ঢাবি ছাত্রদলের ১০ দফা ইশতেহার ঘোষণা : শিবিরের প্রচারাভিযান

হারুন ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
Printed Edition
ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম ইশতেহার ঘোষণা করেন (বাঁয়ে); সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন শিবির সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী সাদিক কায়েম
ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম ইশতেহার ঘোষণা করেন (বাঁয়ে); সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন শিবির সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী সাদিক কায়েম |নয়া দিগন্ত

  • সেনা মোতায়েন বিতর্কে আইএসপিআরের বিবৃতি
  • প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর সাহায্য নেবো : রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক গোলাম রব্বানী
  • প্রত্যেক ভোটারের ভোটদানের সময় ৮ মিনিট
  • ভোটকেন্দ্র বাড়ানোর দাবি বিনির্মাণ পরিষদের

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন ঘিরে ক্যাম্পাসে উৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছে। আগামী ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠেয় এই নির্বাচন সামনে রেখে প্রধান ছাত্র সংগঠনগুলো তাদের ইশতেহার ঘোষণা শুরু করেছে। প্রথম ছাত্র সংগঠন হিসেবে ১০ দফা ইশতেহার ঘোষণা করে চমক দেখিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। তবে নির্বাচন চলাকালে সেনা মোতায়েন সংক্রান্ত বিতর্ক ক্যাম্পাসজুড়ে এক নতুন উত্তেজনার জন্ম দিয়েছিল, যার পরিপ্রেক্ষিতে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর বিবৃতি দিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। এ দিকে প্রশাসন জানিয়েছে, উদ্ভূত পরিস্থিতি বিবেচনায় সেনাবাহিনীর সাহায্য নেয়া হতে পারে।

ছাত্রদলের ১০ দফা ইশতেহার : গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক বটতলায় এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান তাদের ১০ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেন। এই ইশতেহারকে তারা গতানুগতিক প্রতিশ্রুতি নয়, বরং শিক্ষার্থীদের মৌলিক সমস্যা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক উন্নয়নে একটি পরিবর্তনের প্রতিজ্ঞাবদ্ধ দলিল হিসেবে উপস্থাপন করেছে। ইশতেহারে উল্লেখিত প্রধান দফাগুলো হলো:

শিক্ষার্থীদের অধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা : ছাত্র অধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার উপর সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। গত এক দশকে ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক সহাবস্থান ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ রুদ্ধ হওয়ায় এই প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে ছাত্রদল সব শিক্ষার্থীর জন্য নির্বিঘেœ রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সুযোগ নিশ্চিত করার বার্তা দিচ্ছে।

গবেষণার মানোন্নয়ন ও আধুনিক লাইব্রেরি : শিক্ষা ও গবেষণার মানোন্নয়নে বাজেট বৃদ্ধির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মানের একটি সমৃদ্ধ লাইব্রেরি ও রিডিং রুমের ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে।

আবাসন ব্যবস্থার উন্নয়ন : শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বড় সমস্যা আবাসন সঙ্কট নিরসনে পর্যাপ্ত আবাসিক হল ও সেগুলোর সুষ্ঠু বণ্টনের ওপর জোর দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া, হলে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।

উন্নত পরিবহন ও অবকাঠামো : যানজট এবং পরিবহন ব্যবস্থার অপ্রতুলতা কমাতে পর্যাপ্ত পরিবহনের ব্যবস্থা এবং সাইকেল ও মোটরসাইকেল পার্কিংয়ের জন্য নির্দিষ্ট স্থান তৈরির প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেবার উন্নয়ন : আধুনিক চিকিৎসা কেন্দ্র, সার্বক্ষণিক অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস এবং প্রতিটি হলে প্রাথমিক চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সেবার মান বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে।

ভর্তি ও একাডেমিক কার্যক্রমে স্বচ্ছতা : ভর্তি পরীক্ষা ও অন্যান্য একাডেমিক কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের হয়রানি কমানোর ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে শিক্ষার্থীদের ভূমিকা : শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থান এবং দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়ার কথা বলা হয়েছে।

খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের উন্নয়ন : শিক্ষার্থীদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশে খেলাধুলা এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সুযোগ ও পরিবেশ উন্নত করার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে।

পরিবেশ সুরক্ষা : ক্যাম্পাস পরিবেশবান্ধব ও সবুজ রাখতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়ার কথা বলা হয়েছে, যা পরিবেশ সুরক্ষার প্রতি তাদের অঙ্গীকার তুলে ধরে।

নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও অধিকার : নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করতে বিশেষ পদক্ষেপ নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে, যা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ক্যাম্পাস তৈরির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

ছাত্রদল মনে করছে, এই ইশতেহারের পূর্ণ বাস্তবায়ন সম্ভব হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আবারও একটি গণতান্ত্রিক ও অংশগ্রহণমূলক ক্যাম্পাস হিসেবে তার ঐতিহ্য ফিরে পাবে।

ছাত্রসংসদ নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের তথ্য গুজব : ডাকসু এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনী মোতায়েনের যে খবর ছড়িয়েছিল, তা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক বিতর্ক। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই খবর ‘ভিত্তিহীন’ বলে অভিহিত করে।

গতকাল আইএসপিআর জানায়, সরকার এ বিষয়ে সেনাবাহিনীকে কোনো নির্দেশনা দেয়নি এবং ভবিষ্যতেও এ ধরনের কোনো দায়িত্ব পালনের সুযোগ নেই। তারা আশা প্রকাশ করে যে, বিদ্যমান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তত্ত্বাবধানেই নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হবে।

তবে এর আগে গত ২৬ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ডাকসু নির্বাচনে নিরাপত্তার অংশ হিসেবে সেনাবাহিনীকে ‘স্ট্রাইকিং ফোর্স’ হিসেবে রাখার কথা জানিয়েছিল। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) বরাত দিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, আটটি ভোটকেন্দ্রে তিন স্তরের নিরাপত্তা থাকবে। প্রথম স্তরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনসিসি সদস্য ও প্রক্টরিয়াল টিম, দ্বিতীয় স্তরে পুলিশ এবং তৃতীয় স্তরে সেনাবাহিনী ‘স্ট্রাইকিং ফোর্স’ হিসেবে সাতটি প্রবেশমুখে অবস্থান করবে।

প্রার্থীদের ক্ষোভ ও সাবেক নেতাদের প্রতিক্রিয়া : বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সেনাবাহিনী নিয়োগের সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ডাকসু নির্বাচনের প্রার্থীরা। ভিপি প্রার্থী উমামা ফাতেমা অভিযোগ করেন, প্রশাসনের এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে শিক্ষার্থীদের সাথে কোনো আলোচনা করা হয়নি। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ নির্বাচনে সেনা মোতায়েন সত্যিই লজ্জাজনক। একই ধরনের অভিযোগ করেন আরেক ভিপি প্রার্থী সাদিক কায়েম।

ডাকসুর সাবেক নেতারাও এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেছেন। সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘সত্তর ও আশির দশকে সামরিক শাসনের মধ্যেও ডাকসু নির্বাচন হয়েছে, কিন্তু কখনো ক্যাম্পাসে সেনা মোতায়েনের ঘটনা ঘটেনি।’ আশির দশকের সাবেক সাধারণ

সম্পাদক মুশতাক হোসেনও মনে করেন, সেনা উপস্থিতি বরং অস্থিরতা বাড়াতে পারে।

যদিও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার উদ্বেগ থেকেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে প্রার্থীরা বলছেন, এটি সত্য নয়। তারা দ্রুত এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন।

প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর সাহায্য নেবো : রিটার্নিং কর্মকর্তা গোলাম রব্বানী

গতকাল বিকেলে নবাব নওয়াব আলী সিনেট ভবনস্থ চিফ রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সেনাবাহিনী মোতায়নের বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা গোলাম রাব্বানী বলেন, আসন্ন ডাকসু নির্বাচন সুন্দর ও স্বচ্ছ করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তার বিষয়টা আমাদেরকে জানিয়েছেন এবং তার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বলেছি, নিরাপত্তার ইস্যুতে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। যদি প্রয়োজন হয় তা হলে আমরা সেনাবাহিনীকে সাহায্যের কথা জানাব।

প্রত্যেক ভোটারের ভোটদানের সময় ৮ মিনিট : ডাকসু নির্বাচনে মোট আটটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন কমিশনের তথ্য মতে একজন ভোটার ভোট দেয়ার জন্য সর্বোচ্চ ৮ মিনিট সময় পাবেন।

গতকাল বিকেলে চিফ রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য জানান চিফ রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক ড. মো: জসীম উদ্দিন। তিনি বলেন, সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোট দেয়া যাবে। ভোট কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা অনুযায়ী পর্যাপ্ত বুথ স্থাপন করা হবে। একজন ভোটার ভোট দিতে সময় পাবেন ৮ মিনিট।

চিফ রিটার্নিং অফিসার বলেন, ভোট কেন্দ্র বাড়ানোর জন্য শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন এবং ছয়টি কেন্দ্র থেকে আটটি করা হয়েছে। আপাতত আমরা কেন্দ্র বাড়ানোর পরিকল্পনা করছি না।

তিনি বলেন, স্ক্যানিং মেশিন দিয়ে ভোট গণনা করা হবে। মেশিনের সক্ষমতা অনেক। দ্রুততম সময়ের মধ্যে ভোটের রেজাল্ট প্রদান করার সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে।

রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী বলেন, ভোটের মাঠ স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ রাখার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের চেষ্টার কোনো কমতি নেই এবং প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। শিক্ষার্থীদেরকে সুন্দর একটি নির্বাচন উপহার দিতে চাই।

তিনি বলেন, আমরা যখন যে অভিযোগ পাচ্ছি, সেটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। একজন প্রার্থী গান-বাজনা করে ইশতেহার প্রকাশ করেছিল। তার জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় তাকে নোটিশ দেয়া হয়েছে। এরপর আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ভোটকেন্দ্র বাড়ানোর দাবি বির্নিমাণ পরিষদের : ডাকসু নির্বাচনে ভোটারদের নির্বিঘেœ ভোটদান এবং দ্রুত ফল প্রকাশের জন্য ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের প্যানেল ‘বিনির্মাণ পর্ষদ’। তাদের মতে, বর্তমানে ৪০ হাজার ভোটারের জন্য মাত্র আটটি ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।

তারা বিবৃতিতে বলেন, একজন শিক্ষার্থীর ভোট দিতে কমপক্ষে ৫ মিনিট প্রয়োজন হবে। এতে দীর্ঘ লাইন তৈরি হবে এবং অনেক শিক্ষার্থী ভোট দিতে নিরুৎসাহিত হবেন। এ ছাড়া, ভোটকেন্দ্র কম হলে ফল প্রকাশে বিলম্ব হতে পারে, যা প্রশাসনের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে। শিক্ষার্থীরাও এই উদ্বেগে একমত এবং আশা করছেন, নির্বাচন কমিশন তাদের এই দাবি আমলে নিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেবে।

প্রশাসন সূত্র জানায়, ভোটের দিন ক্যাম্পাস পুরোপুরি সিলগালা থাকবে। বৈধ শিক্ষার্থী, অনুমোদিত সাংবাদিক ও নির্বাচন পরিচালনার সাথে যুক্ত ব্যক্তিরা ছাড়া অন্য কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। শিক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য বিভিন্ন রুটে অতিরিক্ত বাসের ব্যবস্থা করা হবে। এ ছাড়া, নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে থেকে আবাসিক হলে বহিরাগতদের থাকার ওপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হবে।

বিজয়ী হলে সাংস্কৃতিক ফ্যাসিবাদের কবর রচনা করবো : সাদিক কায়েম

আসন্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে বিজয়ী হতে পারলে সাংস্কৃতিক ফ্যাসিবাদের কবর রচনার ঘোষণা দিয়েছেন ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের ভিপি প্রার্থী আবু সাদিক কায়েম।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বটতলায় ডাকসুর সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন তিনি।

এ সময় প্যানেলের জিএস প্রার্থী এস এম ফরহাদ, এজিএস প্রার্থী মহিউদ্দিন খানসহ অন্যান্য প্রার্থী উপস্থিত ছিলেন।

সাদিক কায়েম বলেন, জুলাই বিপ্লবের পরে আমরা রাজনৈতিক আজাদী পেলেও সাংস্কৃতিক আজাদী পাইনি। পতিত স্বৈরাচারের দোসররা এখনো নানাভাবে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। তারা ইসলামিক সিম্বলগুলোকে এখনো হিউমিলিয়েট করছে। আমরা বিজয়ী হলে ইসলামিক সিম্বলগুলোকে সমাজে স্বাভাবিক রূপদান করবো।

তিনি আরো বলেন, আমরা বিজয়ী হলে সাংস্কৃতিক ফ্যাসিবাদের কবর রচনা করবো। আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কালচারাল সেন্টারের হাব হয়ে উঠবে। এটি হবে একটি মাল্টিকালচারাল ইনস্টিটিউশন। এখানে হিন্দু-বৌদ্ধ, চাকমা-মারমাসহ সবাই মুক্তভাবে তাদের ধর্মচর্চা করতে পারবে।

সাদিক বলেন, আজ আমরা কলাভবনের শিক্ষার্থীদের সাথে তাদের যাবতীয় সমস্যা নিয়ে কথা বলেছি। এখানে ক্লাসরুম সঙ্কট, পুরাতন লিফটসহ বেশ কিছু সমস্যা চিহ্নিত করেছি। এ ছাড়াও কমনরুমে নারী স্টাফ না থাকা একটি বড় সমস্যা। নির্বাচিত হলে এসব সমস্যা সমাধানে আমরা সর্বাত্মক কাজ করবো।

তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিয়ে অভিযোগ করে বলেন, আমরা প্রশাসনের পক্ষপাতমূলক আচরণ দেখে আশঙ্কা প্রকাশ করছি। তারা বারবার আমাদেরকে হতাশ করছেন। আমরা তাদের কাছ থেকে স্বচ্ছতা আশা করি।

এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জিএস প্রার্থী এস এম ফরহাদ বলেন, আমরা যেসব পোস্টার লাগিয়েছি সেগুলো নিয়ম মেনেই লাগিয়েছি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হঠাৎ করে নিয়ম বদলানোয় ঝামেলা বেধেছে।

নির্বাচনে সেনাবাহিনীর অন্তর্ভুক্তি নিয়ে তিনি বলেন, অনেক ছাত্রসংগঠনই এ নিয়ে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সেনাবাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে স্টেকহোল্ডারদের সাথে পরামর্শ করা দরকার ছিল।