সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী মাসেই বহুল আলোচিত আকারে উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদিত হচ্ছে। সংশোধিত এই অধ্যাদেশে বিদ্যমান ব্যাংক কোম্পানি আইনের (১৯৯১) বেশ কয়েকটি সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত সুপারিশে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে পরিবারের সংজ্ঞার আওতা বাড়িয়ে তাদের ক্ষমতা কমানোর কথা বলা হয়েছে। একই সাথে সংশোধিত আইনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। বলা হয়েছে, কোনো পরিচালক তিন মাসের বেশি পর্ষদ সভায় অনুপস্থিত থাকতে পারবেন না। কোনো পরিচালক ৬ বছরের বেশি টানা পরিচালক হিসেবে পর্ষদে থাকতে পারবেন না। বর্তমানে এই মেয়াদ রয়েছে ১২ বছর।
সম্প্রতি আইনটি সংশোধনের একটি খসড়া তৈরি করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এটি শিগগরিই চূড়ান্ত করে উপদেষ্টা পরিষদে পাঠানো হবে বলে জানা গেছে।
সংশোধিত প্রস্তাবটি উপদেষ্টা পরিষদ কর্তৃক অনুমোদনের পর তা ‘ব্যাংক কোম্পানি (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫’ নামে অভিহিত হবে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানায়, সংশোধিত প্রস্তাবে পরিবারের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে- পরিবার বলতে কোনো ব্যক্তির স্ত্রী/স্বামী, পিতা-মাতা, পুত্র-পুত্রবধু, কন্যা-জামাতা, ভাই-ভাবী, বোন-ভগ্নীপতি, স্ত্রী/স্বামীর পিতা-মাতা ও ভাই-বোন এবং তাদের ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তি বোঝাবে।
প্রস্তাব অনুযায়ী, একই ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, কোম্পানি বা কোনো পরিবারের সদস্যরা একই সময়ে একাধিক ব্যাংক কোম্পানির উল্লেখযোগ্য শেয়ার ধারণ করতে পারবে না।
বলা হয়েছে,কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি কোনো একটি ব্যাংকের ২ শতাংশ বা এর অধিক শেয়ার ধারণ করলে ওই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান একই সময়ে অন্য ব্যাংকের মোট শেয়ারের ২ শতাংশ বা এর অধিক শেয়ার ধারণ করতে পারবে না।
কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির কাছে নির্ধারিত শেয়ারের অতিরিক্ত শেয়ার থাকলে তা সংশ্লিষ্ট কোম্পানি বা পরিবারের সদস্য নন- এমন ব্যক্তি বা উক্ত কোম্পানিতে শেয়ার নেই- এমন কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রয় করা যাবে।
এ ছাড়া সংশোধিত প্রস্তাব অনুযায়ী, সরকার-অলাভজনক প্রতিষ্ঠান-কৌশলগত বিনিয়োগকারী ছাড়া কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি বা কোনো পরিবারের সদস্যরা প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে একক বা যৌথভাবে কোনো ব্যাংকের ৫ শতাংশের অধিক শেয়ার ধারণ করলেও তাদের ভোটাধিকার সব শেয়ারহোল্ডারদের সামগ্রিক ভোটের ৫ শতাংশের বেশি হবে না।
ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের বিষয়ে সংশোধনী প্রস্তাবে বলা হয়েছে, অর্ধেক সংখ্যক স্বতন্ত্র পরিচালকসহ ব্যাংকের পরিচালক সংখ্যা হবে সর্বোচ্চ ১৫ জন। স্বতন্ত্র পরিচালকদের সাথে ব্যাংকের কোনো স্বার্থ সংশ্লিষ্টতা থাকবে না। তারা শুধু ব্যাংকের স্বার্থে নিজস্ব মতামত দেবেন।
কোনো ব্যাংক তহবিলের অপব্যবহার, মানি লন্ডারিং বা সন্ত্রাসী অর্থায়নে জড়িত থাকলে বা জনস্বার্থে বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো ব্যাংকের পর্ষদ বাতিল করতে পারবে।
সংশোধনী প্রস্তাবে ‘স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান’-এর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি যদি অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হন বা ২০ শতাংশের অধিক শেয়ার ধারণ করেন বা ঋণের জামিনদাতা হন- তাহলে ওই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের স্বার্থসংশ্লিষ্ট হিসেবে গণ্য হবেন।



