ম্যান সিটিতে ডি ব্রুইনা যুগের অবসান

ক্রীড়া ডেস্ক
Printed Edition
ম্যান সিটিতে ডি ব্রুইনা যুগের অবসান
ম্যান সিটিতে ডি ব্রুইনা যুগের অবসান

ম্যানচেস্টার সিটিতে ডি ব্রুইনা

ম্যাচ -গোল- অ্যাসিস্ট -শিরোপা

৪১৩ -১০৬- ১৭৪ - ১৬

কেভিন ডি ব্রুইনা আর ম্যানচেস্টার সিটি, ভক্ত-সমর্থকদের কাছে এই দুই যেন সমার্থক শব্দই হয়ে উঠেছিল। ইংলিশ ক্লাবটির আধিপত্যের সূচনার সাথে যে নামটি আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে। যে মাঝমাঠের সৈনিক, সিটির মধ্যমণি হয়ে ইউরোপজুড়ে ত্রাস সৃষ্টি করেছেন, সেই কিংবদিন্তর সাথে কাটানো এক দশকের স্বর্ণালী অধ্যায়ের ছেদ ঘটছে এবার। চলতি মৌসুম শেষেই সিটিকে বিদায় বলে দিবেন বেলজিয়াম এই মিডফিল্ডার। সামাজিক মাধ্যমে দেয়া এক বিবৃতিতে গতকাল ক্লাব ছাড়ার ঘোষণা দেন ডি ব্রুইনা।

একের পর এক চোট আর ছন্দহীনতায় সময়টা মোটেও ভালো যাচ্ছিল না ডি ব্রুইনার। চলতি বছরের জুনে সিটির সাথে চুক্তি শেষ হবে তার। ক্যারিয়ারের সোনালি সময় যে পেছনে ফেলে এসেছেন, সেটা বুঝতে পারা বেলজিয়াম তারকা চুক্তির নবায়নে আগ্রহীও ছিল না। শেষ পর্যন্ত ঠিকানা বদলের ঘোষণা দিয়ে ডি ব্রুইনা লিখেন, ‘সব গল্পের একটা শেষ আছে, তবে নিশ্চিতভাবেই এটা এর সেরা অধ্যায়। ফুটবল আমাকে আপনাদের কাছে এনেছে- এবং এই শহরে এনেছে। আমি আমার স্বপ্নকে তাড়া করেছি, এই অধ্যায় আমার জীবন বদলে দেবে, সেটা না জেনেই।’

ম্যানচেস্টার সিটিতে ডি ব্রুইনা ঠিক কতটা প্রভাব রেখেছেন সেটা ব্যাখা করা কঠিন। গোল, অ্যাসিস্ট, শিরোপা মোট দাগে এসব দিয়েই তো একজন ফুটবলারকে বিচার করা হয়। কিংবা ব্যালন ডি’অর, ফিফা বর্ষসেরার মতো এমন আরো কত ব্যক্তিগত অর্জন দিয়েও যে মাপা হয় কতটা ছাপ ওই ফুটবলার রাখতে পেরেছেন। তবে ফুটবল ইতিহাসে এমন কিছু খেলোয়াড়ের আবির্ভাব ঘটে যাদের প্রভাব বা অবদান আদতে ব্যাখা করাটাই কঠিন হয়ে পড়ে, ডি ব্রুইনা ছিলেন তাদের মতোই একজন।

২০১৫ সালে চেলসি থেকে সিটির জার্সি গায়ে দেয়া ডি ব্রুইনা নতুন ক্লাবে মাঝমাঠে এক নিরব বিপ্লবই ঘটিয়ে দেন। একাধারে প্লেমেকার, ডিপ-লাইং কন্ট্রোলার এবং ফিনিশারের ভূমিকা অবলিলায় পালন করে যাওয়া ‘ফুল প্যাকেজকে’ নিজের দলে পাওয়া যেকোনো কোচদের জন্য জাদুর কাঠি পেয়ে যাওয়ার মতোই। সিটিতে দীর্ঘ সময় তার উপস্থিতি মানেই ছিল ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ পুরো সিটির হাতে। মাঝমাঠে নিজের দায়িত্ব কতটা সুনিপুণভাবে পালন করেছেন ৩৩ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডার, তার প্রমাণ ক্লাবটির হয়ে ১৬টি শিরোপা জয়। যার মধ্যে রয়েছে ৫টি প্রিমিয়ার লিগ, ২টি এফএ কাপ এবং অবশেষে স্বপ্নের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। সিটির হয়ে ৪১৩ ম্যাচে ১০৬ গোলের সাথে ১৭৪ অ্যাসিস্ট করা ডি ব্রুইনা শুধু ক্লাবটির নয় বরং প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা ফুটবলার হয়ে থাকবেন। সিটিতে যোগ দেয়ার পর গোলের সুযোগ তৈরিতে তার ধারেকাছেও নেই কেউ। ইত্তিহাদের ক্লাবটির হয়ে ৮২৬টি গোলের সুযোগ সৃষ্টি করেছেন বেলজিয়াম তারকা। ইংলিশ লিগটিতে দুই আসরে মৌসুমের সেরা ফুটবলারের স্বীকৃতি পেয়েছিলেন ডি ব্রুইনা।

মাঝমাঠে ডি ব্রুইনার মতো একজন যোদ্ধার অনুপস্থিতি যে সিটির জন্য মোটেও সুখকর হবে না, সেটা এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন গার্দিওলা। সিটি কোচ বলেন ‘ডি ব্রুইনা এই ক্লাব-পরিবারের অংশ। আমাদের জন্য এটা খুব কঠিন এক দিন। কারণ, আমাদের একটা অংশ আমাদের ছেড়ে যাবে। এই দেশে খেলা ইতিহাসের অন্যতম সেরা মিডফিল্ডার সে, ম্যানচেস্টার সিটির তো অবশ্যই।’

অবশ্য শেষের বাঁশি বাজলেই কি গল্প থেমে যায়? না, কিছু কিছু গল্প সময়ের গণ্ডি ছাড়িয়ে চিরকাল বেঁচে থাকে।

কেভিন ডি ব্রুইনের বিদায়ও ঠিক তেমনই একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি।