বেসরকারি কলেজ-মাদরাসায় শিক্ষক নিয়োগে সমন্বয়হীনতা

শাহেদ মতিউর রহমান
Printed Edition
  • যোগ্যতা থাকার পরেও সুপারিশ পাননি ১৩০০ প্রার্থী
  • এনটিআরসিএর বরাবরে পুনর্বিবেচনার আবেদন

কলেজের শিক্ষকদের সমান যোগ্যতা থাকার পরও মাদরাসার শিক্ষকরা নিয়োগ বঞ্চিত হয়েছেন এবারের সুপারিশে। সম্প্রতি বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএর) ষষ্ঠ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বেসরকারি কলেজের শিক্ষক পদে দেড় হাজারের বেশি প্রার্থীকে চূড়ান্তভাবে সুপারিশ করা হয়। তবে মাদরাসাতেও প্রায় সমান সংখ্যক পদ শূন্য থাকার পরও সেখানে সুপারিশ করা হয়েছে মাত্র ১৭৭ জন প্রার্থীকে। যদিও একই প্রশ্ন এবং সমান যোগ্যতা নিয়েই মাদারাসায় আলিম পর্যায়েও শিক্ষকতা পেশায় আগ্রহী ছিলেন অনেকে। কিন্তু কলেজ ও মাদরাসায় শিক্ষক নিয়োগের এই সমন্বয়হীনতার কারণেই বিপুল সংখ্যক প্রার্থী এবার সুপারিশ বঞ্চিত হয়েছেন। এ দিকে এনটিআরসিএর এমন সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করে গতকাল বোরবার বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছেন নিয়োগ বঞ্চিত কয়েক শ’ প্রার্থী। এনটিআরসিএর ষষ্ঠ নিয়োগে বঞ্চিত নিবন্ধিত প্রার্থীরা মাদরাসায় প্রভাষক পদে সুপারিশের দাবি জানিয়েছেন। তারা বলছেন, ১৮তম নিবন্ধনে কলেজ ও মাদরাসা পর্যায়ের জন্য একই প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেয়া হয়েছে। ফলে সমান শিক্ষাগত যোগ্যতা ও মেধাসম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও কলেজ পর্যায়ের বেশির ভাগ প্রার্থী আজ বঞ্চনার শিকার।

সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে বর্তমান বাস্তবতায় দেখা যাচ্ছে ১৮তম নিবন্ধনে কলেজ-মাদরাসা মিলিয়ে আইসিটি বিষয়ে মোট শূন্যপদের সংখ্যা ১ হাজার ৬০৪টি এবং মোট উত্তীর্ণ প্রার্থী প্রায় ১ হাজার ৬৬৯ জন। এর মধ্যে কলেজ পর্যায়ে রয়েছে মাত্র ১৫১টি পদ, অথচ সেখানে উত্তীর্ণ প্রার্থী রয়েছেন ১ হাজার ৪৯২ জন। অপর দিকে মাদরাসা পর্যায়ে শূন্যপদ রয়েছে ১ হাজার ৪৫৩টি, কিন্তু উত্তীর্ণ প্রার্থী মাত্র ১৭৭ জন। ১৭তম নিবন্ধনে কলেজ ও মাদরাসা পর্যায়কে একত্রে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল, যা ছিল সময়োপযোগী, বাস্তবভিত্তিক ও পরীক্ষার্থীবান্ধব সিদ্ধান্ত। কিন্তু ১৮তমতে হঠাৎ করে এই দু’টি পর্যায়কে পৃথক করে আবেদন ও ফলাফল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে, যা প্রার্থীদের মধ্যে বৈষম্য ও হতাশা সৃষ্টি করেছে।

সুপারিশ বঞ্চিত প্রার্থীদের পক্ষ থেকে দাবি উঠেছে তাদের ন্যায্য ও যৌক্তিক দাবির বিষয়টির বাস্তবতা ন্যায্যতা ও মানবিক গুরুত্ব উপলব্ধি করে যেন ষষ্ঠ বিজ্ঞপ্তিতে মাদরাসা পর্যায়ে নিয়োগ থেকে বঞ্চিত না করা হয়। প্রার্থীদের মধ্যে অনেকেই এই প্রতিবেদককে জানান, তার ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় আইসিটি (কলেজ) বিষয়ের প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক- এই তিনটি ধাপে সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়েছেন। দীর্ঘ অপেক্ষা, কঠোর অধ্যবসায় ও তীব্র প্রতিযোগিতার পথ পেরিয়ে স্বপ্নের শিক্ষকতা পেশার দোরগোড়ায় এসে এখন এক অনাকাক্সিক্ষত অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হয়েছেন।

সূত্র জানায়, কয়েক মাস আগে ১৮তম নিবন্ধনে কলেজ ও মাদরাসা পর্যায়ের জন্য একই প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেয়া হয়েছে। ফলে সমান শিক্ষাগত যোগ্যতা ও মেধাসম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও মাদারা পর্যায়ের বেশির ভাগ প্রার্থী আজ বঞ্চনার শিকার। অনেক উত্তীর্ণ প্রার্থীর বয়স বর্তমানে প্রায় বয়সসীমার শেষ প্রান্তে পৌঁছেছে এবং তারা পরিবারসহ আর্থিক ও মানসিক সঙ্কটের মধ্য দিয়ে দিনযাপন করছেন। এ পরিস্থিতিতে প্রত্যাশিত নিয়োগ থেকে বঞ্চিত হলে বহু প্রার্থীর দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন চূড়ান্তভাবে বিনষ্ট হবে। অপর দিকে মাদরাসা পর্যায়ে শূন্যপদে শিক্ষক সঙ্কট দীর্ঘস্থায়ী হবে এবং একই ব্যাচে ভিন্ন নিয়ম অনুসরণ করার কারণে স্বচ্ছতা ও সমতার নীতিতেও প্রশ্ন দেখা দিবে। প্রার্থীরা আরো জানান, এর আগেও তারা এনটিআরসিএর পরিচালক (শিক্ষাতত্ত্ব ও শিক্ষামান) কামরুল আহছানের সাথে সাক্ষাৎ করে বিষয়টি উপস্থাপন করেছেন। তিনি আমাদের বক্তব্য গুরুত্ব সহকারে শুনেছেন এবং দাবির যৌক্তিকতা অনুধাবন করে বিষয়টি ইতিবাচকভাবে বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন।