- অর্থ সাশ্রয় হবে, দ্রুত আরোগ্য লাভ করবে
- নেতৃত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়
অনুমাননির্ভর ওষুধ আর নয়, এবার চিকিৎসা হবে প্রমাণভিত্তিক। রোগী কোন রোগে ভুগছেন, ঠিক কোন জীবাণু রোগীকে অ্যাটাক করেছে অথবা জীবাণু ছাড়া অন্য রোগ হলে ঠিক কী রোগ বাসা বেঁধেছে শরীরে সেটা না জানা পর্যন্ত চিকিৎসক রোগীকে কোনো ওষুধ দেবেন না, অথবা অন্য কিছু দিয়ে (যেমন থেরাপি) চিকিৎসা শুরু করে দেবেন না। এটাকে চিকিৎসকরা প্রমাণভিত্তিক চিকিৎসা বা এডিডেন্স বেজড চিকিৎসা বলছেন। এতে রোগীর সঠিক চিকিৎসা হবে এবং রোগী দ্রুত আরোগ্য লাভ করবেন। তবে রোগ নির্ণয়ে পরীক্ষা সামান্য কিছু ব্যয় বেড়ে যেতে পারে কিন্তু রোগী সঠিক চিকিৎসা পেয়ে দ্রুত আরোগ্য লাভ করবেন। মাসের পর মাস অথবা বছরের পর রোগীকে ভুগতে হবে না।
বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রমাণভিত্তিক চিকিৎসা শুরু করেছে। বিএমইউর ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেলের (আইকিউএসি) পরিচালক অধ্যাপক ডা: কামরুন নাহার খানম বলেন, ‘এ চিকিৎসা পদ্ধতিতে চিকিৎসা দেয়া হলে অপ্রয়োজনীয় ওষুধ দেয়া হবে না। রোগটি চিহ্নিত করে সঠিক ওষুধটিই দেয়া হবে। এতে করে রোগীর খরচ কমে যাবে।’ এ ব্যাপারে আইকিউএসির অতিরিক্ত পরিচালক সহযোগী অধ্যাপক ডা: দীনে মোজাহিদ মুহাম্মদ ফারুক ওসমানী বলেন, ‘প্রমাণভিত্তিক বা এভিডেন্স বেজড চিকিৎসায় পৃথিবীর অন্যান্য দেশের উন্নতমানের চিকিৎসার সাথে আমাদের চিকিৎসা তুলনা করে আমাদের চিকিৎসায় যদি কোনো গ্যাপ থাকে সেগুলো কিনিক্যাল অডিটের মাধ্যমে তা পূরণ করে দেয়া হবে। প্রমাণ চিকিৎসা আমাদের চিকিৎসাকে আধুনিক করবে, একই সাথে চিকিৎসাব্যয় কমে আসবে। যে পরীক্ষাটা দরকার শুধু সেই পরীক্ষাটিই করা হবে, রোগের ধরন বুঝে পৃথিবীর উন্নত দেশের কী পরীক্ষা করা হয় সেটাও দেখা হবে এবং সেই অনুযায়ী, খুবই প্রয়োজনীয় পরীক্ষাটিই দেয়া হবে। এতে করে রোগী স্বল্পখরচে উন্নতমানের চিকিৎসা পেয়ে সুস্থ হয়ে যাবে।’ ডা: ওসমানী আরো বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক চিকিৎসককে এ ব্যাপারে প্রশিক্ষণ দিয়েছি এই প্রমাণভিত্তিক চিকিৎসার ব্যাপারে। এখন থেকে আমরা সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদেরও এই প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। আশা করছি, চিকিৎসকদের মধ্যে এটা জনপ্রিয় হবে।’ ডা: ফারুক ওসমানী আরো বলেন, বৈজ্ঞানিকভাবে যাচাই করা অনেক গবেষণা প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে এভিডেন্ট বেজড ট্রিটমেন্ট বা প্রমাণভিত্তিক চিকিৎসাপদ্ধতি তৈরি করা হয়। এই পদ্ধতির চিকিৎসায় অনেক বৈজ্ঞানিক গবেষণা, কিনিক্যাল পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে যে এই চিকিৎসাতেই রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে যাচ্ছে এবং দারিদ্র্যে নিপতিত হচ্ছে না।
বাংলাদেশে প্রমাণভিত্তিক চিকিৎসাপদ্ধতি এখনো ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করতে না পারলেও বাংলাদেশে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় এই চিকিৎসাপদ্ধতির চালু করতে তাদের দেড় শতাধিক চিকিৎসককে প্রশিক্ষণ দেয়ায় ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও পেয়েছে। বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়কে ২০২৫ সালের জন্য ‘ওয়ার্ল্ড এডিডেন্স বেজড হেলথকেয়ার (ইবিএইচসি) ডে কর্তৃপক্ষ ‘এভিডেন্স অ্যাম্বাসেডর’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এই স্বীকৃতি বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়কে নামী শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের কাতারে স্থান দিয়েছে। ‘ওয়ার্ল্ড এডিডেন্স বেজড হেলথকেয়ার (ইবিএইচসি) ডে কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ডা: শাহিনুল আলমকে ভিডিওগ্রাফি ক্যাটাগরিতে এবং আইকিউএসির অতিরিক্ত পরিচালক ডা: দীনে মুজাহিদ মুহাম্মদ ফারুক ওসমানী ভিজ্যুয়াল মিডিয়া ক্যাটাগরিতে অ্যাম্বাসেডর হিসেবে সম্মাননা পেয়েছেন।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপ জানিয়েছে, এই স্বীকৃতি বিএমইউর গবেষণা, চিকিৎসা উৎকর্ষতা এবং তথ্যনির্ভর সিদ্ধান্ত গ্রহণে অঙ্গীকারের ফল। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই অধ্যাপক শাহিনুল আলম প্রমাণভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নে নানা পদপে নিয়েছেন। তার নেতৃত্বে ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাস্যুরেন্স সেলের (আইকিউএসি) উদ্যোগে প্রমাণভিত্তিক চিকিৎসাবিষয়ে বিভিন্ন প্রশিণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং তা চলমান রয়েছে। ফলে একই রোগীর েেত্র বিভিন্ন চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ও পরীার অপ্রয়োজনীয় পার্থক্যও এতে হ্রাস পাবে। পাশাপাশি, মেডিক্যাল ও কিনিক্যাল অডিটে এর প্রয়োগ চিকিৎসা সেবা, শিা ও গবেষণায় গুণগত পরিবর্তন আনবে।