ইলিশের দামে তেলেসমাতি চলছে। পয়লা বৈশাখকে ঘিরে ইলিশ এখন মধ্যবিত্তের ধরাছোঁয়ার বাইরে। বাজারে কেজিতে দাম বেড়েছে দেড় থেকে ২ হাজার টাকা। এতে বিলাশী ইলিশে মধ্য নিম্নবিত্তের ইলিশ তো দূরে থাক, ধারে কাছেও ভিড়তে সাহস করছেন না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীর প্রায় সব বাজারে ইলিশের দাম বেড়েছে। ৭০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি ওজনের একেকটি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে আড়াই হাজার থেকে ৩ হাজার টাকায়। মাঝারি আকৃতির ইলিশের কেজি ২ হাজার থেকে ২৮০০ টাকার নিচে মিলছে না। আর বড় আকৃতির ইলিশের দাম সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম চাওয়া হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বৈশাখ উপলক্ষে হঠাৎ করেই ইলিশের চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু সে তুলনায় সরবরাহ কম। কারণ, মৌসুম না থাকায় সাগরে বা নদীতে খুব বেশি ইলিশ ধরা পড়ছে না। আবার নিষিদ্ধ মৌসুম হওয়ার কারণে সব নদীতে জেলেরা জাল ফেলতে পারছেন না। ফলে পর্যাপ্ত মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। তবে ভোক্তারা এজন্য অসাধু চক্রের কারসাজিকে দায়ী করছেন। তাদের অভিযোগ, অসাধু ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে ইলিশের দাম বাড়াচ্ছে। তা না হলে ইলিশ মাছের এত দাম কেন হবে?
বিক্রেতাদের ভাষ্য, নদী বা সাগর থেকে ইলিশ আহরণের পর ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছানোর আগে কয়েকটি হাত ঘুরে। এ সময়ই মাছটির দাম বেড়ে যায়। যে ইলিশ যত বড়, তার দর তত বেশি। এ ছাড়া, মজুদ করেও ইলিশের দাম বাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে।
গত পাঁচ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে উৎপাদন বাড়ছে ইলিশের। কিন্তু উচ্চমূল্যের কারণে দেশীয় এই মাছটির স্বাদ নিতে পারছে না সাধারণ ক্রেতারা। এ নিয়ে ইলিশ কিনতে আসা অনেকেই হতাশা প্রকাশ করেছেন।
উল্লেখ্য, দেশের মোট মাছ উৎপাদনের প্রায় ১২ শতাংশ ইলিশ। জিডিপিতে ইলিশের অবদান প্রায় ১ শতাংশ। মৎস্য অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী, গত এক দশকে ইলিশ উৎপাদন বেড়েছে। গত ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে প্রতি বছর উৎপাদন হচ্ছে ৫ লাখ টনের বেশি। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ইলিশ উৎপাদন হয়েছে ৫ লাখ ১৭ হাজার টন। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৫ লাখ ৫০ হাজার টন, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫ লাখ ৬৫ হাজার টন, ২০২১-২২ অর্থবছরে উৎপাদন হয়েছে ৫ লাখ ৬৭ হাজার টন এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে ইলিশ উৎপাদন হয়েছে ৫ লাখ ৭১ হাজার টন।