‘হাড় নেই, চাপ দিবেন না’

চিকিৎসাধীন মামুন মিয়ার ছবি এখন ঘুরছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এ লেখা দেখে গভীর দুঃখ প্রকাশ করছেন নেটিজেনরা।

আরফাত বিপ্লব, চট্টগ্রাম ব‍্যুরো

Location :

Chattogram
Printed Edition
চিকিৎসাধীন মামুন মিয়া
চিকিৎসাধীন মামুন মিয়া |নয়া দিগন্ত

চবি শিক্ষার্থীদের সাথে স্থানীয় গ্রামবাসীর সংঘাতে আহত হয়েছেন সমাজতত্ত্ব বিভাগের অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্র মামুন মিয়া। চিকিৎসা চলছে চট্টগ্রামের পার্কভিউ হসপিটালে। তার মাথার খুলি খুলে রাখা হলেও অস্ত্রোপচারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জ্ঞান ফিরেছে। শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় বর্তমানে খুলিহীন মাথা নিয়ে তাকে কেবিনে রাখা হয়েছে। খুলি না থাকায় দুর্ঘটনা এড়াতে মাথায় ব্যান্ডেজের ওপর লিখে দেয়া হয়েছে ‘হাড় নেই, চাপ দিবেন না’। চিকিৎসাধীন মামুন মিয়ার ওই ছবি এখন ঘুরছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এ লেখা দেখে গভীর দুঃখ প্রকাশ করছেন নেটিজেনরা।

আহত মামুনের বড় ভাইয়ের নাম মাসুদ। পেশায় তিনি শিক্ষক। মাসুদ জানান, আমার ভাইয়ের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। আলহামদুল্লিাহ সে কথা বলতে পারছে। ইতোমধ্যে তাকে কেবিনেও নেয়া হয়েছে।

ওমর ফারুক নামে একজন গণমাধ্যমকর্মী ফেসুবুকে লিখেছেন, ‘হাড় নেই, চাপ দিবেন না। চবি শিক্ষার্থী মামুন। পার্কভিউ হসপিটাল। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে গ্রামবাসীর সাথে শিক্ষার্থীদের এটাই সবচেয়ে বড় সংঘর্ষ। প্রশাসন কিংবা ছাত্র সংগঠনগুলোর বাধা সত্ত্বেও যারা গভীর রাতে এ সংঘর্ষকে উসকে দিয়েছে তারা এর দায় এড়াতে পারে না।’

পার্কভিউ হসপিটালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা: এটিএম রেজাউল করিম বলেন, আল্লাহর রহমতে মামুনের অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। তাকে কেবিনে দেয়া হয়েছে। আশা করছি সে আরো তাড়াতাড়ি সুস্থ হবে। এখন সুস্থ হলেও মাথার খুলিটি প্রতিস্থাপন করতে মাস দেড়েক সময় লাগবে। আমাদের চিকিৎসক টিম সর্বোচ্চটুকুন দিয়ে চেষ্টা করছে তাকে সারিয়ে তুলতে। আপনারা দোয়া করবেন।’

অন্য দিকে প্রায় চার দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো জ্ঞান ফিরেনি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র ইমতিয়াজ আহমেদ সায়েমের। তিনিও পার্কভিউ হসপিটালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। অস্ত্রোপচারের পর তাকে রাখা হয়েছে লাইফ সাপোর্টে। চিকিৎসকরা বলছেন, মাথায় কোপের কারণে ব্রেইনে রক্তক্ষরণ হয়েছে। এখনো তার কনশাস লেভেল মাত্র ৯, যা স্বাভাবিক মানুষের থাকে ১৫। ওটা না বাড়লে, এখনো আশঙ্কামুক্ত নন সায়েম।

তাকে নিয়ে মেডিক্যাল বোর্ড বসেছে। সিটি স্ক্যানে দেখা গেছে, এখনো তার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ চলছে। তাই হঠাৎ হঠাৎ খিঁচুনিতে কেঁপে উঠছে শরীর। ডাক্তাররা বলছেন, সার্জারি ছাড়া আর কোনো পথ নেই। সিদ্ধান্তটা বাবা-মায়ের হাতেই।

নাড়িছেঁড়া ধন সায়েমের বিপদের খবর পেয়ে সুদূর বগুড়া থেকে ছুটে এসেছেন মা শাহনাজ বেগম ও বাবা আমির হোসেন। ছেলের সুস্থতার অপেক্ষায় হসপিটালের বারান্দায় কাটছে তাদের দিন-রাত। চোখ ঘুম নেই, মুখে দোয়া-দরুদ আর হাতে তাসবিহ। চেহারায় বিষাদের ছাপ।

ইমতিয়াজ সায়েমের মা শাহনাজ বলেন, সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে দোয়া করছি, আমার ছেলেকে যাতে সুস্থ-স্বাভাবিকভাবে আমার কোলে ফিরিয়ে দেন। চিকিৎসকরা আমাদের আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন। তার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে আমাদের জানাচ্ছেন। তবে তার অবস্থা এখনো অপরিবর্তনীয়।

আক্ষেপ করে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেখানে থাকলে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটতো না।

প্রসঙ্গত, গত ৩০ আগস্ট রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট এলাকার তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও গ্রামবাসীর মধ্যে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এর জেরে ৩১ আগস্ট দিনভর দফায় দফায় সংঘর্ষ হয় দুই পক্ষের মধ্যে। এতে কয়েক শত শিক্ষার্থী আহত হয়। এদের মধ্যে তিন জনের আঘাত গুরুতর হওয়ায় আইসিইউতে রাখা হয়। পরে একজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়।