দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আবারো সহিংসতার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে দলগুলোর অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, প্রভাব বিস্তার ও মনোনয়ন-সংক্রান্ত কোন্দল দিন দিন বেড়ে চলেছে। সাধারণ মানুষ বলছেন, বাংলাদেশ আর যেন রাজনৈতিক সহিংসতার দুষ্টচক্রে না ফেরে। তারা চান- সহিংসতামুক্ত, গ্রহণযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন এবং সেটির জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক নেতৃত্বের দায়িত্বশীলতা, প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা ও নাগরিক অংশগ্রহণ। তারা মনে করেন- যদি দলীয় স্বার্থ তুলে ধরে কেবল প্রতিপক্ষকে তাড়িয়ে দেয়ার পন্থাতেই দেশ চালানো হয়, তাহলে দেশের রাজনৈতিক যাত্রা অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে। কৌশলগত ক্ষতির আশঙ্কা প্রকটভাবে দেখা দিতে পারে। এ জন্য এখন দরকার- ত্বরিত, যৌথ ও স্বচ্ছ ব্যবস্থা যা ভোটের পরিবেশকে নিরপেক্ষ করবে ও সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনবে।
ফেব্রুয়ারির নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা : রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী আসন্ন নির্বাচনের সময়সূচি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘গণভোট নিয়ে দলগুলোর মতপার্থক্য যদি সমাধান না হয়, তাহলে সরকার যথাসময়ে নির্বাচন করতে পারবে বলে আমার মনে হয় না। সমাধান অবশ্যই ঐকমত্যের ভিত্তিতে হতে হবে। তা না হলে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা বাড়বে।’
তিনি আরো বলেন, ‘পৃথিবীর কোনো দেশে জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোট হয়নি। বাংলাদেশের সংবিধানে গণভোটের ধারা নেই, শেখ হাসিনা তা বাতিল করেছেন। যদি নির্বাচনের দিন গণভোট হয়, আর পরে নির্বাচিত দল বলে গণভোট অসাংবিধানিক, তাহলে ‘জুলাই সনদ’ বাস্তবায়ন হবে না। তাই যারা জাতীয় ভোটের আগে গণভোট চান, তাদের দাবি যৌক্তিক।’
অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী নয়া দিগন্তকে আরো বলেন, ‘চলমান সহিংসতার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর চেয়ে সরকারের দায় বেশি। কারণ আইনশৃঙ্খলা সরকারের হাতে। তারা চাইলে কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারত; কিন্তু নেয়নি। ফলে সহিংসতা বাড়ছে এবং কেউ কেউ এতে উৎসাহও পাচ্ছে।’
তবে তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর দায়ও অস্বীকার করেননি। তার ভাষায়, ‘দলগুলোর ভেতরে গণতন্ত্র নেই। মনোনয়ন প্রক্রিয়াগুলো গণতান্ত্রিকভাবে হয়নি। এতে নেতাকর্মীরা একে-অপরের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে। এই সংস্কৃতির পরিবর্তন না হলে নির্বাচন যতই হোক, শান্তি আসবে না।’
আবু হেনা রাজ্জাকী : যারা সংবিধানের দোহাই দিচ্ছেন তারা গত সাত মাস ধরে ঐকমত্য কমিশনের সাথে আলাপ করলেন তারা একবারো বিষয়টি উত্থাপন করলেন না যে আমরা যে নির্বাচনে যাচ্ছি সেটা এই সংবিধান মোতাবেক, যে সংবিধানে নির্বাচনের কোনো টাইম টেবিলের কথা বলা নাই, সংবিধানে কী বলা আছে টাইম টেবিল শেষ হয়ে গেলে যখন মন চায় তখন নির্বাচন দেবেন। ফেব্রুয়ারি ২০২৬ যে নির্বাচনটা করতে যাচ্ছেন কোনটার আলোকে?
গণভোট প্রথমে বিএনপি মানেনি, পরে মেনে নিয়েছে। সম্প্রতি শাহদিন মালিক বলেছেন, গণভোট বলতে কিছু নেই। সংবিধানে গণভোট নেই। সমস্ত রাজনৈতিক দল গণভোট মেনে নিয়েছে ঐকমত্য কমিশনে। যেটা সংবিধানে নেই সেটা মানবেনইবা কেন? গণভোটের স্থান হলো সংবিধানের ঊর্ধ্বে। গণভোটের সময় নিয়ে সমস্যা। বিএনপি বলছে নির্বাচনের দিন একই সাথে। জামায়াত বলছে আগে। তো আগে বা নির্বাচনের দিন যদি হয় এর মধ্যে কি কোনো পার্থক্য আছে? পার্থক্য না থাকলে নির্বাচনের আগে হতে সমস্যা কি? আর পার্থক্য থাকলে যার যার পার্থক্য নিয়ে সব দল বসে থাকবে, সিদ্ধান্তে আর পৌঁছানো সম্ভব হবে না। একই দিন নির্বাচন ও গণভোট দিলে নির্বাচনটা কোনো সংবিধানের অধীনে হচ্ছে সেই প্রশ্নটা থেকেই যায়। আর গণভোট আগে হলে গণভোটের পরে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি হবে, তার আলোকে নির্বাচন হতে হবে। এবং এটা ইফেক্টিভ ও পার্লামেন্টের যাওয়ার বৈধতা দিতে পারে সবাইকে। এ ছাড়া পার্লামেন্টে যাওয়ার কোনো বৈধ পন্থা নাই। সংবিধান চালানোর মালিক অন্তর্বর্তী সরকার নয়, ওটার মালিক হচ্ছেন নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী। এখন তিনি নাই। সুতরাং সংবিধানের বাইরে থেকে অন্তর্বর্তী সরকার অন্তর্বর্তীকালীন সংবিধানে চলছে এবং সেই মোতাবেক নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে। সেটার বৈধতার রূপটাই হলো গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদের আইনিভিত্তি হবে এবং তার আলোকে নির্বাচন হবে। আর যদি এটা কেউ না মানে তাহলে সঙ্ঘাত অনিবার্য, কারণ শুধু নির্বাচন নিয়ে আপনারা এগিয়ে যেতে পারছেন না। বিএনপি বলছে, ইউনূস সাহেব প্রতারণা করেছেন তাদের সাথে, ১৮ কোটি মানুষের সামনে যে সরকার প্রতারিত করল প্রকাশ্যে, সেই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যে প্রতারিত হবে না, সেই নিশ্চয়তা আপনি কোথায় পান, রহস্যটা কী?
সহিংসতার ভয়াবহ চিত্র : অন্তর্বর্তী সরকারের ১৩ মাসে (সেপ্টেম্বর ২০২৪-সেপ্টেম্বর ২০২৫) দেশে রাজনৈতিক সহিংসতায় অন্তত ১৬০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন প্রায় আট হাজার ৫০ জন। এর মধ্যে কেবল বিএনপির অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষেই প্রাণ হারিয়েছেন ৮৫ জন এবং আহত হয়েছেন পাঁচ হাজারের বেশি। এইচআরএসএসের এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। সেপ্টেম্বরের পর থেকে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত গণমাধ্যমে প্রকাশিত ঘটনাগুলোর হিসাব নিলে হতাহতের সংখ্যা আরো বাড়বে।
চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলায় বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই গ্রুপে সংঘর্ষ, লুটপাট ও চারটি বসতঘরে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। মুন্সীগঞ্জের মোল্লাকান্দিতে গুলিতে নিহত হয়েছেন তুহিন দেওয়ান (২২) নামে এক যুবক। নোয়াখালী, মেহেরপুর ও মাদারীপুরেও একইভাবে দলীয় মনোনয়ন-সংক্রান্ত বিরোধ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নিয়েছে।
রাজনৈতিক সহিংসতার এসব চিত্র কেবল দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের উদাহরণ নয়; বরং এটি একটি গভীরতর সাংগঠনিক ব্যর্থতা এবং দেশের গণতান্ত্রিক চর্চার দুর্বলতার ইঙ্গিত বহন করছে।
সাধারণ মানুষের আশা ‘শান্তি ও মর্যাদার ভোট’ : বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ এখন শান্তিপূর্ণ ও সহিংসতামুক্ত নির্বাচন চায়। বরগুনার বেতাগী উপজেলার বিবিচিনি কলেজের অধ্যাপক জাকির হোসেন বলেন, ‘আমাদের সন্তানরা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে জীবন দিয়েছে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য। এখন আমাদের দায়িত্ব সহিংসতা নয়, সহনশীল রাজনীতি গড়ে তোলা।’
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের কৃষক মো: আতশ মিয়া বলেন, ‘বহু বছর ভোট দিতে পারি নাই। এবার ভোট দিতে পারমু হুনছি। আমরা ভোটে মারামারি, গণ্ডগোল দেখতে চাই না। শান্তিতে ভোট দিতে চাই।’
ঢাকার এক ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, ‘১৯৭১ সালে যেমন কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে লড়েছিলাম, তেমনি আজও আমাদের নতুনভাবে মুক্ত হতে হবে। জুলাই বিপ্লবের পর আমরা নতুন আশা দেখেছি যে, বাংলাদেশে ভোট আর সহিংসতার সমার্থক শব্দ হবে না।’
কৌশলগত সঙ্কটের আশঙ্কা ও জাতীয় ঐক্য : নির্বাচনের আগে সহিংসতা ও রাজনৈতিক বিভাজন শুধু জননিরাপত্তা নয়, বাংলাদেশের কৌশলগত অবস্থানকেও বিপন্ন করতে পারে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা দীর্ঘস্থায়ী হলে প্রশাসনিক কাঠামো দুর্বল হয়, বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আস্থা নষ্ট হয় এবং অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা ভেঙে পড়ে। পর্যবেক্ষকদের মতে, ‘জুলাই সনদ’ বাস্তবায়নের সময় যে সংস্কারভিত্তিক পথচলা শুরু হয়েছিল, এ সহিংসতা সেই সংস্কার প্রক্রিয়াকে ছিন্ন করতে পারে।
রাজনীতিকদের মধ্যে পারস্পরিক অবিশ্বাস ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা যত বাড়বে, জনগণের আস্থা তত কমবে। এখন সময় রাজনৈতিক দলগুলোকে ‘দলীয় সঙ্কীর্ণতা’ থেকে বেরিয়ে আসার। সহিংসতা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ, মনোনয়ন-প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা, প্রশাসনের নিরপেক্ষ ভূমিকা ও আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত না হলে ফেব্রুয়ারির নির্বাচন কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা হয়ে যাবে, গণতন্ত্র নয়, সহিংসতার আরেক পর্ব শুরু হবে।
অধ্যাপক জাকির হোসেনের কথায়, ‘জুলাই শহীদের রক্তের প্রতি সম্মান জানাতে হলে আমাদের রাজনীতিকে মানবিক ও দায়িত্বশীল করতে হবে। না হলে বাংলাদেশের যাত্রা আবারো অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।’
শিক্ষক, কৃষক, ব্যাংককর্মী, বাড়ির সাধারণ মানুষ সবাই বলছেন যে ৫ আগস্টের আগের ঘটনার রক্তাক্ত স্মৃতি তারা পুনরায় দেখতে চান না। তারা চান এমন একটি নির্বাচন যেখানে ভোটার নিরাপদে ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবে, ভোট গ্রহণ শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু থাকবে এবং রাজনৈতিক দলগুলো গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ধারণ করবে। গ্রামীণ ও শহুরে অংশীদার উভয়েরই আকাক্সক্ষা, ভোট যেন ‘মারামারি বা গণ্ডগোল নয়, একটি শান্তিপূর্ণ প্রতিযোগিতার’ রূপ নেয়।
দায় নিয়ে বিশ্লেষণ সরকারি দায় : আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব সরকারের এবং অপচেষ্টা/অবহেলা থাকলে সহিংসতা বাড়ে বা উৎসাহ পায়, এমনই ভেবেছেন শীর্ষ বিশ্লেষকরা। যদি পুলিশি ব্যবস্থা পক্ষপাতিত্ব, নিয়োগ-রদবদল ও প্রশাসনিক অনিয়মে দেয়ালে ঠেকে যায়, তাহলে স্থানীয় প্রতিদ্বন্দ্বীরা অস্ত্র ও আক্রমণমূলক পন্থায় নিজেদের দাবি জোরদার করে নেয়। এই রাজনীতিক-নিরাপত্তা ব্যর্থতার কারণে জনগণের মধ্যে ‘নির্বাচন অগ্রযাত্রা অনিশ্চিত হবে’ এমন শঙ্কা বৃদ্ধি পায়। এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী সরকারের কঠোর পদক্ষেপ না নেয়ার বিশেষভাবে সমালোচনা করেছেন।
দলের দায় : বড় রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের অভাব এবং মনোনয়ন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও প্রতিযোগিতামূলক না হলে সেটিই মাঠে সঙ্ঘাতের সূচনা করে। মনোনয়নবঞ্চনা, ভূমিকা-লাভের লড়াই এবং প্রভাব বিস্তার প্রচেষ্টা স্থানীয় সঙ্ঘাতে রূপ নেয়। ফলত দলগুলোকে অভ্যন্তরীণ স্বচ্ছতা ও শৃঙ্খলা জোরালো করতে হবে, না হলে নির্বাচনী মরসুমে সহিংসতার ঝুঁকি তীব্র হবে।
কেন এটা একটি স্ট্র্যাটেজিক সমস্যা : নানা কারণে বাংলাদেশ এখন যে সমস্যার মুখে তা অনেকখানি কৌশলগত মাত্রায় পৌঁছে যাচ্ছে। বর্তমান সহিংসতার অনেকটা কেবল স্থানীয় আধিপত্যের লড়াই নয়; তা সংগঠিত অস্ত্র, আর্থিক উৎস এবং রাজনীতিক অনুপ্রবেশের সাথে জড়িত। ফলে দ্রুত-স্বল্প আইনশৃঙ্খলা পদক্ষেপে সমস্যার মূলে ঢোকা যায় না। একই সাথে এখনকার এটিই বাস্তবতা যে, লোকে বিশ্বাস হারালে নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা হারাবে। যদি ভোটের আগে/পরে ব্যাপক সহিংসতা অব্যাহত থাকে বা প্রশাসন পক্ষপাতী বলে ধারণা তৈরি হয়, তাহলে নির্বাচনের ফলাফলকে জনগণ গ্রহণ করবে না- এটি কেবল রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার অভাব নয়, দেশের বৈধতা-সঙ্কট সৃষ্টি করবে।
এর পাশাপাশি গণভোট ও সংবিধান নিয়ে রাজনৈতিক জটিলতার নিরসন করাও জরুরি। ‘জুলাই সনদ’ বাস্তবায়নের প্রেক্ষাপটে বিএনপি, জামায়াতসহ কয়েকটি দল গণভোট চাইলেও কিছু পক্ষ একই দিনে জাতীয় নির্বাচনের সাথে গণভোট আয়োজনের সিদ্ধান্ত সমর্থন করছে, আবার অন্যরা সাধারণ নির্বাচনের আগে গণভোট চাইছেন। অনেকে এটিকে কার্যকর/সাংবিধানিক জটিলতা হিসেবে দেখছেন। এই সাংবিধানিক-প্রক্রিয়াগত বিতর্ক নির্বাচন-গ্রহণযোগ্যতাকে আরো ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে।
সম্ভাব্য পরিণতি : খারাপ বৃত্তের ধারায় গেলে অথবা সহিংসতা বাড়লে অস্থিরতার কারণে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যেতে অনিচ্ছুক হবে; আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা এসেই ‘নিষ্পত্তিমূলক’ মতের দিকে ঝুঁকবে; সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে বৈধতায় ফাটল দেখা দেবে; সম্ভাব্য বিশৃঙ্খলা, বেসামরিক অবিচ্ছিন্নতা ও অর্থনৈতিক ক্ষতি বাড়বে, যেটি কৌশলগতভাবে দেশের আন্তর্জাতিক অবস্থান ও অভ্যন্তরীণ সংহতি নরম করবে।
তবে আশাব্যঞ্জক পথ তৈরি হবে- দ্রুত ও সমন্বিত পদক্ষেপে। পক্ষপাতমুক্ত প্রশাসনিক রদবদল, নির্বাচনী কমিশন/পুলিশ/প্রশাসনের স্বচ্ছতা, দলগুলোর অভ্যন্তরীণ গণতান্ত্রিক পুনর্গঠন, অস্ত্র-নিয়ন্ত্রণ, স্থানীয় সন্ত্রাস-চক্রের চিহ্নিত ও বিচারের ব্যবস্থা- এগুলোর সম্মিলিত প্রয়োগে সহিংসতা হ্রাস পেতে পারে এবং নির্বাচনে গ্রহণযোগ্যতা ফিরে পাওয়া সম্ভব।
এ ক্ষেত্রে পরিবর্তনমূলক যেসব পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে তার মধ্যে প্রথমেই রয়েছে- নিরপেক্ষ প্রশাসনিক রদবদল ও পুলিশি নজরদারি তৈরি করা। নির্বাচনী ম্যানডেটের আগে পুলিশের সুনির্দিষ্ট রোটেশন ও উচ্চ-রিস্ক এলাকার জন্য কেন্দ্রীয় নজরদারি টাস্কফোর্স মোতায়েন করা। এ বিষয়ে সরকারিভাবে দ্রুততর ও স্বচ্ছ সিদ্ধান্ত এখন প্রত্যাশিত।
দলগুলোর মানদণ্ড ও মনোনয়ন-প্রক্রিয়া পুনর্গঠনের বিষয়ও প্রয়োজনে ভাবতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ নির্বাচন/মনোনয়ন পদ্ধতিতে স্বচ্ছতা আনা দরকার, যাতে দলীয় কোড অব কন্ডাক্ট পুনর্নির্ধারণ এবং মনোনয়ন-সংক্রান্ত আপিল প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠা পায়।
এ ছাড়া প্রধান রাজনৈতিক পক্ষ, সিভিল সোসাইটি, প্রশাসন ও প্রধান উপদেষ্টার তত্ত্বাবধানে অচিরেই সংলাপকে প্রাধান্য দিয়ে একটি ভেরিফায়েবল অ্যাকশন টেবিল ঘোষণা করা যেতে পারে।
হটস্পট মনিটরিং ও অস্ত্র-নিয়ন্ত্রণ অভিযানের ওপর গুরুত্ব দেয়া দরকার। স্থানীয় অস্ত্র-জালিয়াতি, অবৈধ আইটেম চলাচলের উৎস চিহ্নিত করে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। আর গণভোট-সংক্রান্ত জটিলতা থাকলে নিরপেক্ষ গবেষণা ও সর্বজনীন জনমত জরিপের মাধ্যমে প্রকাশ্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ; তা না হলে নির্বাচন ও সনদের ওপর ঝামেলা বাড়বে।



