নারীর ইজ্জত হরণ করে না। মাদরাসা ছাত্রদের নিরাপদ মনে করছে তারা। গত পনেরো বছরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে পরিমাণ জুলুম হয়েছে এগুলোর সাথে মাদরাসাছাত্ররা একটাও ছিল না বরং তারা মাজলুম ছিল। সিটবাণিজ্য, দখল, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি এসব অপরাধে তারা না জড়িয়ে বরং নৈতিকতা ও সততার মানে নিজেদেরকে ধরে রেখেছে।

নয়া দিগন্ত : প্রশাসনিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় মাদরাসা ছাত্রদের গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কী ভূমিকা রাখছে?

শামছুল আলম : ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে আলেমদের লেখনীর ভূমিকা ছিল। মাদরাসা ছাত্ররা জুলাই আন্দোলনের মাধ্যমে সেই গৌরবের দিকে ফিরে যাচ্ছে। শিক্ষা, সংস্কৃতি ও উন্নয়নে মাদরাসা শিক্ষার্থীদের ভূমিকা আছে। ২৯টি বিসিএস ক্যাডারে তারা যোগ্যতার প্রমাণ রাখছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শ’ শিক্ষক আছেন যারা একসময় আলিয়া মাদরাসায় পড়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রোভিসি থেকে ভিসি ছিলেন মাদরাসা পড়ুয়া। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদরাসায় শিক্ষিত ছাত্ররা শিক্ষক হিসেবে গৌরবজনক ভূমিকা রাখছেন। জাতীয় সংসদে আগামীতে মাদরাসায় শিক্ষিত জনপ্রতিনিধি আরো বাড়বে। আমাদের চেষ্টার অনেকটাই এভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে।

নয়া দিগন্ত : শিক্ষাক্ষেত্রে সংস্কারের দাবি দীর্ঘদিনের, মাদরাসা শিক্ষার ক্ষেত্রে কী ধরনের সংস্কার প্রয়োজন?

শামছুল আলম : শিক্ষা আগাগোড়া অবহেলার শিকার। শিক্ষা কমিশন সভ্যতা, সংস্কৃতি ও ধর্মের ওপর ভিত্তি করে গঠন করলে আধুনিকতা ও নৈতিকতার সমন্বয়ে একটা জেনারেশন গড়ে তোলা সম্ভব। মাদরাসা ছাত্ররা আইসিটি নিয়ে বেশ আগ্রহ দেখাচ্ছে। মাদরাসার কারিকুলামগুলো প্রযুক্তিনির্ভর করে গড়ে তোলা জরুরি।

নয়া দিগন্ত : জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় হওয়ার কারণে ছাত্রদের শিক্ষাজীবনে ঘাটতির সৃষ্টি হয়েছে, এখন সেদিকে নজর দেয়া প্রয়োজন।

শামছুল আলম : সেদিকে বিশেষ নজর দেয়া হচ্ছে। মাদরাসা ছাত্রদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ক্লাসে উপস্থিতি বাড়ছে। শিক্ষার মান বাড়ানোর চেষ্টা করছি। শিক্ষক নিয়োগে যোগ্যতার ওপর প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। মাদরাসার মানোন্নয়নে বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সমঝোতা স্বাক্ষর করতে যাচ্ছি। তুরস্ক, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ আরব বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে আমরা চুক্তি করতে যাচ্ছি। মাদরাসা ছাত্ররা মিসরের আল আজহারসহ বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা নিতে যাচ্ছে এবং এ সংখ্যা আগের চেয়ে বাড়ছে। প্রচুর মাদরাসা ছাত্র তুরস্কে পিএইচডি করতে গেছে। সমাজে তাদের গ্রহণযোগ্যতা, নেতৃত্বের সক্ষমতা বাড়ছে বলেই অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাও তাদের স্বীকৃতি দিচ্ছে। বিদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে তারা দক্ষতার সাথেই কাজ করছে।

নয়া দিগন্ত : আগামী নির্বাচিত সরকারের কাছে আপনাদের প্রত্যাশা কী থাকবে?

শামছুল আলম : ভবিষ্যতের নির্বাচিত সরকারকে বুঝতে হবে মাদরাসা শিক্ষা এদেশের শিক্ষাব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অংশ। তারা এ সমাজের বাইরের কেউ না। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সমান গুরুত্ব মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থা পেলে দেশ নৈতিকভাবে এগিয়ে যাবে। কারণ মাদরাসা শিক্ষার্থীরা অনগ্রসর থাকতে চায় না। তারা বিশাল এক গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর অংশ। অন্যদেরকে পাহারা দেয়ার জন্য আনসার, ভিডিপি, পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির দরকার হলেও মাদরাসা শিক্ষার্থীদের জন্য এ প্রয়োজন নাই। কারণ তারা নিজেরাই নৈতিকমানে টিকে থাকার জন্য যথেষ্ট।

নয়া দিগন্ত : মাদরাসা শিক্ষায় খরচও তো প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার চেয়ে অনেক কম।

শামছুল আলম : খরচ কম কারণ নি¤œবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েরা মাদরাসায় পড়ে। গত ১৫ বছরে মাদরাসা ছাত্রদের বিরুদ্ধে জঙ্গি বলে মিথ্যা অপপ্রচার হয়েছে রাষ্ট্রীয়ভাবে। মাদরাসাছাত্র মানেই ধর্মান্ধ এ ধরনের অপপ্রচার থাকায় অনেক ভালো পরিবার ইচ্ছা থাকলেও তাদের ছেলেমেয়েকে মাদরাসায় দেয়নি। বিসিএস পরীক্ষায় প্রথম হওয়ার পরও মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে সে মাদরাসার ছাত্র ছিল বলে চাকরির সুযোগ না পেয়ে বিদেশে ভালো সুযোগ পেয়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে, এমন উদাহরণও রয়েছে। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা অবকাঠামোর তুলনায় মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থার অবকাঠামো অনেক দুর্বল। সারা দেশে মাদরাসা শিক্ষার জন্য মাত্র একটি শিক্ষা বোর্ড। সরকারি মাদরাসা মাত্র তিনটি। দেশে সরকারি স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় মাদরাসা শিক্ষায় রীতিমতো বৈষম্য চলছে যুগ যুগ ধরে। প্রাইমারি স্কুলে উপবৃত্তি, খাদ্যসহায়তার ছিটেফোঁটাও পায় না মাদরাসাগুলো। অথচ কোনো কোনো মাদরাসায় ১০ সহস্রাধিক ছাত্র রয়েছে। তারা ভর্তির জন্য চাপে থাকলেও জায়গা দিতে পারছে না।

নয়া দিগন্ত : মাদরাসা ছাত্রদের নিয়ে সামাজিকভাবে কী চাপা বিদ্রুপ বা এক ধরনের তুচ্ছ তাচ্ছিল্য কাজ করে?

শামছুল আলম : মাদরাসা ছাত্রদের সততা শিখানো হয়, নৈতিক মূল্যবোধের ওপর বিশেষ জোর দেয়া হয়। যার ফলে তাদের মধ্যে দেশপ্রেম তৈরি হয়। তারা সহজে দেশ ছেড়ে বিদেশে যেতে চায় না। বরং দেশ গড়তে চায়। এরই প্রমাণ দেখা গেছে জুলাই আন্দোলনে। মাদরাসায় পড়ুয়া অনেক যুগ্মসচিব থেকে শুরু করে সচিব পাবেন, তাদের মধ্যে কাউকে পাবেন না বিদেশে টাকা পাচার করেছে। আওয়ামী লীগের দেড় দশকে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হলেও তাদের মধ্যে কোনো মাদরাসা পড়ুয়াকে পাবেন না। ঘুষ খায় এমনও পাবেন না। দেশকে সমৃদ্ধ করার জন্য যে ধরনের নাগরিক দরকার তেমন ভবিষ্যৎ নাগরিক তৈরি হচ্ছে মাদরাসায়। অথচ সরকারের কোনো বাজেট বরাদ্দ নেই মাদরাসা শিক্ষায়। মাদরাসাগুলো চলে নিজেদের আয়ে। সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সরকারি বরাদ্দ পায়। স্কুল ও কলেজ শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য সারা দেশে অনেক টিসার্চ ট্রেনিং সেন্টার রয়েছে, পিটিআই আছে। অথচ সারা দেশে মাদরাসা শিক্ষকদের প্রশিক্ষণকেন্দ্র রয়েছে মাত্র একটি।

নয়া দিগন্ত : কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দলের প্রভাব রয়েছে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর এমন অভিযোগ উঠছে।

শামছুল আলম : এটা অসম্ভব। তাহলে অন্যান্য দলও এ ধরনের সুযোগ নিত। এতে মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থায় চরম বিশৃঙ্খলা তৈরি হতো। মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থাকে বিপাকে ফেলতে এ ধরনের অপপ্রচার চলছে। দুই একটি মিডিয়ায় এমন অপপ্রচার চললেও তারা আমাদের সাথে কথা বলার প্রয়োজন অনুভব করেনি। ঠিকানাবিহীন জনৈক আব্দুল হান্নান ব্যক্তি ও গোষ্ঠীস্বার্থে এ ধরনের প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। আব্দুল হান্নান প্রতীকী এবং এর পেছনে একটা বড় চক্র রয়েছে। এই কায়েমি গোষ্ঠীটি দীর্ঘদিন ধরে নিয়োগ বাণিজ্যের নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলেও তাদের বিরুদ্ধে এখন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ভিসি হিসেবে আমি দায়িত্ব নেয়ার পর কোনো নিয়োগ দেয়া না হলেও বলা হচ্ছে নিয়োগ দুর্নীতি হচ্ছে।

নয়া দিগন্ত : মাদরাসা ছাত্ররা উপযুক্ত ভবিষ্যৎ নাগরিক হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে সক্ষম?

শামছুল আলম : ইনশাআল্লাহ। আমি পুরোপুরি আশাবাদী। দেশের ভবিষ্যৎ নির্মাণে তারা সর্বক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেবে। অন্যদের নেতৃত্ব আমরা দেখেছি, তারা ব্যর্থ হয়েছে। ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষের প্রতি আস্থা তৈরি হচ্ছে। এ জমিনের নিচে শাহাজালাল, শাহ পরাণ শুয়ে আছেন। এদেশের মানুষের ঘুম ভাঙে আজানের সুরে। এদেশের ভবিষ্যৎ ইসলামের ভবিষ্যৎ। মাদরাসার ছাত্ররা বিসিএস পাস করছে। চিকিৎসক, প্রকৌশলী হচ্ছে। গত বছর বিসিএস পুলিশে প্রথম হয়েছে মাদরাসা ছাত্র। এরা কখনো অন্যায় করবে না, ঘুষ খাবে না, অশ্লীলতা করবে না এটাই আমাদের আশা। এটা কিন্তু ইসলামবিদ্বেষীদের গাত্রদাহ। জনগণ ইসলামের ওপর আস্থা রাখলে দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়া সম্ভব হবে।

নয়া দিগন্ত : মাদরাসা শিক্ষায় চ্যালেঞ্জগুলো কী কী?

শামছুল আলম : ভালো আলেম গড়ে তোলা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। শিক্ষকদের গুণগত মান নিশ্চিত করতে উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা প্রয়োজন। গত ১৫ বছর ধরে মাদরাসা শিক্ষা অবহেলিত। প্রশাসনিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়কে পুরোপুরি কার্যকর করে তোলা এখনো সম্ভব হয়নি। অর্গানোগ্রামে এক হাজার এক শ’ পদে নিয়োগ দিতে সিন্ডিকেটের অনুমোদন রয়েছে অথচ গত দশ বছর ধরে দুই শ’ স্টাফ নিয়ে চলতে হচ্ছে। গত এক বছরে একজনকেও নিয়োগ দেয়া যায়নি। সবধরনের অনুমোদন নিয়ে এক শ’ জনকে নিয়োগ দেয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত করার পর প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার লোককে অ্যাডমিট কার্ড দেয়া হয়েছে পরীক্ষা দেয়ার জন্য। তারা ঢাকায় চলে এসেছিল পরীক্ষা দেয়ার জন্যে। পরীক্ষার একদিন আগে এমবার্গো এসেছে এটি স্থগিত রাখার জন্য। চাইলেও সারা দেশের মাদরাসাগুলোকে উন্নত করতে পারছি না। ফ্যাসিস্ট আমলে নিয়োগপ্রাপ্তদের দিয়ে চলতে হচ্ছে। সতেরো শ’ মাদরাসা পরিচালনায় আমরা পদে পদে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছি। ফাজিল ও কামিল মাদরাসায় এখনো সহযোগী অধ্যাপকের পদ তৈরি করা হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকার উদাসীন ছিল। যারা প্রভাষক হিসেবে কাজ করছেন তারা ভবিষ্যৎ সম্পর্কে হতাশ হয়ে পড়ছেন। ভালো শিক্ষক আনতে পারছি না কারণ তারা দেখছে এখানে ক্যারিয়ার পঙ্গু হয়ে পড়ছে। অধ্যাপক হওয়ার সুযোগ নেই।

গত ৫ আগস্টের পর ফ্যাসিস্ট আমলে নিয়োগপ্রাপ্তদের পদোন্নতি দিয়ে অসঙ্গতি দূর করার চেষ্টা করছি। ইনহাউজ প্রশিক্ষণ ছাড়াও কামিল শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। জার্নাল প্রকাশের পাশাপাশি কারিকুলাম উন্নত করে সিলেবাস তৈরি হচ্ছে। এমফিল পিএইচডি কার্যক্রম চালুর বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। তিন বছরের সেশনজট শূন্যে নামিয়ে আনা হয়েছে দ্রুত পরীক্ষার ব্যবস্থা করে। এ বছর তিনটি পরীক্ষা নেয়া হয়েছে। ২০১৮ সালে পাস করার পর এখনো সার্টিফিকেট পায়নি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, এগুলো দ্রুত ছাড় দেয়া হচ্ছে। বিভিন্ন মাদরাসার প্রিন্সিপালরা এখানে এলেই ঘুষ নেয়া হতো, এটা ছিল এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ। এটাকে জিরো টলারেন্সে নামিয়ে আনা হয়েছে।