ওলবাকিয়া ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে। বাংলাদেশ থেকেও বিশেষ ধরনের এই ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করে ভয়াবহ দু’টি রোগকে দূর করতে পারি। এটা ব্যবহার করতে পারলে বছরে শত শত মানুষের মৃত্যু রোধ করা যেতে পারে এবং হাজার হাজার মানুষ সংক্রমণ থেকে বেঁচে যেতে পারে। অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, চীন, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, কলাম্বিয়া এমনকি যুক্তরাষ্ট্র এই ব্যাকটেরিয়াটি ব্যবহার করে এই দু’টি রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছে। ওলবাকিয়া এমন একটি ব্যাকটেরিয়া যেটাকে এডিস মশার মধ্যে ঢুকিয়ে দিলে এটা মশার মধ্যে ডেঙ্গু ভাইরাসের মধ্যে প্রতিলিপি তৈরি করে। এই প্রতিলিপিগুলো ডেঙ্গু হিসেবে ছড়ায় না এবং ডেঙ্গু মশার মধ্যে ওলবাকিয়া ঢুকে পড়ে সেই এডিস মশাগুলোতে আর কখনো ডেঙ্গু ভাইরাসও থাকে না। ফলে আর কখনো একই ধরনের এডিস মশা ডেঙ্গু ছড়াতে পারে না।
এই প্রক্রিয়ায় মডিফায়েড পুরুষ এডিস মশা স্ত্রী এডিস মশার সাথে মিলিত হতে পারলেও স্ত্রী এডিস মশার ডিমগুলো আর ফুটবে না। এভাবে ওলবাকিয়ার কারণে মশার জনঘনত্ব কমে যাবে। ওলবাকিয়ার মশার মধ্যে ঢুকে যাওয়ার পর কিছু স্ত্রী মশা থেকে ডিম ফুটে নতুন মশা হলেও নতুন মশার মধ্যে আর ডেঙ্গু ভাইরাস থাকে না। এভাবে বংশ পরম্পরায় ওলবাকিয়া সংক্রমিত মশা জন্মাতে পারলে একটা সময় ডেঙ্গু অথবা চিকুনগুনিয়ার অস্তিত্বই থাকবে না বলে গবেষণায় প্রমাণিত এবং উল্লেখিত দেশ ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া নির্মূলে সফল হয়েছে বলে জানিয়েছেন রোগ তত্ত্ব¡ রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. মাহমুদুর রহমান।
জানা গেছে, ২০১৮ সালে বাংলাদেশে ওলবাকিয়া ব্যাকটেরিয়া ব্যবহারের জন্য সচিব পর্যায়ে আলোচনা করে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়; কিন্তু কোনো রহস্যজনক কারণে তখন বাংলাদেশে ওলবাকিয়া ব্যবহার করা সম্ভব হয়নি। তবে কীটতত্ত্ববিদ, এপিডেমিওলজিস্টরা বলছেন, বাংলাদেশে প্রাণহানি ও হাজার হাজার মানুষকে সংক্রমণ থেকে বাঁচাতে ওলবাকিয়া ব্যবহার করতে পারে। পৃথিবীর কয়েকটি উন্নত দেশ এই ব্যাকটেরিয়াটি ব্যবহার করে সফল হয়েছে। তাদের সফলতা থেকে আমরাও ডেঙ্গু নির্মূলে উদ্যোগটি গ্রহণ করতে পারি।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালে বাংলাদেশে ওলবাকিয়া ব্যবহারে বিদেশী বিশেষজ্ঞদেরও আনা হয়েছিল; কিন্তু পরে এক রহস্যজনক কারণে ওই প্রকল্পটি পরিত্যক্ত হয়ে যায়। ওয়ার্ল্ড মশা প্রোগ্রাম (ডব্লিউএমপি) এশিয়া, লাতিন আমেরিকা, আফ্রিকা এবং পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ওলবাকিয়া-সংক্রমিত মশা ছড়িয়ে দিতে কাজ করছে এবং মশাবাহিত রোগগুলো প্রতিরোধে সহায়তা করছে। তাদের কাজ প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার করে মানুষের মধ্যে ওলবাকিয়ার গ্রহণযোগ্যতা এবং আস্থা সৃষ্টি করা। ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব ইনফেকশাস ডিজিজের একটি গবেষণায় ওলবাকিয়া ব্যবহারে ৭৭ শতাংশ পর্যন্ত ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা যায়। উল্লেখ্য, বর্তমানে পৃথিবীর ৩৯০ কোটি মানুষ ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও জিকা ভাইরাসের সংক্রমণ ঝুঁকির মধ্যে বাস করে।