অপবাদ ঘোছাতে রূপ বদলাচ্ছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান

আবুল কালাম
Printed Edition

বদনাম যেন পিছু ছাড়ছে না সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের। সুপরিসর এই উদ্যান দেশের ঐতিহাসিক অসংখ্য ঘটনার সাক্ষী হলেও দীর্ঘ বহু বছর ধরে অপরাধের অভয়ারণ্যের কলঙ্ক বয়ে বেড়াচ্ছে। একের পর এক অপরাধের ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) সংলগ্ন এই উদ্যান বিনোদন কেন্দ্রের পরিবর্তে মানুষের জন্য আতঙ্কের স্থান হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। কিন্তু তারপরও এ নিয়ে এতদিন সংশ্লিষ্টদের কোনো তৎপরতা পরিলক্ষিত হয়নি। সর্বশেষ সেখানে খুন ঢাবি ছাত্র শাহরিয়ার আলম সাম্য। মূলত এ ঘটনার পরই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। সরকার এ উদ্যানের সংস্কারের সিদ্ধান্ত নেয়। তারই প্রেক্ষিতে রূপ বদলে অপবাদ গোছাতে চলেছে এক সময়ে রমনা রেসকোর্স ময়দান নামে পরিচিত এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান।

এর আগেও এখানে অসংখ্য অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম ২০২৪ সালের ১০ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে উদ্যানের ভেতর ৬৫ বছরের এক নারীকে নির্যাতন। একই বছরের ২১ জানুয়ারি ঢাবির এক শিক্ষার্থী নারী পুলিশ সদস্যকে মারধর ও ছিনতাইয়ের অভিযোগে গ্রেফতার হন।

২৩ সালের ২৭ জানুয়ারি উদ্যান থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ২১ এপ্রিল উদ্যানের একটি গাছের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায় এক তরুণীর লাশ। একই বছরের ১৫ জানুয়ারি রাতে উদ্যানের ভেতরে এক দম্পতিকে মারধর করে স্বর্ণালঙ্কার ছিনিয়ে নেয়া হয়। এ ঘটনায় ছাত্রলীগের নেতা রাহুল রায় ও তানজির আরাফাত তুষারের বিরুদ্ধে মামলা হয়। একই বছর বইমেলার সময় চাঁদাবাজির অভিযোগে ছাত্রলীগের আরো দুই নেতাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

২১ সালের ১ জুন উদ্যানসংলগ্ন এলাকা থেকে আবুল হাসান নামের এক তরুণের লাশ উদ্ধার করা হয়। তার বাবার করা মামলায় দীর্ঘ দুই বছর পর বেরিয়ে আসে, ঢাবি ছাত্রলীগের কিছু কর্মী জড়িত ছিলেন এ হত্যাকাণ্ডে। এতদিন একের পর এক আলোচিত অপরাধের পর এখন তা সংস্কার হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, এক সময় মানুষে গম গম করা এই উদ্যানের মুক্তমঞ্চ, কালীমন্দির, ছবির হাট, লেকপাড়, টিএসসি-সংলগ্ন গেট, মন্দিরের পাশের গেট, ভিআইপি গেট এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশনের পেছনের এলাকাগুলোর মধ্যে পার্কের ভেতরে দু-একজন ছাড়া তেমন মানুষ নেই। উদ্যানে প্রবেশেও এখন রয়েছে কড়াকড়ি। টিএসসি-সংলগ্ন গেটসহ প্রায় সব গেট বন্ধ। উচ্ছেদ করা হয়েছে ভেতরে থাকা সব খাবারের দোকান। অপরাধীদের আখড়া বলে খ্যাত কফি হাউস ও মুক্তমঞ্চও প্রায় ফাঁকা। এক কথায় অনেকটা নিস্তব্ধ পার্কটিতে এখন চলছে উন্নয়ন কার্যক্রম। যা মানুষের নিরাপদ বিনোদনের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমান সংস্কারে উদ্যানটিকে রমনা পার্কের আদলে প্রস্তুত করা হচ্ছে। যাতে কোনো ব্লাংক স্পেস থাকবে না। সর্বত্র থাকছে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা। নিরাপত্তা নিশ্চিতে স্থাপন করা হচ্ছে সিসিটিভি ক্যামেরা। যাতে মানুষ এখানে এসে নিরাপদে হাঁটাচলা করতে পারেন। এতে আগের মতো আর অপরাধীদের অবস্থান থাকবে না। নিরাপত্তায় নিয়মিত থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মানুষ সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নির্বিঘেœ ঘুরে বেড়াতে পারবেন।

এ ছাড়া উদ্যানের চারপাশে গেট নির্মাণেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) সংলগ্ন গেট স্থায়ীভাবে বন্ধ হচ্ছে। থাকবে না আগের মতো ভাসমান দোকান। বিভিন্ন অপরাধ নিয়ন্ত্রণে নির্মিত হচ্ছে পুলিশ বক্স। এতে করে সন্দেহ হলেই অপরাধী আটকে অভিযান চলবে।

৯৫ একর আয়তনের এই উদ্যানটি বাংলাদেশের ইতিহাসের দুটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তের সাথে উল্লেখযোগ্যভাবে জড়িত। প্রথমে মূলত রমনা রেসকোর্স নামে পরিচিত ছিল। এরপর ঐতিহাসিক তাৎপর্যের স্বীকৃতিস্বরূপ পাকিস্তানের ৫ম প্রধানমন্ত্রী এবং পূর্ব পাকিস্তানের (বাংলাদেশ) প্রাথমিক রাজনৈতিক ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সম্মানে এই অঞ্চলের নামকরণ করা হয় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। এতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘটনাবলির জন্য নিবেদিত স্মৃতিস্তম্ভ এবং স্থাপনা রয়েছে। এ ছাড়া এখানে একুশে বইমেলা আয়োজন করা হয়।