অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, সেই দিন আর নেই, বাংলাদেশ এখন আর আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল নয়। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফ কিস্তি না দিলে নিজেদের মতো করে বাজটে করব। আমরা তাদের কাছ থেকে ঋণ না নিলে ওদের অনেকের চাকরিই থাকবে না। তাই আমরা এখন একটি শক্ত পদক্ষেপ নেব। তিনি বলেছেন, ইন্দোনেশিয়ায় টাকা দিতে না পেরে অনেকের চাকরি চলে গেছে। মালয়েশিয়াতে মাহাথির মোহাম্মদ শক্ত পদক্ষেপ নেয়ায় অনেকের চাকরি চলে গেছে। আমরা যদি ঋণ না নেই, দেখবেন ওখানে কয়জনের চাকরি যায়।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, আমরা আইএমএফের সব শর্ত মেনে আর ঋণ নিতে চাই না। তাদের সহায়তা ছাড়াই অর্থনীতি ভালো আছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বাজেটে সাপোর্টের অর্থ পাঁচ বছরের মধ্যে ফেরত দিতে হয়। বাজেট সাপোর্টের প্রকল্প তো ২০ বছরের জন্য হয় না। আমরা সতর্ক আছি। আইএমএফ টাকা দিলেই আমরা নেবো না। আমরা তো ঋণের বোঝা নিতে চাই না। আমি যদি ঋণ নিতে থাকি, টাকার বিনিময় হার কমে গেলে আমার যেখানে তিন বিলিয়ন ডলার শোধ করার কথা, পরে ওটা পাঁচ বিলিয়ন ডলার হয়ে যাবে। তখন আমাদের ১৬০-১৮০ টাকা করে ডলার কিনতে হবে। আমরা এসব বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছি।
নয় মাস ধরে আইএমএফের টাকা পাওয়া যাচ্ছে না? সাংবাদিকের এমন এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমরা একটা শক্ত পদক্ষেপ নেবো। পদক্ষেপ আমরা নেবো, নাকি তারা নেবে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, না না, এটা আমরা নেবো। ওদের চাকরি-বাকরি আছে তো। ইন্দোনেশিয়ায় টাকা দিতে না পেরে অনেকের চাকরি চলে গেছে। মালয়েশিয়াতে মাহাথির মোহাম্মদ শক্ত পদক্ষেপ নিয়েছেন তাতে অনেকের চাকরি চলে গেছে। আমরা যদি ঋণ না নেই, দেখবেন ওখানে কয়জনের চাকরি যায়।
তিনি বলেন, সার্বিকভাবে এখন আমরা আর আইএমএফ নির্ভরশীল না। ওই দিন চলে গেছে। আইএমএফ বা বিশ্বব্যাংক নির্ভরশীল না। তবে বিশ্বব্যাংকের প্রজেক্ট ঋণ ওরা বলেছে কন্টিনিউ করবে।
আর এক প্রশ্নের উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আইএমএফের দুই একটা ইস্যু আছে যেটা মেজর না। কিছু শর্ত আছে যেগুলোর সবগুলো আমরা পরিপালন করতে চাই না। আমরা সেসব বিষয় নিয়ে তাদের সাথে তর্ক করেছি। তারা বলেছে, এই কর-সেই কর, আমরা সে পথে হাঁটব না। বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতি অনেক ভালো। ডিসেম্বর থেকে এখন অনেক ভালো। দ্রুত রিফর্ম করেছে যেটা ভালো হয়েছে।
তিনি বলেন, আইএমএফ থেকে টাকা পয়সা না নিয়েই ফরেন এক্সচেঞ্জ মার্কেট ও রিজার্ভ স্থিতিশীল আছে। এই সরকার আসার পর কিন্তু আমরা আইএমএফ থেকে কোনো টাকা পাইনি। তাদের বলেছি, তোমাদের টাকা ছাড়াই আমরা সামষ্টিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আনতে পেরেছি। এ জন্য এখন তারা যে শর্ত চাপিয়ে দেবে সেটা বুঝতে পেরেছে। তারা বলেছে আমরা কন্টিনিউ করছি।
তিনি আরো বলেন, এ ছাড়া প্রজেক্ট সাপোর্ট অনেকগুলো আছে। বিশ্বব্যাংক, এডিবি পাইপলাইনে আছে। এআইবি থেকে এক মিলিয়ন ডলার চেয়েছি। এনডিবি ও ইসলামী ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক থেকে সহায়তা চেয়েছি। ফলে প্রজেক্ট সাপোর্টের ব্যাপারে তেমন কোনো সমস্যা দেখছি না। তবে বাজেট সাপোর্টের বিষয়ে একটু আলোচনা চলছে। আইএমএফের অনেক শর্ত থাকে তাই আমরা চিন্তাভাবনা করছি নিজেদের মতো করে বাজেট দিতে চেষ্টা করব।
আইএমএফের কী শর্ত আছে এমন প্রশ্নের উত্তরে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, তাদের শর্তের মধ্যে আমরা বলেছি এনবিআর সেপারেশন করব। ফরেন এক্সচেঞ্জ মার্কেটটাকে বলেছে সহজ করতে। আমরা বলেছি একেবারে ওপেন করব না। আমাদের স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডে তারা এক বিলিয়ন ডলার দেয়ার জন্য বলেছি। ওরা বলেছে ৫০০ মিলিয়ন ডলার দেবে। তবুও আমরা বলেছি, চিন্তাভাবনা করে আমরা সিদ্ধান্ত দেবো। সব মিলিয়ে কিন্তু দুঃখ করার কোনো কারণ নেই।
আর এক প্রশ্নের উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, সার্বিকভাবে আমি বলব অনেকের ধারণা যে আমরা শুধু অর্থ আনতে গেছি। আসলে সেটা কিন্তু না। আমরা ডেফিনিটলি আইএমএফের সাথে যে নেগোসিয়েশনটা চলছিল দুটো টার্মস নিয়ে সেটা কন্টিনিউ করা জন্য গিয়েছি। এ ছাড়া বিশ্বব্যাংক আছে তাদের সাথেও আলোচনা করেছি। আমাদের এবারের সফর সফল হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আমি তো বিশ্বব্যাংক, এআইবি, আইওএম, আইএমএফ, আইএফসি, ওপেক ফান্ডসহ ইউএসএর বড় একটা ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল, এ ছাড়া ইউএস সরকারের এনার্জি বিভাগ, স্টেট বিভাগ, লেবার, কৃষি খাত এবং ট্রেজারি বিভাগের সাথে কথা বলেছি। সবাই কিন্তু আমাদের সাথে আন্তরিকভাবে আমন্ত্রণ দিয়েছেন ও কথা বলেছেন। তারা পূর্ণ প্রিপারেশন নিয়ে এসেছেন।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এ বছর বিভিন্ন দেশের মন্ত্রীরা বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের পিছনে না ঘুরে বরং তারা ইউএস প্রেসিডেন্ট ও অফিসের লোকজনের কাছে যাচ্ছে। তারা সবাই এখন বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের থেকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে।
অর্থের সংস্থানের জন্য তিনটা চুক্তিতে স্বাক্ষর হয়েছে জানিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ওপেক ফান্ডের সাথে ১০০ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি হয়েছে। তারা বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ করবে। আর আইএফসির সাথে কথা হয়েছে তারাও ৫০০ মিলিয়ন ডলার বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ করবে।